Advertisement
Advertisement
Durga puja 2022

Durga Puja 2022: নবমীর দিন ‘রাজবলি’ই পাত্রসায়েরের প্রাচীন হাজরা বাড়ির মূল আকর্ষণ, জানেন এর ইতিহাস?

মল্লরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পাত্রসায়রের রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল।

'Rajbali' at Navami is the main attraction of Patsayer's ancient Hazra house, know its history | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 12, 2022 9:46 pm
  • Updated:September 12, 2022 9:57 pm

দেবব্রত দাস, পাত্রসায়ের: রাজ অর্ঘ্যে নিবেদিত হয় ‘রাজবলি’। নবমীর সকালে রাজবলি দেওয়াই নিয়ম বাঁকুড়ার পাত্রসায়েরের হাজরা বাড়ির দুর্গাপুজোয় (Durga Puja)। হাজরা বাড়ির দুর্গামন্দির চত্বরে ছাগল ও মহিষ বলি করে গ্রাম প্রদক্ষিণে বেরিয়ে পড়েন এই রাজবলির অন্যতম পুরোহিত। হাজরাবাড়ি থেকে লোহার বাড়ি, দত্তবাড়ি, চন্দ্রবাড়ি, দাসপাড়া, কামারপাড়া হয়ে হলুদবুনি মোড়ের সরকার বাড়ির দুর্গামণ্ডপ মিলিয়ে ১২ টি বাড়ির বলির পর শেষ হয় রাজবলি পর্ব। তবে শুধু পাঁঠা বা মহিষ নয়, নিরামিষ বলিও হয়। আখ, ছাঁচি কুমড়োও অনেকে বলি দেন। এই রাজবলিই বিশেষ আকর্ষণ পাত্রসায়েরের হাজরা বাড়ির পুজোয়।

রাজবলি বা রাজার বলি দেখার জন্য শুধু পাত্রসায়ের (Patrasayer) নয়, আশেপাশের বহু গ্রামের বাসিন্দারাও ভিড় করেন। এলাকার মানুষের কাছে জমিদার পরিবার বলে বিশেষ পরিচিত পাত্রসায়েরের হাজরা পরিবার। তবে শুধু নিজেদের দুর্গোৎসব নয়, পাত্রসায়রের প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই পরিবারের নাম। এলাকার অভিজাত এই পরিবারের দুর্গাপুজোর আকর্ষণ তাই আর পাঁচটা পুজোর থেকে একটু আলাদা। পাত্রসায়েরের হাজরাপাড়ায় রয়েছে তাদের নিজস্ব মন্দির। হাজরা বাড়ির দেবীর অকাল বোধন হয়। সপ্তমী থেকে মন্দির প্রাঙ্গণে নানা অনুষ্ঠান হয়।

Advertisement

তবে নবমীর সকালে এই পরিবারের দুর্গামন্দির প্রাঙ্গণে রাজবলি সবচেয়ে বিখ্যাত। কমবেশি একশোটি ছাগল বলির পাশাপাশি একজোড়া মহিষ বলি হয়। হাজরাবাড়ির দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গণে প্রথম বলি হওয়ার পরে রাজবলি বা রাজার বলি বাজনা সহযোগে পাত্রসায়েরে গ্রাম পরিক্রমায় বের হয়। এই রাজার বলি দেখতে দূরদূরান্তের বহু মানুষ ভিড় করেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘উপহার নেব না, কারও বাড়ি খাবও না’, সম্পত্তিবৃদ্ধি বিতর্কের মাঝে ঘোষণা শোভনদেব]

কবে চালু হয়েছিল হাজরা বাড়ির দুর্গাপুজো? এই পুজোর সূচনা নিয়ে নানা মত শোনা যায়। হাজরা বাড়ির পুজোর পরতে পরতে ইতিহাসের ছোঁয়া। স্বপ্নাদেশে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। এলাকার প্রবীণ মানুষরা জানিয়েছেন, হাজরা পরিবারের আদিপুরুষ নন্দরাম হাজরা স্বপ্নাদেশে দেবীদর্শন পেয়ে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। নবমীর সকালে দেবীর সামনে রাজ অর্ঘ্যে নিবেদনের জন্য সূচনা হয় রাজবলির। ছাগল ও মহিষ বলি দেওয়া হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ায় শুরু হওয়া সেই চিরাচরিত প্রথা ও ঐতিহ্য এখনও অটুট রয়েছে।

হাজরা পরিবারের বর্তমান সদস্য তথা পাত্রসায়ের বামিরা গুরুদাস বিদ্যায়তনের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক
রাজেন্দ্রপ্রসাদ হাজরা বলেন, “আমাদের আদিপুরুষ নন্দরাম ছিলেন রাজা চৈতন্য সিংহের হাজার সৈনিকের অন্যতম প্রধান সেনাপতি। আমাদের আসল পদবি ছিল চক্রবর্তী। তদানীন্তন মল্লরাজা চৈতন্য সিংহের আমাদের পূর্বপুরুষ নন্দরাম হাজার সৈনিকের প্রধান সেনাপতি হওয়ায় তাঁকে হাজরা বলে সম্বোধন করা হত। সেই থেকেই আমাদের পদবি হাজরা হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হয়। পুজোর সূচনা সম্পর্কে পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে কিছু কথা শুনেছি। তবে কথিত আছে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ্বে বিষ্ণুপুরের তদানীন্তন মল্লরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পাত্রসায়রের রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল। এই পুজোর সূচনা নিয়ে যেটুকু জানি আমাদের হাজরা পরিবারের আদিপুরুষ নন্দরাম হাজরা খাজনা আদায়ে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে দেবীমূর্তির দর্শন পান। রাতে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে শালগ্রাম শিলা এনে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই মন্দিরে একচালার দেবীমূর্তির পুজো শুরু করেন।”

[আরও পড়ুন: হিন্দুপক্ষের আবেদন বৈধ, জ্ঞানবাপী মামলায় শুনানিতে সায় আদালতের]

পাত্রসায়রের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের কাছে হাজরা পরিবার অভিজাত পরিবারের মর্যাদা পান। জমিদারি চলে গেলেও মর্যাদা আজও অটুট। হাজরাবাড়ির দুর্গাপুজোর আলাদা একটা গরিমা রয়েছে। নবমীর সকালে বিশেষ আকর্ষণ রাজবলি। পরিবারের অন্যতম সদস্য শিক্ষক সঞ্জীব হাজরা বলেন, “পূর্বপুরুষদের চালু করা দুর্গাপুজো এখনও জাঁকজমক সহকারে হয়। এই পুজোয় নবমীর সকালে প্রথম রাজমান্য হিসাবে মহিষ বলি হয়। গ্রামেরই পুরোহিত এই বলি দেন। অনেক পাঁঠাও বলি হয়। বহুদিন থেকেই এই প্রথা চালু রয়েছে।” পাত্রসায়েরের হাজরা বাড়ির গর্ব ‘রাজবলি’ চিরাচরিত প্রথা ও ঐতিহ্য মেনে আজও হচ্ছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ