Advertisement
Advertisement
অতিবিরল অস্ত্রোপচার

ফেসিয়াল নার্ভ বাঁচিয়ে গলায় অতিবিরল অস্ত্রোপচার, ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় শাপমুক্ত প্রৌঢ়

লাখে চার-পাঁচ জনের হয় এই ক্যানসার।

Rare and Rinky Surgery makes Man free from Cancer
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:July 9, 2020 8:18 pm
  • Updated:July 9, 2020 8:39 pm

গৌতম ব্রহ্ম: ডান দিকের চোয়ালের নিচের অংশ ফুলে গিয়েছিল। ব্যথার ওষুধ খেয়েও ব্যথা কমছিল না। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল জীবন। কে জানত গলার প্যারোটিড গ্রন্থিতে বাসা বেঁধেছে কর্কটরোগ! দেরি হলে শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ত ক্যানসার। ‘মেটাস্টেসিস’ কেড়ে নিতে পারত জীবন। লাখে চার-পাঁচ জনের হয় এই ক্যানসার। অস্ত্রোপচার করে সেই বিরল ‘প্লিওমরফিক এক্স কার্সিনোমা অফ রাইট প্যারোটিড গ্লান্ড’-কে বাদ দিল ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সীমিত পরিকাঠামোর অজুহাতে রোগীকে রেফার করে দিতেই পারতেন ডাক্তারবাবুরা। কিন্তু তা না করে নিজেরাই সব ব্যবস্থা করে অস্ত্রোপচার করে নতুন জীবন দান করলেন এক প্রৌঢ়কে।

দিলীপ মোদক। বয়স ৬২। বাড়ি মন্দিরবাজার থানা এলাকার মল্লিকপুর গ্রামে। গলায় ব্যথা হওয়ায় ৫ মার্চ স্তানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। ডাক্তার ‘এফএনএসি’ করতে বলেন। কিন্তু এরমধে্যই শুরু হয়ে যায় করোনাপর্ব। লকডাউনের জেরে বন্ধ হয়ে যায় সব অস্ত্রোপচার, রুটিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এদিকে ব্যথা ক্রমশ বাডতে থাকে দিলীপবাবুর। কোভিডের জেরে দফায় দফায় বন্ধ হয় এনআরএসের ইএনটি সার্জারি বিভাগ। উপায়ন্তর না দেখে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে যান বাপ্পা মোদক।

Advertisement

[আরও পড়ুন: জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জের, নন-কোভিডদের চিকিৎসার জন্যেও দরজা খুলল মেডিক্যালে]

সপ্তাহ দু’য়েক আগে দিলীপবাবুকে ইএনটি সার্জন ডা. সোহম বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে ভর্তি করা হয়। তিনিই বুধবার অস্ত্রোপচার করেন। সোহমবাবু জানিয়েছেন, ফেসিয়াল নার্ভ বাঁচিয়ে অস্ত্রোপচার করা খুব কঠিন ছিল। মস্তিষ্কে রক্তসরবরাহকারী শিরা-ধমনীগুলিকে চেপে ধরেছিল টিউমারটি। পরিস্থিতি জটিল করে রোগীর উচ্চ রক্তচাপ। ১৯০ থেকে ২০০ হয়ে যাচ্ছিল। রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে এনে অস্ত্রোপচার করা সহজ ছিল না। এখানেই অ্যানেস্থেশিয়া টিমের মুন্সিয়ানায় সাফল্য এসেছে। চার ঘণ্টার ম্যারাথন অস্ত্রোপচার শেষে বাদ দেওয়া গিয়েছে টিউমার। দিলীপবাবু এখন স্থিতিশীল। ছেলে বাপ্পা মোদক জানিয়েছেন, “এই লকডাউনের বাজারে বাবাকে নিয়ে খুব বিপাকে পড়ে গিয়েছিলাম। ব্যথার চোটে এক মুহুর্ত স্থির থাকতে পারছিলেন না। ডাক্তারবাবুরা নিজেরাই ছোটাছুটি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে অস্ত্রোপচার করেছেন।”

Advertisement

নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য দিলীপবাবুকে এখন সিসিইউ-তে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপাল ও সুপার ডা. রমাপ্রসাদ রায় নিজে সিসিইউ বেডের ব্যবস্থা করে দেন। প্রতিমুহূর্তে রোগীর খোঁজ নেন প্রিন্সিপাল ডা. উৎপল দাঁ। তিনি জানালেন, “আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরবেন।” লকডাউনের জেরে মার্চের শেষে ও এপ্রিলে অস্ত্রোপচার কম করতে হয়েছে। মে মাসে হাসপাতালে কোভিড পরীক্ষার জন্য ট্রুন্যাট মেশিন বসে যায়। ফলে স্বাভাবিক গতি পায় অস্ত্রোপচার। জানা গিয়েছে, মে-জুন মাসে ছোট-বড় মিলিয়ে আড়াইশোর বেশি অপারেশন হয়েছে। মার্চ-এপ্রিলে কম হলেও অস্ত্রোপচার পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

[আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে মৃত্যু করোনা আক্রান্ত রোগীর, জোড়া সংক্রমণের আতঙ্কে কাঁপছে বাংলা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ