Advertisement
Advertisement
Lok Sabha 2024

৯ বছর আগের কলঙ্ক ভুলে নতুন স্বপ্নে মজে, ভোটের বাংলায় কোন পথে খাগড়াগড়?

২০১৪ সালের ২ অক্টোবরের সেই ঘটনাকে একটা 'অ্যাক্সিডেন্ট' হিসেবেই দেখছে খাগড়াগড়।

Reaction of Khagragarh before Lok Sabha 2024
Published by: Paramita Paul
  • Posted:March 30, 2024 7:39 pm
  • Updated:March 30, 2024 7:39 pm

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: সাড়ে ৯ বছর অতিক্রান্ত। ‘কলঙ্কের কালি’ কপালে সেঁটে গিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই দাগ ফিকে হয়েছে। পুরোপুরি মোছেনি এখনও। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবরের সেই ঘটনাকে একটা ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ হিসেবেই দেখছে খাগড়াগড়। লোকসভা ভোটের মুখেও পরিবেশ শান্ত।

চৈত্রের দুপুরে ঠা ঠা রোদেও অনেকে রাস্তায় রয়েছেন। রমজান মাস চলছে। নামাজ পড়তে একে একে অনেকে হাজির হচ্ছেন খাগড়াগড়ের সেই মসজিদে। কিছু পরেই নিঝুম দুপুরের স্তব্ধতা ভেদ করে আজানের সুর ভেসে এলো সেই মসজিদ থেকে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: নজরে নির্বাচন, এপ্রিলের গোড়াতেই উত্তরবঙ্গ সফরে মমতা]

এই মসজিদের অদূরেই সেই দোতলা বাড়ি। যার নিচে চেম্বার ছিল বাড়ি মালিক হাসান আলি চৌধুরির। দোতলায় ভাড়া নিয়ে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গিরা ডেরা বেঁধেছিল। এই বাড়ির উলটোদিকে বসবাস করতেন হাসান সাহেবরা। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর এমনই এক দুপুরে আইইডি বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল এলাকা। প্রথমে বর্ধমান থানার পুলিশ, সিবিআই হয়ে শেষ পর্যন্ত ঘটনার তদন্ত করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তার পর একে একে ধরা পড়ে বহু জঙ্গি। অনেকের সাজাও হয়েছে। দীর্ঘ টালবাহার পর বছরখানেক বিস্ফোরণ হওয়া সেই বাড়ির চাবি এনআইএ-র কাছ থেকে ফিরে পেয়েছেন হাসান সাহেব। সেই বাড়ির ভোল‌ পালটে দিয়েছেন। এক সময়ের জঙ্গি ঘাঁটিকে এখন দেখে চেনার উপায় নেই। অতীতের কালো স্মৃতি মুছে নবরূপে সেই বাড়ি সাজিয়েছেন হাসান সাহেব।

Advertisement

এদিন বাড়ির অদূরেই এদিন দেখা মিলল হাসান সাহেবের। অতীতে কোনও বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নয়। হাত নেড়ে বলেন, “কোনও কথা বলব না। কথা বললেই দোষ।” বাড়িটা সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বলেন, “কোথায় আর সুন্দর। ফাটাফুটো।” ‘লোকটা কোথায় গেল’ বলতে বলতে খোঁজার অছিলায় চলে গেলেন হাসান সাহেব। সেই বাড়ির কাছাকাছি বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাটে কেনাকাটা করছিলেন কয়েকজন। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। ভোট এসে গেলেও সেভাবে প্রচার বা রাজনৈতিক যুদ্ধের পরিবেশই যেন নেই সেখানে। রাস্তায় দেখা মহম্মদ ইমতিয়াজউদ্দিন শেখের সঙ্গে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের কথা উঠতেই তাঁর সাফ কথা, “সেই সব অতীত। সেটা একটা হাদসা, অ্যাক্সিডেন্ট বলতে পারেন। ঘটে গিয়েছিল সকলের অজান্তে। আমাদের এলাকার পরিবেশ শান্ত। এখানে শিক্ষক, অধ্যাপক, পুলিশ আধিকারিক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বসবাস করেন। কোনও সমস্যা নেই।”

[আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটে অভিষেকের বিরুদ্ধে পদ্মপ্রার্থী রুদ্রনীল? জল্পনা তুঙ্গে]

ভোট এসেছে। দেশ পরিচালনা কদের হাতে থাকবে তার নির্বাচন। খাগড়াগড় কী ভাবছে? ইমতিয়াজউদ্দিনের কথায়, “আমাদের এখানে শুধুই তৃণমূল। বিরোধী নেই এখানে।” সাজিদ খান নামে আর একজনও দাবি করলেন, “এখানে শুধুই তৃণমূল। সিপিএম, বিজেপির কোনও অস্তিত্ব নেই।” এলাকার ব্যবসায়ী শেখ মেহেদি বলেন, “এখানে সবাই দিদির সৈনিক।” ভোটের মুখে প্রচার কেমন চলছে প্রশ্নে তাঁর সটান জবাব, “এখানে প্রচার করতে হবে না। সবাই দিদির সৈনিক এখানে।”

সাম্প্রতিককালে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বার বার উত্তপ্ত হয়েছে খাগড়াগড়। তার জেরে এলাকায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে পার্টি অফিস, ক্লাব। পুলিশ পিকেটও রাখতে হয়েছে। সেই ব্যাপারে ইমতিয়াজউদ্দিনদের সাফ কথা, “ছোটখাটো মনোমালিন্য হয়েছিল তাই পার্টি অফিস বন্ধ আছে। সব মিটেও গিয়েছে। আবার খুলে যাবে। আর পার্টি অফিস বন্ধ থাকলেও দিদি মনে আছে। সেটাই বড় কথা। আমাদের এলাকার পরিবেশ শান্ত। সকলে সদ্ভাব নিয়ে বসবাস করি। অতীতকে আর কেউ মনে রাখতে চাই না। আমাদের কছে নিছক একটা দুর্ঘটনা হয়েই থাকবে।”

কলঙ্কের দিন ভুলে নতুন স্বপ্ন দেখছে খাগড়াগড়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ