Advertisement
Advertisement

ইরাকে নিহত তেহট্ট ও চাপড়ার দুই যুবকের দেহ ফিরল, ক্ষতিপূরণ চেয়ে ক্ষোভ স্থানীয়দের

এতগুলো পেটে অন্ন জোগাবেন কী ভাবে, ভেবে পাচ্ছেন না নিহত খোকন শিকদারের স্ত্রী।

Relatives of Bengal men killed in Iraq demand compensation
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:April 3, 2018 1:48 pm
  • Updated:June 22, 2019 1:27 pm

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: আইএস-এর হাতে খুন হওয়া তেহট্টের খোকন শিকদার ও চাপড়ার সমর টিকাদারের দেহাংশ কফিনবন্দি হয়ে বাড়ি ফিরল। মঙ্গলবার আত্মীয় পরিজনরা তো বটেই স্থানীয় মানুষের ঢল নামে চাপড়ার মহাখোলা গ্রামে এবং তেহট্টের ইলশেমারিতে। সোমবার সন্ধে ৭টা ৩৫ মিনিটে বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে কলকাতায় আনা হয় ইরাকের মসুলে নিহত দুই বাঙালি যুবকের দেহ। একটি মিনি ট্রাকে চাপিয়ে কফিন দুটি নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণীর মর্গে। এদিন সকালে দুটি দেহ নিয়ে চাপড়া ও তেহট্টের উদ্দেশে রওনা হন পুলিশ প্রশাসন ও নেতা-মন্ত্রীরা। দেহ পৌঁছনার আগেই স্থানীয়রা সরকারি ক্ষতিপুরণ দাবি করেন। তাঁদের বক্তব্য, অসহায় দুটি পরিবারকে ক্ষতিপুরণ না দিলে তারা পথে বসবে।

[তৃণমূল কার্যালয়ে গুলি করে খুন ইমাম পুত্রকে, চাঞ্চল্য মালদহে]

চার বছর আগে ইরাকে আইএস জঙ্গিদের হাতে অপহৃত হন ৩৯ জন ভারতীয়। ৩৮ জনকে মেরে ফেলে জঙ্গিরা। একজন পালাতে সক্ষম হন। বাংলার দু’জনের পাশাপাশি ৩৮ জন ভারতীয়ের দেহ ফিরিয়ে এনেছে বিদেশ মন্ত্রক। মৃতদের মধ্যে আছেন চাপড়া ও তেহট্টের দুই যুবক। খবরটা এসেছিল দু’সপ্তাহ আগে। সবাই অপেক্ষায় ছিলেন। এদিন দেহ বাড়িতে ঢোকার আগেই বহু মানুষ জড়ো হন। নেতা-মন্ত্রীদের ঘিরে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। অনেক বুঝিয়ে মৃতদের পরিবারের হাতে দেহাংশ তুলে দেওয়া হয়। খোকনবাবু ও সমরবাবু ২০১১-য় ইরাকে গিয়েছিলেন কাজ করতে। ছিলেন মসুলে। ফোনে বাড়ির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ২০১৪-র ১৫ জুনের পর আর তাঁদের খোঁজ মেলেনি। শেষ ফোনে খোকনবাবু জানিয়েছিলেন আইএস জঙ্গিরা তাঁদের একটা দলকে তুলে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রেখেছে। কষ্টের সীমা নেই। তারপর থেকে খোকনবাবুর স্ত্রী নমিতা স্বামীর সন্ধান পেতে প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরেছেন। ইলশেমারিতে একচিলতে খুপরি বাড়ি। অভাবের সংসারে একমাত্র রোজগেরে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ায় দুর্গতির শেষ নেই। বাড়িতে খোকনবাবুর নব্বই বছরের বৃদ্ধা মা শোভাদেবী, স্কুলপড়ুয়া আট বছরের ছেলে অভ্র এবং কলেজ ছাত্রী মেয়ে রীতা। এতগুলো পেটে অন্ন জোগাবেন কী ভাবে, নমিতা ভেবে পাচ্ছেন না। পাড়াপড়শি, পরিজনদের ভিড়ে উপচে পড়েছে ঘর।

Advertisement
[মনোনয়নের দ্বিতীয় দিনে অগ্নিগর্ভ বীরভূম, বিডিও অফিসের সামনে বোমাবাজি  ]

ইরাকের মসুলে অপহৃত ৩৮ জন ভারতীয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে দায়েশ ওরফে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা। ২০ মার্চ লোকসভায় একথা কবুল করেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, অপহৃত ভারতীয়দের প্রত্যেককেই ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। তবে তাঁদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। সাধারণত, মাথা কেটে বা জীবন্ত জ্বালিয়ে, গুলি করে পণবন্দিদের খুন করে আইএস জঙ্গিরা। নিহত ভারতীয়দের মধ্যে ৩৮ জনের ডিএনএ-র নমুনা মিলেছে ১০০ শতাংশ। মসুল শহরটি ইরাকের সেনারা আইএস জঙ্গিদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করার সময় ওই ভারতীয়রা নিহত হয়েছেন না তার আগেই তাঁদের খুন করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি ইরাকের সেনাবাহিনী। উত্তর মসুলের বাদুশ এলাকায় একটি পাহাড়ের নিচে গণকবর থেকে তাঁদের দেহাবশেষের হদিশ মিলেছে। গত বছর জুন মাসে মসুল শহরকে আইএসের কবল থেকে মুক্ত করে ইরাকি সেনারা। অভিযান শুরুর আগে অন্তত ১০ হাজার ভারতীয় শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন নিরাপদ জায়গায় সরে পড়লেও ওই ৩৮ জন আইএস জঙ্গিদের হাতে ধরা পড়ে যান।

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ