Advertisement
Advertisement

Breaking News

আলতা পরার স্বপ্নাদেশ! পাঁচ কান হতেই পা রাঙানোর ধুম পাড়ায়

দীর্ঘজীবী হবেন স্বামী, গুজবে পোয়াবারো তেহট্টের মণিহারি দোকানের৷

Rumour grips Tehatta on Diwali
Published by: Kumaresh Halder
  • Posted:November 7, 2018 11:29 am
  • Updated:November 7, 2018 3:52 pm

নিজস্ব সংবাদদাতা, তেহট্ট: নিজে পায়ে আলতা পরুন। আরও তিনজনকে পরতে বলুন। তাহলে স্বামী, পুত্র ও পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত! এহেন গুজবে আপাতত হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে নদিয়ার তেহট্ট-করিমপুরে। আলতায় পা রাঙানোর ধূম জেগেছে মেয়ে-বউদের মধ্যে। নিজেরা তো পরছেনই, চেনা-পরিচিতের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বা মোবাইলে ফোন করে এই আলতায় পা রাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে চেনা পরিচিত আরও তিনজন মহিলাকে। সেই তিনজন জানাচ্ছেন আরও তিন তিরিক্কে ন’জনকে। এভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংখ্যাটা। ঝড়ের মতো ছড়িয়ে পড়ছে আলতা পরার হুজুগ। আর তাতে পোয়াবারো মনিহারি দোকানদারের। হু হু করে বিকোচ্ছে আলতার শিশি।

[তৃণমূল নেতার দোকানের দরজায় বিষ্ঠা! উত্তেজনা চন্দ্রকোণায়]

গুজবের সূত্রপাত কোথায়? গোটা তল্লাট ছানবিন করেও তার হদিশ মেলেনি। যতদূর জানা গিয়েছে তা হল, দিন পনেরো আগে এলাকার কোন এক মহিলা স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন সধবা মহিলারা দু’পায়ে আলতা পরে প্রতিবেশী তিনজনকে সেই বার্তা জানালে নাকি সংসারে মঙ্গল হবে। স্বামী দীর্ঘজীবী হবে। সে কথা পাঁচকান হতেই হইহই পড়ে যায় চারপাশে। ধুম পড়ে যায় আলতায় পা রাঙানোর।

Advertisement

[দীপাবলির আনন্দ নয়, মেয়েকে বাঁচাতে ঠাকুরের কাছে মাথা ঠুকছেন বৃদ্ধ দম্পতি]

Advertisement

নদিয়া জেলার সীমান্তবর্তী তেহট্ট এলাকায় চিরকালই অবশ্য গুজবের রমরমা পসার। প্রায় প্রতি বছরই নানা স্বাদের গুজব হঠাৎ হঠাৎ ডালপালা মেলে এখানে। যেমন একবার গুজব ছড়ায়, কোনও গৃহবধূর যে ক’জন পুত্রসন্তান থাকবে, তিনি সমসংখ্যক পুত্রসন্তানের মায়ের বাড়িতে গিয়ে দু’পক্ষ মিলে জুতসই খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। তাতে সংসারের শ্রীবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী। কখনও শোনা গিয়েছে, পায়ে কালো সুতো বেঁধে রাখলে যেকোনও বিপদ থেকে পরিত্রাণ মিলবে। আবার কখনও গুজব রটেছে, এক অজানা রোগে যুবকদের যৌনাঙ্গ নাকি লোপ পেয়ে যাচ্ছে! সেই রোগের নিদান ছিল সমস্ত পোশাক খুলে পুকুরের জলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা বা ঠান্ডা জলে বসে থাকা। এভাবেই কয়েক মাস আগে মহিলাদের মধ্যে গুজব ছড়ায়, ভাইয়ের দেওয়া শাড়ি পরে মনসাপূজা করার। বলাই বাহুল্য, সে বছর কাপড় ব্যবসায়ীদের ভালমতোই লক্ষ্মীলাভ হয়েছিল! স্থানমাহাত্ম্যে প্রতিবারই গুজব ছড়াতে না ছড়াতেই তা পালনের ধুম পড়ে যায় তেহট্ট-করিমপুরে।

[কালীপুজোর উদ্বোধনে ব্রাত্য কাউন্সিলর, ক্লাবের সম্পাদকের বাড়িতে ভাঙচুর]

যেমন দেবনাথপুরের সাদামাটা গৃহবধূ অর্চনা বিশ্বাস। হঠাৎই একদিন তাঁর মোবাইলে ফোন আসে। ওপাশ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় আলতা পরার বিধান। সইয়ের কথা শোনার পরে পায়ে আলতা লাগাতে দেরি করেননি অর্চনাদেবী। দেরি করেননি মোবাইলে সাধুবাজারে বাপের বাড়িতে যোগাযোগ করে ঘটনার কথা জানাতেও। শুনে তাঁদেরও উৎসাহ তুঙ্গে! বাড়ির সব বিবাহিত মহিলা নিজে পায়ে আলতা পরে উঠে প্রত্যেকে চেনাজানা তিনজন করে মহিলাকে সে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেনও দ্রুততার সঙ্গে। ফলশ্রুতি, মাত্র আধ ঘণ্টায় আলতায় রঙিন হয়ে উঠেছে গোটা সাধুবাজারের মহিলাদের পদযুগল।

[মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ ঘিরে ধুন্ধুমার, ধৃত ২ বিজেপি কর্মী]

অবশ্য যতই গুজব হোক, একথা বলতে দ্বিধা নেই রাস্তাঘাট-দোকান বাজার-বাড়ির দাওয়া বা উঠোনে আলতা রাঙানো রমণীকুলকে দেখতে মন্দ লাগছে না। বেতাই গ্রামের বাসিন্দা, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ অনিলকৃষ্ণ মোহান্ত জানান, প্রাচীনকালে বাড়ির মেয়েদের সারাদিনের গৃহস্থালীর কাজ ও নিরন্তর জলঘাটার কারনে  অনেক সময় পায়ে নানারকম চর্মরোগ দেখা দিত। রোগ উপশমে বিভিন্ন গাছ-গাছড়ায় তৈরি ওষুধ মেয়েরা পায়ে লাগাতেন। সেই থেকেই আলতার প্রচলন। তাতে একদিকে যেমন রোগ নিরাময় হত, অন্যদিকে মা-বোনেদের রূপের শ্রীবৃদ্ধিও হত। তাঁর সহাস্য বক্তব্য, “এখন হয়তো এটা গুজব! হয়তো মেয়েরা হুজুগে মেতেছে। তবে খারাপ তো কিছু হচ্ছে না। বরং ভালই হচ্ছে হয়তো!”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ