সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অবশেষে বাঙালি গবেষক শুভজিৎ সেনের মৃতদেহ নিয়ে বিপদসঙ্কুল অ্যান্টার্কটিকা থেকে রওনা দিল রুশ জাহাজ। ভারতের বেস ক্যাম্প মৈত্রী থেকে দেশের আরেকটি শিবির ভারতী-২ ছুঁয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন পৌঁছবে। তবে আজ বৃহস্পতিবার ভারতী-২ তে পৌঁছচ্ছে ওই জাহাজ। শীতের মরসুম শুরু হয়ে হওয়ায় কুমেরুতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিমান চলাচল। তাই কুমেরু থেকে জলপথে রাশিয়ার জাহাজেই দক্ষিন আফ্রিকার কেপটাউন আসছে বাঙালি তরুণ গবেষক শুভজিৎ সেনের কফিনবন্দি মৃতদেহ। ফলে তাঁর জন্মদিন ১৩ এপ্রিলও বাড়িতে পৌঁছতে পারবে না মৃতদেহ। তার বাড়ি পুরুলিয়া শহরের নডিহা-দু্লমীর ভুঁইয়া পাড়া এখন শোকে মূহ্যমান। যত সময় গড়াচ্ছে উদ্বেগ বাড়ছে ওই পরিবারে। ফলে পিছিয়ে গেল তার দাদার শুভঙ্কর সেনের বিয়ের দিনও। আগামী ২৬ এপ্রিল ছিল বিয়ের দিন। গত ২৬ মার্চ ঘটনার পাঁচদিন আগেও গবেষক-ছাত্র শুভজিৎ তাঁর মা মুক্তা দেবীকে জানিয়েছিলেন, জন্মদিনে তিনি বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু বরফের দেশে আকস্মিক দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় তাঁর জীবন। গোয়ার যে সংস্থার হয়ে তিনি কুমেরু পাড়ি দেন সেই ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যান্টার্কটিক অ্যান্ড ওশান রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছে ‘কনভয় অপারেশন’-এ তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রুশ জাহাজ ভারতী-২ তে একদিন বা দু’দিন দাঁড়িয়ে কেপটাউনের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। ওই ভারতী-২ ক্যাম্প থেকে কেপটাউনের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ছ’হাজার কিলোমিটার। ফলে জাহাজে কেপটাউনে আসতে কম করে সময় লাগবে দু’সপ্তাহের বেশি। তারপর সেখান থেকে আকাশপথে দুবাই। তারপর হয় দিল্লি বা মুম্বই বা কলকাতা হয় পুরুলিয়া আসবে শুভজিৎ কফিন বন্দির মৃতদেহ। গত সোমবার মৈত্রী থেকে ছাড়ে ওই রুশ জাহাজ। সেখান থেকে ভারতী-২ প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার। এই জাহাজ ঘন্টায় ৩০ কিমি বেগে চলে। দাদা শুভঙ্কর বলেন, “আর অপেক্ষা করা যাচ্ছে না। ভাবতেই পারছি না ভাই জীবিত আসবে না। মনে হচ্ছে যেন ও বেঁচেই আছে।”
গত ১৯ অক্টোবর অ্যান্টার্কটিকা অভিযানের জন্য পুরুলিয়া থেকে রওনা হন শুভজিৎ। গবেষনার কাজ শেষে তার ফিরে আসার কথা ছিল এপ্রিলে। কিন্তু তার সেখানে গবেষনা চলাকালীনই আচমকা ঘটে গেল দুর্ঘটনা। অ্যান্টার্কটিকায় ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি গ্রীষ্মকাল। বাকি ন’মাস শীতকাল। এইসময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি থেকে প্রায় ৮০ ডিগ্রি। পাঁচশ থেকে সাতশ কিমি বেগে বইতে থাকে তুষার ঝড়। তাই এই শীতের সময় বেস ক্যাম্প মৈত্রী লাগোয়া নবো বিমানবন্দর থেকে কোন বিমান ওঠানামা করে না। যদিও এখানে কোন যাত্রী বিমান চলে না। কেপটাউন থেকে শুধুমাত্র পন্য ওঠানামার কাজেই এই বিমান ওঠানামা করে থাকে। পাহাড়ের চূড়োয় প্রায় দু-তিন কিমি রানওয়ে তৈরি করে রাশিয়ান বিমান ওঠানামা করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.