কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: গ্রামে সরস্বতী পুজো। কয়েক দিন আগেও এই বিশ্বাসটা ছিল না অনেকের। নানা কারণে পুজো ঘিরে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের উদ্যোগে শান্তিতেই সরস্বতী পুজো হল বেলডাঙার দহেরধার গ্রামে। যাকে ঘিরে তৈরি হল সম্প্রীতির পরিবেশ। গ্রামের শান্তি কমিটির সঙ্গে পুলিশের বৈঠকে হিন্দু-মুসলিমের মেলবন্ধনে হাসি ফুটেছে কচিকাঁচাদের। বিবাদ ভুলে সোমবার সকাল থেকেই গ্রামের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একেবারে দহরম-মহরম।
[স্কার্ট ছেড়ে প্রথম শাড়ি মানেই সরস্বতীপুজো, নিজের ক্লাসেই হাতেখড়ি দেয় প্রেম]
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-১ ব্লকের মহুলা- ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দহেরধার গ্রামের দুটি সংসদে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বাস। উভয় সম্প্রদায়ের বসবাস এখানে। গ্রামটিতে শান্তি ছিল বরাবরই। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে সরস্বতী পুজো নিয়ে মতানৈক্য শুরু হয় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। গ্রামের ইদগাহের তিরিশ মিটার দূরে কচিকাঁচাদের সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেল বাঁধা নিয়ে শুরু হয় অশান্তি। মঙ্গল নন্দীর দোকানের পাশেই শুরু হয় সরস্বতী পুজোর আরাধনা। উত্তেজনা দেখে পুজোর বিসর্জন পর্যন্ত জনা বিশেক পুলিশ দিবারাত্রি পাহারা দিতেন সেখানে। গ্রামের অন্য একটি পুজোর বিসর্জন ঘিরে গন্ডগোল হওয়ায় বেলডাঙার পুলিশ বিশেষ নজর দিত এলাকায়। সেই পুজোর সমস্যা এবারে মেটাল বেলডাঙা থানার পুলিশ।
[অনভ্যস্ত কুচি সামলে শুভদৃষ্টির লগন, এই তো বাঙালির সরস্বতী পুজো]
গত মঙ্গলবার বেলডাঙার ওসি সমিত তালুকদারের তৎপরতায় থানায় বসে শান্তি কমিটির বৈঠক। দু’পক্ষের ২০-২২ সদস্য-সহ বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে শান্তি কমিটির বৈঠকে উঠে আসে দেবী বন্দনার শুভ বার্তা। ইদগাহ কমিটি ও পুজো কমিটির থেকে মুচলেকা নেয় পুলিশ। এ বিষয়ে বেলডাঙা থানার ওসি সমিত তালুকদার জানান, গ্রামের দুই পক্ষের মানুষকে ডেকে মীমাংসা করা হয়েছে। অন্যদিকে ইদগাহ কমিটির সদস্য হাকিম শেখ জানান, ধর্মীয় স্থান থেকে কিছুটা দূরে পুজো করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু জেদ ধরে সেখানেই সরস্বতী পুজো হচ্ছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। তবে গ্রামের শান্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশ যখন সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে তখন সকলে মিলে শান্তিতে থাকাই শ্রেয়। হাকিম শেখের সংযোজন, তাঁরা ইদের সময় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন গ্রামের হিন্দুদের। তাছাড়া হিন্দুদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তিনি তাঁর দুই মেয়েকে সরস্বতী পুজোর দিন মণ্ডপে পাঠিয়েছেন। কেননা ওরাও তো ছাত্রী। এভাবেই পঞ্চমীতে আনন্দে মাতল মুর্শিদাবাদের এই প্রান্তিক গ্রাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.