দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: রাত যত বেড়েছে তত বেড়েছে ঝড়ের তাণ্ডব। সঙ্গে দমকা হাওয়া সেই তাণ্ডবলীলা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়ির টিনের চাল থেকে বড় বড় গাছ সবই এই তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিমেষে সুন্দরবনের বিভিন্ন জনপদ পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
বুলবুলের সর্তকতা জারি করেছিল আবহাওয়া দপ্তর। সেইমতো বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি নিয়েছিল প্রশাসনের তরফ থেকে। তার সত্ত্বেও আটকানো যায়নি ক্ষয়ক্ষতি। বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই ঝড়ের প্রভাবে। গোসাবা ব্লকের কুমিরমারি, সাতজেলিয়া, লাহিরিপুর পাখিরালয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লাইন দিয়ে রাস্তার ধারে লাগানো সমস্ত গাছই প্রায় ভেঙে গিয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন দ্বীপ এলাকায় লন্ডভন্ড বহু মাটির বাড়ি। নদীতে থাকা বহু টুরিস্ট নৌকা, ভুটভুটি ও লঞ্চেও চলেছে ঝড়ের তাণ্ডব। ভেঙে গিয়েছে সেই সব জলযানগুলি। রাস্তাজুড়ে প্রচুর পরিমাণে গাছ পড়ে থাকার কারণে মানুষের যাতায়াত প্রায় বন্ধ। প্রায় থমকে গিয়েছে সুন্দরবনের তীরবর্তী এলাকার জনজীবন। তার উপর নদীতে খেয়া-পারাপার না হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। শুধু তাই নয় ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হতেই এলাকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি একেবারে স্তব্ধ। সুন্দরবনের ক্যানিং, গোসাবা ,বাসন্তী ও জীবনতলা এলাকাতেই প্রায় পাঁচ হাজারের উপর বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ দপ্তরের বহু কর্মী নেমে পড়েছেন কাজে। তবে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে বিদুৎ দপ্তর সূত্রে খবর।
গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বলেন, “বহু এলাকায় কয়েক হাজার মাটির বাড়ি পড়ে গিয়েছে। গাছপালা পড়ে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যে সমস্ত মানুষের থাকার জায়গা নেই তাদের যাতে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো যায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” ক্যানিং মহকুমার কন্ট্রোল রুম থেকে পরিস্থিতির উপর নজরদারি সারারাত বসে থাকে কাজের তদারকি করেছেন ক্যানিংয়ের বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল। তিনি বলেন, “মাতলা নদীর পাড় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় ততক্ষণ তাঁদের ত্রাণ শিবিরে রাখা হবে।”
[আরও পড়ুন: কে এই রামলালা? কোন যুক্তিতে বিতর্কিত জমির মালিকানা পেল রাম জন্মভূমি ন্যাস?]
এদিকে, প্রবল বুলবুলের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ধান চাষেও। হেক্টরের পর হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। মাঠের ধান আদৌ ঘরে তুলতে পারা যাবে কি না, সেই চিন্তাই গ্রাস করেছে কৃষকদের। শুধু ধানই নয় শীতের মরশুমে সমস্ত সবজিও এই প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।