সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা দূর করতে নরবলি, যজ্ঞ! এখন আবার ‘করোনা মাতা’কে উৎসর্গ করে পুজোও হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেও মারণ ভাইরাসের মোকাবিলা করতে এমন কুসংস্কার দেখে হতবাক অনেকেই। বাংলা প্রবাদেই রয়েছে, ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’-এর উল্লেখ। কিন্তু এটা তো কোনও উৎসব নয়। গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানী-গবেষকরা যখন মারণ ভাইরাসকে কাবু করতে প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছেন, তখন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে চলছে ‘করোনা মাতা’র পুজো। একই দৃশ্য ধরা পড়েছে শিলিগুড়িতেও। আর ‘অভিনব’ এই পুজো দেখতে ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ।
করোনা আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে যখন থরহরিকম্প পরিস্থিতি, স্বাভাবিকবশতই রাজ্যও সেই প্রকোপ থেকে বাদ পড়েনি। প্রায় চার হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত। উত্তর দিনাজপুরেও থাবা বসিয়েছে কোভিড -১৯। আক্রান্তের সংখ্যাও শতাধিক। অনেকেই চিকিৎসাধীন হাসপাতালে। প্রতিষেধক না থাকায় চিন্তা আরও দ্বিগুণ হয়েছে। আর এমন অতিমারী রুখতেই করোনা পুজো করলেন রায়গঞ্জের একদল মহিলা। সকাল থেকে উপোস করে বেলার দিকে তাঁরা সকলেই পৌঁছে যান বন্দর পৌর শ্মশান এলাকায়। এরপর সেই চত্বরেই মাটি খুঁড়ে তার সামনে বসে লাড্ডু, লবঙ্গ এবং জবাফুল সহযোগে চলে পুজো। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। সারিবদ্ধভাবে পাশাপাশি বসে চলে পুজো।
একই দৃশ্য ধরা পড়েছে খাস শিলিগুড়ি শহরের বুকেও। সোমবার শিলিগুড়ির ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাজেন্দ্রনগর এলাকায় একপ্রকার ধুমধাম করেই ‘করোনা মাতা’র পুজোর আয়োজন হয়। অন্যদিকে, শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বাসিন্দাদের একাংশও মেতে ওঠেন করোনা পুজোয়। সকাল থেকে উপোস করে নিষ্ঠা সহকারে পুজো দিয়েছেন ব্লকের মহিলাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, এই কঠিন সময়ে পৃথিবীকে অতিমারীর হাত থেকে রক্ষা করতেই এই পুজো করা।
[আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে চালু পেইড কোয়ারেন্টাইন, অভিজাত হোটেলে মিলবে সব রকম সুবিধা]
কোথা থেকে এই করোনা পুজোর কথা মাথায় এল? তাঁদের একাংশের দাবি, পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতেও নাকি করোনা পুজো চলছে। আর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তা দেখেই এই উপাচারের শিখেছেন তাঁরা। আর সেই পুজো দেখতেই ভিড় জমিয়েছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে পঞ্চম দফার লকডাউন জারি রয়েছে গোটা দেশে। তবে লকডাউন না বলে ‘আনলক ফেস ওয়ান’ বলাই যুক্তিযুক্ত। একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে রাজ্যের প্রায় সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানই খুলে গিয়েছে। রাস্তায় নেমেছে বাস, অটো। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি তথা সামাজিক দূরত্ব তো শিঁকেয় উঠেইছে, উপরন্তু মারণ ভাইরাসের মোকাবিলায় কুসংস্কারে ভর করে মনোবল বৃদ্ধির প্রবণতাও দেখা দিয়েছে একাধিক জায়গায়। আর আমজনতার এই কুসংস্কারপ্রবণতা দেখেই অনেকে কপালে ভাঁজ ফেলেছেন। তাঁদের মতে, “একবিংশ শতকেও এই দিন দেখতে হবে, ভাবা যায় না!”