Advertisement
Advertisement

Breaking News

অলচিকি ভাষায় পরীক্ষা দিয়ে সাফল্যের শীর্ষে সীমা, হতে চায় আইনজীবী

৮১.৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সীমা সোরেন৷

Sima Soren passed out the HS Exam with Ol Cemet
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 8, 2018 8:38 pm
  • Updated:June 8, 2018 8:38 pm

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: এখনও আদিবাসী সম্প্রদায় পিছিয়ে৷ তাই তাদের এগিয়ে নিয়ে যেতেই আইন নিয়ে পড়তে চায় সীমা সোরেন৷ রাজ্যে অলচিকি ভাষায় মেয়েদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম সীমা সোরেনের ভবিষ্যতের এটাই লক্ষ্য৷ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে সাঁওতালি ভাষায় ৮১.৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সীমা সোরেন৷

তাক লাগানো ফলাফল৷ কিন্তু কীভাবে এই খুশি পালন করবে তা ভেবেই দিশেহারা সীমা৷ কাঁকসার রঘুনাথপুরে একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের পরিবেশটাই শুক্রবার আমুল বদলে গেল সীমার দৌলতে৷ স্কুলে বড় বড় গাড়ি হাঁকিয়ে হাজির পুলিশ থেকে প্রশাসনের কর্তারা৷ স্রেফ সীমাকে সংবর্ধনা দিতেই স্কুলে হাজির হয়েছিলেন তাঁরা৷

Advertisement

[ সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ গুঁজে থাকা পছন্দ নয় উচ্চ মাধ্যমিকে নবম হওয়া অনুশ্রীর ]

Advertisement

বীরভূমের সিউড়ির আনন্দপুরের বাসিন্দা শিবলাল সোরেন৷ বীরভুমের জেলাশাসকের কার্যালয়ে সামান্য চতুর্থ শ্রেণির কর্মী তিনি৷ স্ত্রী পুর্ণিমা সোরেন গৃহবধু৷ সীমা ও তার বোনকে পড়াশোনা শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতেই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই দুই বোনের ঠিকানা এই একলব্য স্কুল৷ মাধ্যমিক পরীক্ষা আশানুরূপ না হওয়ায় কিছুটা আশাহত হয়েছিল সীমা৷ বাবা-মা তাকে ভাল করে পড়তে বলেছিল৷ স্কুলের শিক্ষকরাও তাকে সাহস জোগায়৷ তখন থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফল করার চ্যালেঞ্জ নেয় সে৷ ফলও মেলে হাতেনাতে৷ সারাদিনে যখনই সময় পেয়েছে, পড়েছে৷ তার ফাঁকে ঘরের কাজে মায়ের সঙ্গে হাতও লাগাতে হয়েছে৷ তবে স্কুলের হোস্টেলে থাকার সুবাদে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিজের মতন করেই করতে পেরেছিল সীমা সোরেন৷ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও রাতদিন যখনই কিছু বুঝতে অসুবিধা হয়েছে সীমার, তখনই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন৷

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর হোস্টেল ছাড়তে হয়েছিল৷ শুক্রবার সকাল থেকে টিভির সামনেই বসেছিল সীমা৷ কিছু একটা হবেই এই আশায়৷ স্কুল থেকেই প্রথম সুসংবাদটা যায়৷ বাবাকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাসে চেপে সোজা স্কুলে৷ এদিকে সীমার জন্যে তখন অপেক্ষা করছে গোটা স্কুল৷ স্কুলের একটা আলাদা আনন্দেরও জায়গা আছে এইবার৷ কারণ, এবারই প্রথম সাঁওতালি ভাষায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হল এই স্কুলে৷ প্রথমবারেই এই সাফল্য অপ্রত্যাশিত৷

[ জেলার মুখরক্ষা করল দুই কৃতী ছাত্রী, খুশির হাওয়া বালুরঘাটে ]

সীমা স্কুলে ঢুকতেই শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সহপাঠীদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা আসতে শুরু করে৷ পরে একে একে কাঁকসার বিডিও, পুলিশ ও দুর্গাপুরের মহকুমাশাসকের পক্ষ থেকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়৷ এরপর প্রধান শিক্ষকের ঘরে গিয়ে রেজাল্ট দেখে বিশ্বাসই করতে পারছিল না সীমা৷ আনন্দ ধরা পড়ছিল তার চোখে মুখে৷ সে জানিয়েছে, “এতটা আশা করিনি৷ মাধ্যমিক পরীক্ষা আশানুরূপ না হওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল করার চ্যালেঞ্জ ছিল৷ কিন্তু এত ভাল হবে, ভাবিনি৷” কী নিয়ে পড়তে চায় সে? উত্তরে সীমা বলে, “আইন নিয়ে পড়ব৷ আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে৷ আমাদের সম্প্রদায়কে সাহায্য করতেই আইন পড়ব৷”

তবে আজকের দিনটা সেলিব্রেশনের। সীমা বলে, “মা ঘরে অপেক্ষা করে আছে৷ ভাল রেজাল্ট হয়েছে শুনেছে৷ তবে কার্ড দেখেনি৷ আগে মাকে গিয়ে রেজাল্ট কার্ড দেখাব৷ তারপর বাবা-মা যেভাবে চাইবে সেইভাবেই কাটাব৷” সীমার ফলাফলে খুশি স্কুলের শিক্ষকরাও৷ তবে তাদের আশা ছিল এই পরীক্ষায় ভাল কিছু একটা ফল করবেই সীমা৷ একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের টিচার ইনচার্জ হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “অত্যন্ত ভাল মেয়ে৷ স্কুলের প্রতিটি পরীক্ষাতেই ব়্যাঙ্ক করত৷ শিক্ষকদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল৷ সহপাঠীদের সঙ্গেও সম্পর্ক ভাল৷ তবে এত ভাল ফল করবে আমরা ভাবিনি৷ এবার তো আমাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে৷ তবে ভবিষ্যতে আমরা সবাই মিলে ওকে গাইড করব৷”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ