Advertisement
Advertisement

Breaking News

চাষযোগ্য করতে সিঙ্গুরে মাটি পরীক্ষায় জোর

যে কোনও শর্তে আগামী মরশুমে মাঠে নামতে চান সবাই৷ তর সইছে না সিঙ্গুরের৷

Singur Wants To Back To Agriculture, Soil Testing Is In Spree
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 10, 2016 9:29 am
  • Updated:July 25, 2022 12:51 pm

তরুণকান্তি দাস ও সন্দীপ চক্রবর্তী: প্লট প্রায় ২৪০০৷ কিন্তু মালিকের সংখ্যা অনেক বেশি৷ তাই চেকের পাহাড় জমছে৷ সবই ব্ল্যাঙ্ক চেক৷ কিছু সংখ্যক চেকে টাকার অংক লেখা৷ কিন্তু প্রাপকের জায়গাটা শূন্য৷ যা পূর্ণ করতে তৎপরতা তুঙ্গে ভূমি দফতরের৷ সবার ছুটি বাতিল৷ শনি ও রবিবারও কাজ হবে৷ যে কোনও শর্তে সিঙ্গুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগে কাজ গুছিয়ে ও গুটিয়ে ফেলতে চায় প্রশাসন৷ শুধু তাই নয়, প্রকল্প এলাকার জমির চরিত্র নির্ণয় করে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে চায়৷ কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ শেষ করতে হবে৷
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগেই কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য প্রায় ৬৫০ একর জমি প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন৷ সেই জমি সম্ভব হলে তুলে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে ওইদিন৷ এছাড়াও কিছু জমির মালিককে সভা থেকে তাঁদের প্রাপ্য চেক দেওয়া হতে পারে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ শুক্রবার সিঙ্গুরে প্রকল্প এলাকার কাজ খতিয়ে দেখে এই পরিকল্পনার কথা জানান তিনি৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিদ্যুৎ সংক্রান্ত পরামর্শদাতা মণীশ গুপ্ত৷ পার্থবাবু বলেন, “শুক্রবার পর্যন্ত তিনশো একর জমির মাপজোক হয়ে গিয়েছে৷ কাল, শনিবারের মধ্যে আরও একশো একর প্রস্তুত হয়ে যাবে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আগেই প্রায় ৬৫০ একর জমির কাগজপত্র তৈরি হবে৷ তা চাষিদের হাতে তুলেও দেওয়া যেতে পারে৷ তবে মুখ্যমন্ত্রী পুরো বিষয়টি ঠিক করবেন৷”
যে সব জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে তা নিয়ে বিশেষ কোনও সমস্যা নেই৷ কিন্তু কারখানার শেড ও অন্যান্য নির্মাণ রয়েছে এমন এলাকা নিয়ে যথেষ্ট জটিলতা দেখা দিয়েছে৷ এ বিষয়ে পার্থবাবুর উত্তর, “প্রায় ৭০ একরে টাটাদের শেড রয়েছে৷ জমির মালিক রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম৷ তারাই এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবে৷ তার পর কারা ভাঙবে, কারা সরাবে তা ঠিক হবে৷ পুরোটাই প্রশাসনিক বিষয়৷ শেড ও অন্যান্য নির্মাণ তো আমাদের নয়৷ কিছু করতে গেলে দোষ চাপবে৷ তাই যাদের জিনিস তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে৷ তবে আদালতের রায় মোতাবেক কাজ হবে৷ এবং কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়াটাই আমাদের প্রথম কাজ৷” যদি সিঙ্গুরের মানুষ এখন শিল্প চান? তৃণমূলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থবাবুর সাফ কথা, “আমরা তো শিল্পবিরোধী নই৷ কিন্তু চাই শিল্পের জায়গায় শিল্প হোক৷”

singur1_web
সিঙ্গুরে দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম৷ রয়েছেন প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত-সহ বিধায়ক ও সরকারি আধিকারিকরা৷ শুক্রবার৷ ছবি: প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়৷

সিঙ্গুরে এখন প্রশাসনের তৎপরতা তুঙ্গে৷ সবচেয়ে বেশি তৎপর ভূমি দফতরের আধিকারিকরা৷ সিঙ্গুর বিডিও অফিস লাগোয়া নিজস্ব দফতরে দিনরাত এক করে কাজ চলছে৷ আজ শনিবার ও রবিবারও কাজ হবে৷ অনিচ্ছুক কৃষকদের জমির কাগজপত্র খতিয়ে দেখে মালিকানা সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শেষ করা ও চেক প্রস্তুত করার কাজ অনেকটাই এগিয়েছে৷ জানা গিয়েছে প্রায় চার হাজার চেক বিলি করা হবে৷ প্লট রয়েছে প্রায় ২৪০০৷ কিন্তু মালিকানা খতিয়ে দেখে বোঝা যাচ্ছে চেকের সংখ্যা বাড়বে৷ জেলাশাসকের দফতরে যে টাকা ২০০৬ সালে জমি অধিগ্রহণপর্বে এসে পড়ে ছিল তা দেওয়া হবে৷ ওই সময় যে মূল্য ধার্য হয়েছিল সেই হিসাবেই টাকা দেওয়া হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর৷
পাশাপাশি, সিঙ্গুরের জমিকে চাষযোগ্য করে তুলতে এবার মাটি-পরীক্ষা শুরু করল রাজ্য সরকার৷ জমির চরিত্র বুঝতেই আপাতত গত দু’দিনে ৬০টি নমুনা সংগ্রহ করেছেন কৃষি দফতরের আধিকারিকরা৷ পরীক্ষার রিপোর্ট নির্ভুল করতে এই প্রথম ৫০ ফুট অন্তরও নমুনা পরীক্ষার পথে তাঁরা৷ শ’তিনেকের বেশি নমুনা সংগ্রহ করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ সিঙ্গুরের একসময়ের প্রস্তাবিত কারখানার জমির চরিত্র বুঝতে এই প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ৷ রাজ্য সরকারের পরীক্ষাগারে চালানো হচ্ছে পরীক্ষা৷ চার-পাঁচদিনে হাতে আসবে রিপোর্ট৷ মাটি-পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে এলেই চাষযোগ্য করার লড়াইয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পুরোদমে নামবে কৃষি দফতর৷
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জমিকে চাষযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র-সেচ দফতরের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে৷ দুই দফতরেরই দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই নমুনা তোলার কাজ করছেন৷ যেখানে কাঠামো নির্মাণ হয়েছে, সেখানে মূলত ঘনভাবে ‘স্যাম্পল’ নেওয়া হচ্ছে৷ মাটির চরিত্র বদল হয়েছে কতটা, সেটা বোঝাই প্রথম কাজ৷ দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কাঠামোবিহীন বা যেখানে রাস্তা হয়েছে, সেই এলাকা ছাড়া জমির চরিত্র খুব একটা বদল হয়নি৷ কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে পুরনো অবস্থায় জমি ফিরিয়ে দেওয়া একটা চ্যালেঞ্জ৷ এই ক্ষেত্রে কৃষির বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন৷ কীভাবে ফেরানো হবে মাটির কৃষি-উর্বরতা?
প্রশাসন সূত্রে খবর, কারখানা গড়তে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে কয়লার ছাই ও বালি ফেলা হয়েছিল৷ ফেলা হয়েছে সুরকিও৷ এছাড়া মাটির উপর ভারী ওজনের যন্ত্রপাতি পড়ায় জমির চরিত্র বদল হয়েছে৷ প্রথমেই ছাই-বালি বা সুরকির মতো কিছু উপাদান তুলে ফেলা হবে৷ সেই অংশে নতুনভাবে মাটি ফেলা হবে৷ মাটি ফেলার পর কিছু জৈব-উপাদান বা সার ফেলা হবে৷ উচ্চমাত্রার সার ফেলার পর দ্রুত জমি পুরনো চরিত্র ফিরে পেতে পারে৷ কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সিঙ্গুরের জমি যেহেতু এমনিতেই অতি-উর্বর, তাই পুরনো চরিত্র ফিরে পেতে খুব একটা হিমশিম খেতে হবে না৷
তবে আপাতত সিঙ্গুরের মাটির বর্তমান চরিত্র নির্ণয় প্রধান কাজ৷ নমুনা সমীক্ষার ক্ষেত্রে মাটি ভেজা হলে অনেকসময়ই সম্পূর্ণ নির্ভুল ফল মেলে না৷ তাই মোটামুটিভাবে শুকনো মাটি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়৷ গত বুধবার প্রথম নমুনা নিলেও তা পুরোপুরি শুকনো ছিল না৷ তাই বৃহস্পতিবারও নমুনা সংগ্রহ করেন আধিকারিকরা৷ সংগ্রহ করা নমুনার ফল জানতে হুগলির পরীক্ষাগার ও টালিগঞ্জে মূল পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে৷ সেখান থেকে দিন চারেকের মধ্যেই ফল জানা যাবে৷ আশা করা হচ্ছে, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগেই মাটি-নমুনার ফল জানা যাবে৷
এই রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ৷ কারণ, সেইমতো এলাকা ম্যাপিং করে শুরু হবে জমির চরিত্র পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ৷ ইট-কাঠ-পাথরের জঙ্গল সরিয়ে আবার জমি সবুজে ভরিয়ে দেওয়ার কাজ৷ যে কোনও শর্তে আগামী মরশুমে মাঠে নামতে চান সবাই৷ তর সইছে না সিঙ্গুরের৷

Advertisement

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ