Advertisement
Advertisement

Breaking News

আয় বাড়াতে ঘুম চোখেই স্টিয়ারিংয়ে হাত চালকদের, বাড়ছে বিপদ

টার্গেট ফুলফিল না হলে তো কমিশন নেই।

Sleep deprived App cab drivers threat to passenger safety
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 2, 2018 11:03 am
  • Updated:September 16, 2019 6:17 pm

নব্যেন্দু হাজরা: ঘুমে চোখ লেগে যায়। কিন্তু কী করব! টার্গেট ফুলফিল না হলে তো কমিশন পাব না! সংসার চলবে কী করে?

সৌমেন সেন। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। বাড়ি লিলুয়ায়। আগে ট্যাক্সি চালাতেন। এখন অ্যাপ ক্যাব। বললেন, “সপ্তাহে ট্রিপ ঠিক করে দেয় কোম্পানি। তা পার না করলে ইনসেনটিভ পাই না। ঘুম পেলেও তাই কষ্ট করেই চালাতে হয়।” যত বেশি ডিউটি, তত বেশি আয়। আর এই আয়ের লোভেই ক্যাবে চালকের হাতে বিপন্ন সাধারণ মানুষের জীবন। বারে বারে ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে প্রাণহানিও। যেমনটা হল রবিবার ভোরে বাইপাসে। দীর্ঘ গাড়ি চালানোর ক্লান্তিতে স্টিয়ারিং হাতেই ঘুমিয়ে পড়লেন চালক। দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল এক ছাত্রের। তার ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই সোমবার সকালে বেলঘরিয়ায় ফের অ্যাপ ক্যাব দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল গাড়ির চালক এবং এক যাত্রীর। তাই স্বাভাবিকভাবেই অ্যাপ ক্যাবে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা জায়গায়। কিন্তু কেন এই নিরাপত্তাহীনতা? ক্যাব সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, চালক ট্রিপ বাড়াতে পারলেই ইনসেনটিভ বাড়তে থাকে। একেক সংস্থার একেক নিয়ম। আর সেই ইনসেনটিভের লোভেই দিনে ১৬, ১৮ এমনকী কেউ কেউ প্রায় ২০ ঘণ্টা গাড়ি চালাচ্ছেন। শরীরের ক্লান্তিতে গাড়ি চালাতে চালাতেই ঘুমিয়ে পড়ছেন চালকরা। ফলে কখনও গাড়ি ডিভাইডারে ধাক্কা মারছে। কখনও ব্রেক ফেল করছে।

Advertisement
[বড়বাজারে রমরমিয়ে ‘ডাব্বা ট্রেডিং’, রাজ্য জুড়ে তদন্তে দুর্নীতি দমন শাখা]

এক ক্যাব সংস্থার যেমন নিয়ম, সপ্তাহে ১০৭টি ট্রিপ করতে পারলে চালকের জন্য বিশেষ ইনসেনটিভ থাকে। ফলে সেই লোভে একজন চালক দিনে ১৫-১৭ ট্রিপও করতে বাধ্য হন। টার্গেট পূরণ করতে ডিউটি করতে হয় ১৮ ঘণ্টারও বেশি। যার জেরে শরীরে আসে ক্লান্তি। মুহূর্তের ভুলে ঘটে যায় ভয়াবহ অ্যাক্সিডেন্ট। পরিবহণ দপ্তরসূত্রে খবর, একজন চালক দিনে কতক্ষণ গাড়ি চালাতে পারবেন, তার সঠিক কোনও নির্দেশিকা নেই। শুধু মোটর ভেহিকলস আইনে বলা হয়েছে, সমস্ত আইন মেনে চালকদের গাড়ি চালাতে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে শ্রম দফতরের আইন অনুযায়ী, আট ঘণ্টা একজন ডিউটি করার কথা। কারণ তাঁর সুস্থ থাকার উপর যাত্রীদের জীবন নির্ভর করে। সরকারি বাসে যেমন আট ঘণ্টার বেশি ডিউটি করতে দেওয়া হয় না চালকদের। মাঝেমধ্যে ওভারটাইম। তাও বয়স হয়ে গেলে নয়। কিন্তু এই ধরনের বেসরকারি ক্যাব বা ট্যাক্সি চালকদের ডিউটির কোনও সময়সীমা নেই। নিয়মের ফাঁক গলেই কেউ গাড়ি চালাচ্ছেন ১৬ ঘণ্টা। কেউ তারও বেশি। আসলে ঘণ্টা বাড়লেই তো ইনসেনটিভ। জানান শৌভিক রায়। দিনে যিনি প্রায় গড়ে ১৫-১৬ ঘণ্টা গাড়ি চালান। মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “একজন সুস্থ্য মানুষের অন্তত আট ঘণ্টা ঘুম চাই। কিন্তু ক্যাবের চালকরা তা করেন না। বেশিরভাগ সময়টাই ক্যাব চালান বেশি আয়ের লোভে। কিন্তু এদের উপর আরও চারটে লোকের জীবন নির্ভর করে থাকে, তা ভুলে যান। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।” লাক্সারি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈকত পাল বলেন, “আমরা পরিবহণ দপ্তরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি দেখতে বলব। দাবি, যেন কোনওভাবেই ১২ ঘণ্টার বেশি ডিউটি না রাখা হয়।” এআইটিইউসির কলকাতা ট্যাক্সি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, “আয়ের লোভে অনেকেই ১২-১৪ ঘণ্টা ডিউটি করেন। কী আর করা যাবে!” এবিষয়ে ওলা এবং উবেরের কেউ মুখ খুলতে চাননি।

Advertisement
[দোল ঘিরে অশান্তি, মদ্যপান রুখতে পুলিশি অভিযানে উত্তাল বাগুইআটি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ