ধীমান রায়, কাটোয়া: ব্যাঙ্কের লকারের চাবি চেয়েছিল ছেলে। ব্ল্যাঙ্ক চেকে সই করে দিতে বলেছিল। দিতে রাজি হননি বাবা। সেই আক্রোশে বাবা ও মাকে লোহার রড দিয়ে পেটাল শিক্ষক ছেলে। গুণধর ছেলের এই কীর্তিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায়। পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় তাপস মল্লিক (৭৬) নামে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। আটক করা হয়েছে অভিযুক্তকে। পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্ত ছেলের নাম অমিত মল্লিক (৪৮)। আহত হয়েছেন অমিতের মা বুলুরাণিদেবীও। বুধবার দুপুরে কাটোয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাধবীতলায় এই ঘটনা ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অমিত নামে ওই ব্যক্তি তার বাবা মাকে প্রায়শই মারধর করত। কাটোয়া শহরে মাধবীতলায় তাপসবাবুদের বাড়ির নিচেই হার্ডওয়ারের দোকান। পৈতৃক ব্যবসা। চালু দোকান। জানা গিয়েছে, অগাধ সম্পত্তির মালিক তাপস মল্লিকরা। তিনি বৃদ্ধ বয়সেও নিজেই দোকান চালান। দুজন কর্মচারী রয়েছেন দোকানে। বুলুরাণি মল্লিক জানিয়েছেন, অমিত তাদের একমাত্র সন্তান। কেমিস্ট্রিতে এম এস সি। খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। অল্প বয়সেই শিক্ষকতার চাকরি পায়। বীরভূম জেলার কীর্নাহারের সরডাঙ্গা আব্দুল হালিম স্মৃতি শিক্ষা নিকেতনের শিক্ষকতা করত। মাস চারেক আগে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিতের বিয়ে হয় মঙ্গলকোটের মাজিগ্রামে। একটি ছেলেও রয়েছে তার। তবে স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তির কারনে অমিতের স্ত্রী তিনমাস আগে ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন বলে বুলুরানি জানিয়েছেন। আহত তাপসবাবু বলেন, ‘আমার ছেলে প্রায়ই আমাকে চাপ দিত সমস্ত সম্পত্তি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য। মারধরও করত। তবে পারিবারিক বিষয় বলে মুখ বুজে সব সহ্য করে এসেছি।’ তিনি জানিয়েছেন, এদিন বুধবার সকালে ঘটনার সূত্রপাত। তাপস মল্লিকের কথায়, ‘অমিত আমার কাছে ব্যাঙ্কের লকারের চাবি চাইছিল। আর চেকবই নিয়ে বলছিল একটি ব্ল্যাঙ্ক চেকে সই করে দিতে। আমি রাজি হইনি। তখন ও আমাকে দোকানের লোহার রড নিয়ে এসে মারতে থাকে। আমাকে ছাড়াতে এলে ওর মাকেও মারে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিত লোহার রড দিয়ে এলোপাথারি মারতে শুরু করায় বুলুরানিদেবী ও তাপসবাবু দুজনেই প্রাণভয়ে দৌড় লাগান। তাপসবাবু পাশের বাড়ির গলিতে ঢুকে লুকিয়ে থাকেন। বুলুরানিদেবী ছুটতে ছুটতেসটান থানায় চলে যান। ততক্ষনে দোকানের সামনে লোকজন ভিড় করেন। তারাই খবর দিলে পুলিশ এসে তাপসবাবুকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে দুজনকে। দুজনেরই মাথায় আঘাত লেগেছে। দোকানের কর্মচারী হরি ঘোষ বলেন, ‘আমরা প্রায়ই দেখতাম ছোটবাবু টাকা পয়সা নিয়ে বাবুর সঙ্গে ঝগড়া করতেন। আমরা সুশিক্ষা দিতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু ছোটবাবু বলত তোমরা কর্মচারী। পারিবারিক বিষয়ে কিছু বলবে না।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.