সৌরভ মাজি, বর্ধমান: শেষ পর্যন্ত পিতৃপরিচয় ফিরে পেলেন সন্তান। শেখ ইব্রাহিমের বাবা হিসাবে শেখ গোলাম এহিয়াকে স্বীকৃতি দিল আদালত। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই এই স্বীকৃতি পেলেন ৪৬ বছরের ইব্রাহিম। কিন্তু লড়াইটা মোটেই সহজ ছিল না।
প্রথমে মায়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন বাবা শেখ গোলাম। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস। তারপর গর্ভাবস্থায় বাড়ি থেকে পরিচারিকার কাজ ছাড়িয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। তাঁর সন্তান পিতৃপরিচয়হীনভাবে জন্ম নেয়। সেই ছেলে স্কুলে ভরতি হতে গিয়ে আর এক বিড়ম্বনা। পিতৃপরিচয় ছাড়া ভরতি নেবে না স্কুল। তখন এক সহৃদয় ব্যক্তি নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিয়ে ভরতি করান স্কুলে। কিন্তু ওই সহৃদয় ব্যক্তি যে আসল বাবা নয় তাও জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। ফলে জীবন দু্র্বিসহ হয়ে উঠেছিল। পড়াশোনা থেকে চাকরি সব ক্ষেত্রেই পিতৃপরিচয় নিয়ে বারবার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৪৬ বছর বয়সে এসে আসল পিতৃপরিচয় পেলেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আদালতে মামলা লড়ে পিতৃপরিচয় আদায় করলেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির সিমলা গ্রামের শেখ ইব্রাহিম। আদালতে তাঁর আইনজীবী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় মামলা লড়েন।বর্ধমানের চতুর্থ জেলা ও দায়রা বিচারক শম্পা দত্ত শেখ ইব্রাহিমের পিতা হিসেবে প্রতিবেশী শেখ গোলাম এহিয়াকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
এহিয়া কোনওভাবেই ইব্রাহিমের পিতৃত্ব অস্বীকার করতে পারবেন না বলে বিচারক রায়ে জানিয়েছেন। নিম্ন আদালতে মামলার সময় এহিয়া ডিএনএ টেস্ট করাতে অস্বীকার করেছিলেন। ডিএনএ পরীক্ষার ফল বিপক্ষে যেতে পারে আঁচ করেই এহিয়া তা করাতে রাজি হননি বলেও মন্তব্য করেন চতুর্থ জেলা ও অতিরিক্ত বিচারক। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতের রায়ও খারিজ করে ইব্রিহিমের পক্ষে রায় দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ১৫ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর পিতৃপরিচয় পেয়ে খুশি তিনি। ইব্রাহিম বলেন, “পিতৃপরিচয় না থাকায় জীবনে অনেক গঞ্জনা শুনতে হয়েছে আমাকে। আমার মাকেও। দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়েছি। আমি সম্পত্তির লোভে লড়াই করিনি। আমার ও মায়ের সামাজিক স্বীকৃতির জন্য লড়াই চালিয়েছি। আদালতে সেই লড়াইয়ে জিতলাম। এতদিনে শান্তি পেলাম।”
ইব্রাহিমের মা শরিফা বিবি বছর ৪৭ আগে শেখ গোলাম এহিয়ার বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। এহিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এহিয়া শরিফাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করে। গর্ভবতী হয়ে পড়েন শরিফা। তখন এহিয়াকে বিয়ে করার কথা বললে তাঁকে কাজ থেকেও তাড়িয়ে দেয়। শরিফা সেই সময় প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করলেও কোনও সুরাহা হয়নি। ১৯৭৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পুত্রসন্তানের জন্ম দেন শরিফা। লোকের বাড়ি কাজ করে সন্তানকে বড় করেন। কিন্তু তাকে স্কুলে ভরতি করাতে গেলে পিতৃপরিচয় না থাকায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। তখন এক আত্মীয় নুর হুদা মল্লিক সহায়তা করেন। নিজের ছেলে পরিচয় দিয়ে ইব্রাহিমকে ভরতি করান। কিন্তু তাঁর আসল বাবা যে নুর নন, তা প্রচার হয়ে যায়। বড় হয়ে আসল পিতৃপরিচয় পেতে লড়াই শুরু করেন ইব্রাহিম। অবশেষে সুবিচার মিলল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.