Advertisement
Advertisement

Breaking News

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যুবকের সাহায্য

নিজের ভাতা অমিল, হাত পেতেই দুস্থদের জন্য ত্রাণ জোগাড় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যুবকের

তাঁর উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন।

Specially abled youth raises fund to help distressed people amidst lockdown
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 2, 2020 9:21 pm
  • Updated:May 2, 2020 10:10 pm

দীপঙ্কর মণ্ডল: লিকলিকে দু’টো পা। কিডনির দু’টো কর্মক্ষমতা দিন দিন কমছে। মানবিক ভাতা পান না। তবু দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে কোনও বাধাই বাধা নয়। লকডাউনে তাই ভিক্ষা করে দুস্থদের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিচ্ছেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যুবক শুভঙ্কর মণ্ডল।

Special Youth1

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির জাহানাবাদের বাসিন্দা শুভঙ্কর। বাবা নেই। মায়ের পেনশনে চলে সংসার। ছোট্ট একটি দোকান আছে শুভঙ্করের। লকডাউনে দোকানেও তালা। উপকূল এলাকায় প্রচুর অভাবী মানুষ। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজনের দারিদ্র এখন প্রকট। রেশন মিলছে। তবে সেই বরাদ্দে দু’বেলা চলে না। তাঁদের জন্যই এগিয়ে এসেছেন শুভঙ্কর। বন্ধু, আত্মীয়, পরিজন সবার কাছে নিঃসঙ্কোচে হাত পাতছেন। নিজের জন্য নয়। অভাবী মানুষজনের মুখে হাসি ফোটাতে তিন চাকার সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন যুবক। আলু, ডাল, সুজি, সাবান, সোয়াবিন, মুড়ি – এইসব প্যাকেট করে পৌঁছে দিচ্ছেন। আপাত সাধারণ এই যুবকের কাজে খেজুরি জুড়ে প্রশংসা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ক্রাইম সিরিয়ালের দৃশ্য নকল করার চেষ্টা, গলায় ফাঁস লেগে মর্মান্তিক মৃত্যু ছাত্রের]

রাজ্যের বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য সবচেয়ে বড় সংগঠনের কর্তা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “মানবিক ভাতা না পেয়েও দুস্থদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন শুভঙ্কর। তিনি গোটা দেশের আইকন। তাঁকে সহস্র অভিনন্দন।” কাঁথির একটি স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক রত্নদীপ সামন্ত জানিয়েছেন, “শুভঙ্করকে অনেকদিন ধরে চিনি। উচ্চপ্রাথমিকে নিয়োগের পরীক্ষায় পাস করেও চাকরি পায়নি। সততা ও পরিশ্রমই ওর মূল মন্ত্র।” এলাকার শিক্ষক তরুণাভ দাস, পঞ্চায়েত কর্মী শমীক পণ্ডা, দেউলপোতা গ্রাম্য গোষ্ঠীর সম্পাদক তনুজ বেরা, সুমন্ত জানারা সকলেই শুভঙ্করের পাশে।

Special-youth2

রবিবারও তাঁদের কর্মসূচি আছে। কলাগাছিয়া, জাহানাবাদ, দেউলপোতা, কামারদা প্রভৃতী গ্রামের শতাধিক মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেবেন তাঁরা। ভাঁড়ারে থাকবে লুচি, মিষ্টি ও ফল। শুভঙ্কর জানিয়েছেন, “আমি হাঁটতে পারি না। মায়ের কোলে চেপে স্কুলে যেতাম। অনেক কষ্ট করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূর শিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রিও পেয়েছি। চাকরির আবেদন অনেক করেছি। মানবিক ভাতারও আবেদন করেছি। কিছুই মেলেনি। কতদিন বাঁচব, জানি না। মানুষের জন্য কিছু তো করে যাই।” খেজুরির বিশিষ্টরা বলছেন, “অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা হতে পারেন এই যুবক। নিজে হাঁটতে পারেন না। শারীরিক অন্য অনেক অসুবিধা আছে। তা সত্ত্বেও যেভাবে উনি দুস্থদের সেবা করছেন, তা অনবদ্য।”

[আরও পড়ুন:  পরকীয়ার জের, বউদিকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করে আত্মঘাতী দেওর]

ফেসবুকে শুভঙ্কর জানতে পারেন কলকাতার একটি অধ্যাপকদের সংগঠন রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় ত্রাণ বিলি করছে। সেইমতো ‘ইউনাইটেড ওয়েস্ট বেঙ্গল পলিটেকনিক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সংগঠনের শীর্ষ পদাধিকারী বিক্রম চট্টোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেন, পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতেও তাঁরা যাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এই সংগঠনের প্রধান কার্যালয় কলকাতায়। বিক্রমবাবুরা কিছু টাকা পাঠিয়েছেন। অন্যদের থেকে চেয়েচিন্তে আরও কিছু জোগাড় হয়েছে। তা দিয়ে কিছু রান্না করা খাবারও বিতরণ করতে চান শুভঙ্কররা। তিনি জানিয়েছেন, “কারও কাছে আমার পাওয়ার কিছু নেই। শুনেছি আমাদের জন্য সরকার মোটরচালিত ট্রাই সাইকেল দেয়। তা পেলে খেজুরির মতো প্রন্তিক এলাকায় ঘোরাফেরায় আরও সুবিধা হত।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ