Advertisement
Advertisement

গম নয় এবার ২ টাকা কেজি দরে মিলবে আটা

দু'টাকা কিলো দরে চালের পর এবার রেশনে গরিব মানুষের জন্য গমের পরিবর্তে একইদামে সমপরিমাণ আটা বন্টনের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার৷ পুজোর আগেই বাংলার ৯ কোটির মধ্যে প্রায় ৬ কোটি মানুষকেই ভরতুকি দিয়ে প্যাকেটে ভরা আটা বিলির কর্মসূচি শুরু করবে খাদ্য দফতর৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষকে গমের পরিবর্তে সরাসরি আটা বন্টনের জনমুখী এই প্রকল্প গোটা দেশে প্রথম পশ্চিমবঙ্গেই চালু হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷

state will provide flour in Rs. 2 per kilo
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 10, 2016 9:20 am
  • Updated:June 23, 2022 7:54 pm

কৃষ্ণকুমার দাস ও রাহুল চক্রবর্তী: দু’টাকা কিলো দরে চালের পর এবার রেশনে গরিব মানুষের জন্য গমের পরিবর্তে একইদামে সমপরিমাণ আটা বন্টনের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার৷ পুজোর আগেই বাংলার ৯ কোটির মধ্যে প্রায় ৬ কোটি মানুষকেই ভরতুকি দিয়ে প্যাকেটে ভরা আটা বিলির কর্মসূচি শুরু করবে খাদ্য দফতর৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষকে গমের পরিবর্তে সরাসরি আটা বন্টনের জনমুখী এই প্রকল্প গোটা দেশে প্রথম পশ্চিমবঙ্গেই চালু হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷
দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই এখন মাত্র দু’টাকা কিলো দরে রেশনে সবাই চাল ও গম পাচ্ছেন৷ রেশন কার্ড আছে, এমন ৯ কোটি ৩৩ লক্ষ মানুষ এখন এই দরে চাল ও গম পাচ্ছেন৷ কিন্তু দু’টাকা দরে গম রেশনে পেলেও ভাঙাতে কিলো পিছু পাঁচ টাকা লাগছে৷ খোলা বাজারে আটার দর কিলো প্রতি ২২-২৫ টাকা৷ নিচু তলার মানুষের এই দুর্ভোগের খবর মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছতেই তাই এবার সরাসরি রেশনের মাধ্যমে প্যাকেটে আটা বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য৷ গম ভাঙাতে প্রতি কিলোয় খরচ পড়বে ১.৫২ টাকা৷ আটা তৈরি করে প্যাকেটে ভর্তি করতে যে খরচ হবে তা দেবে সরকার৷ খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, “সরকারের বছরে অতিরিক্ত ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে৷”
অন্ত্যোদয় অন্নপূর্ণা যোজনা, পিএইচএইচ ও এসপিএইচএইচ– এই তিন ক্যাটাগরির রেশনকার্ড আছে এমন বাসিন্দারাই এই প্যাকেট-আটা পাবেন৷ অন্ত্যোদয় অন্নপূর্ণা যোজনায় এখন পরিবার পিছু ১৫ কেজি চালের পাশাপাশি ২০ কেজি গমও পাচ্ছেন৷ কিন্তু নয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে এবার পরিবারপিছু গমের পরিবর্তে ২০ কেজি প্যাকেট করা আটা পাবেন৷ আবার প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড (পিএইচএইচ) এবং সুগার প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড (এসপিএইচএইচ) রেশন কার্ড যাঁদের হচ্ছে তাঁরা মাথাপিছু তিন কেজি হিসাবে গমের বদলে একই দামে আটা পাবেন৷ খাদ্যমন্ত্রী এদিন জানান, “আয়ের ভিত্তিতে গোটা রাজ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরি সম্পূর্ণ হলেই সেপ্টেম্বর মাসের শেষে আটা বিলির কর্মসূচি শুরু হবে৷ প্রায় ছয় কোটি মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় আসছে৷” খাদ্য নিয়ে রাজ্যের একজন মানুষকেও যে মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী বিন্দুমাত্র টেনশনে রাখতে চান না তা এই আটা বন্টনের সিদ্ধান্তে আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল৷
কিগম ভাঙিয়ে আটা তৈরি করে গোডাউন হয়ে কিভাবে রেশনে প্যাকেট পৌঁছাবে তার নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ করেছে রাজ্য সরকার৷ আপাতত ১২০টি আটা তৈরির ফ্ল্যাওয়ার মিলকে চিহ্নিত করেছে খাদ্যদফতর৷ আগামী ১৬ জুন রাজ্যের সমস্ত জেলার খাদ্য আধিকারিক এবং ফ্লাওয়ার মিল মালিকদের নিয়ে খাদ্যভবনে বৈঠক ডেকেছেন খাদ্যমন্ত্রী৷ সেখানেই সরকারের তরফে ভরতুকি দেওয়া এবং প্যাকেটজাত করার সম্পূর্ণ পতি ও প্রক্রিয়া জানিয়ে দেওয়া হবে৷ প্যাকেট করার জন্য কত মাইক্রন পুরু প্লাস্টিক এবং কী রঙের হবে তাও রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে৷ এদিন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় জানিয়েছেন, “গম ভাঙানোর দিন থেকে একমাসের মধ্যে আটার প্যাকেট রেশন কার্ড গ্রাহককে পৌঁছে দিতেই হবে৷ প্যাকেটের গায়ে আটা তৈরির দিন-তারিখ ছাপার অক্ষরে যেমন লেখা থাকবে তেমনই মেয়াদ উত্তীর্ণের সময়ও নির্দিষ্ট থাকবে৷ প্রতি মাসে আলাদা আলাদা ডিজিটাল বার-কোড থাকবে প্রতিটি প্যাকেটের উপর৷ প্রতিটি ফ্লাওয়ার মিলে গিয়ে আটা তৈরির বিষয়টি নজরদারি করবেন ফুড ইনস্পেক্টররা৷” আসলে আটায় দ্রূত পোকা হওয়ার যে সম্ভাবনা থাকে তা রুখতেই নয়া বন্টন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে খাদ্য দফতর এমন কঠোর নজরদারি চালু করছে৷ একইসঙ্গে প্রতিটি জেলায় খাদ্য দফতরের যে নিজস্ব ফুড-ল্যাবরেটরি আছে সেখানে আটা প্যাকেট করার আগে খাদ্যের মান ও গুন পরীক্ষা করে দেখা হবে৷ গোটা প্রক্রিয়াটি অনলাইনেই প্রতিটি জেলা থেকে প্রতিদিনই খাদ্য দফতরে পৌঁছে যাবে৷ ভুয়া রেশনকার্ড ধরার মতো আটা তৈরি এবং বন্টনের বিষয় দেখতে স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী যে মাঝে-মধ্যেই বিনা নোটিসে জেলায় জেলায় অভিযান চালাবেন তার এদিন ইঙ্গিত দেন৷
এবছর রাজ্য সরকারের ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৫ লক্ষ মেট্রিক টন৷ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা সম্পূর্ণ করতে চায় খাদ্য দফতর৷ এর মধ্যে ৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন ধান ইতিমধ্যে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার কিনে ফেলেছে৷ বাকি ভ্লঙ্ম লক্ষ মেট্রিক টন ধান শীঘ্রই ক্রয় করা হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে খাদ্য দফতর৷ বৃহস্পতিবার রাইল মিল মালিক ও খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী৷ ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে জেলাগুলি পিছিয়ে রয়েছে, তাদের বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ ২৭৬ টি সেন্টারে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করছে প্রশাসন৷ প্রতি ব্লকে আরও ৪ টি করে সেন্টার খোলা হয়েছে৷ সংখ্যাটা দশে বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে খাদ্য দফতরের৷ এদিন খাদ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ১ অক্টোবর থেকে চালু হচেছ ‘ই-প্রোকিওরমেণ্ট’৷ কোন এলাকায় কোন কৃষকের কাছ থেকে দিন অনুযায়ী কত ধান সংগ্রহ করা হচেছ, তার ডেটাবেস থাকবে৷ কৃষকের সম্পর্কেও তথ্য থাকবে ‘ই-প্রোকিওরমেণ্ট’-এ৷ আর ১ অক্টোবর থেকেই সরাসরি ধান বিক্রেতা কৃষকের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে৷

Advertisement

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ