শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে বুধবার পর্যন্ত একজনও পড়ুয়া ভরতি হননি। একাদশের বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৫টি এবং কলা বিভাগের ভরতিতে ১৬ টি শুধুমাত্র আবেদনপত্র বিক্রি হয়েছে। এমনই করুণ দৃশ্য রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগর মহারাজা জগদীশনাথ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের। অন্যদিকে এই শহরের দেবীনগর রামহরি গয়লাল উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র ভরতি হয়েছে মাত্র পাঁচজন। আর কলা বিভাগে কুড়িজন। অথচ সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এই দুই উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকের অভাব নেই। অভাব শুধু শিক্ষার্থীদের। শহরের নামী বালিকা স্কুল, রায়গঞ্জ গালর্স হাই স্কুলে একাদশে বিজ্ঞান বিভাগে ভরতি হয়েছে মাত্র পাঁচজন ছাত্রী। এদিকে শহর ঘেঁষা শীতগ্রাম হাই স্কুলে পড়ুয়ার অভাবে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগটি পুরো তুলে দেওয়া হয়েছে। বস্তুত উত্তর দিনাজপুর জেলা জুড়ে উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগে ভরতির আগ্রহ হারাচ্ছেন বিপুল ছাত্রছাত্রী।
বিহার ঘেঁষা ডালখোলা পুর এলাকার ডালখোলা হাই স্কুলে বাংলা-সহ হিন্দি ও উর্দু ভাষায় পঠনপাঠনের পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান শাখায় এদিন পর্যন্ত একাদশ শ্রেণিতে ভরতি হয়েছে মাত্র দু’জন ছাত্র। আর বাণিজ্য শাখায় ভরতির সংখ্যা মাত্র ৭। তবে ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক সুকুমার বিশ্বাস বলেন,”আসলে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের অধিকাংশ বিষয়ে পড়ানোর শিক্ষক নেই। কলা বিভাগে মাধ্যমিক মানের শিক্ষকদের দিয়ে পাঠদান চলছে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বিজ্ঞান শাখার শিক্ষক না থাকায় বিজ্ঞান শাখায় ছাত্রছাত্রী মিলছে না।”
[আরও পড়ুন: জরায়ুতে ৭ কেজি ওজনের টিউমার! সফল অস্ত্রোপচারে মহিলার প্রাণ বাঁচালেন কালনার চিকিৎসকরা]
এদিকে গোয়ালপোখর (২) ব্লকে ১১টি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে একমাত্র সইদপুর বাঘনটুলি হাই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে,অথচ আশ্চর্যজনকভাবে একজনও পড়ুয়া নেই। ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক পবিত্রকুমার বিশ্বাস বলেন,”উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখা রয়েছে মাত্র, কিন্তু ছাত্রছাত্রী ভরতি হচ্ছে না।” এ ব্যাপারে রায়গঞ্জের দেবীনগর মহারাজা জগদীশনাথ হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক তামিল সরেন অবশ্য বলেন,”উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ঠিকই আছে। কিন্তু ছাত্র ভরতি না হলে কি করব। প্রচার তো করা হচ্ছে।” আর রামহরি গয়লাল হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক চিরঞ্জিত সরকার অবশ্য বলেন,”উচ্চমাধ্যমিকে এবার বিজ্ঞান শাখায় তিনজন পরীক্ষা দিয়েছিল। সকলে পাশ করেছে। ” অন্যদিকে রায়গঞ্জ গালর্স হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক সুমিতা সরকার বলেন,”আসলে বিভিন্ন স্কুলে ঘুরে ঘুরে ভরতি হতে না পারলে, শেষে আমাদের স্কুলে ভরতি হয় মেয়েরা। তাছাড়া বাস্তবে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের শিক্ষক শিক্ষিকার অভাবে অনেক ছেলেমেয়ে কলকাতার স্কুলগুলোতে ভরতি হচ্ছে।”
এদিকে চাকুলিয়া শকুন্তলা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নবকুমার শাখারি বলেন, “আমার স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে শুধু কলা বিভাগ। সেখানেও পড়ুয়া কম। কারণ উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়ানোর শিক্ষক ঘাটতি। অনেকেই উৎসশ্রীতে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ফলে ভাল ছেলেমেয়েরা বেসরকারি স্কুলের দ্বারস্থ হচ্ছে।” তবে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান সহ কলা বিভাগে ভরতির সংখ্যা এত কম কেন? এ ব্যাপারে জেলা স্কুল পরিদর্শক মোরারীমোহন মণ্ডল বলেন,” এখনও একাদশে ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি। তবে বিজ্ঞানে স্কুলগুলোতে পড়ুয়া কম রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”