Advertisement
Advertisement

Breaking News

Subrata Mukherjee

মণ্ডা-মিষ্টির টানে ছুটে যেতেন গ্রামে, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকাতুর পৈতৃক ভিটে

পূর্ব বর্ধমানের ন'পাড়া গ্রামে প্রয়াত মন্ত্রীকে চোখের জলে শেষ বিদায়।

Subrata Mukherkee's ancestral village pays homage to the deceased minister | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:November 5, 2021 4:38 pm
  • Updated:November 5, 2021 4:58 pm

অভিষেক চৌধুরী, কালনা: মন্দির, পুজো, মিষ্টি, মণ্ডা – এই সবের বড় আকর্ষণ। শৈশবে গ্রাম ছেড়ে এলেও এসবের টান ছিঁড়ে ফেলা বড়ই কঠিন। তাই তো সময় পেলেই ছুটে যেতেন গ্রামের বাড়িতে। পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) নাদনঘাট থানার ন’পাড়া গ্রাম। এখানেই ছিল রাজ্যের সদ্যপ্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের (Subrata Mukherjee) পৈতৃক বাড়ি। সময় পেলেই জোড়া মণ্ডা ও সুস্বাদু মিষ্টির টানে ছুটে যেতেন নাদনঘাটে। কিন্তু বৃহস্পতিবার, কালীপুজোর রাতে সেই ছেলের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছল গ্রামে। স্বভাবতই আনন্দের আবহ একনিমেষে বদলে গেল শোকে। মূহ্যমান হয়ে পড়ে গোটা গ্রাম। শুক্রবার সকালে সেই গ্রামে পৌঁছে সুব্রতবাবুর বন্ধু ও বন্ধুস্থানীয় মানুষজন সকলকে নিয়ে তাঁর ছবি সামনে রেখে তাঁকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানালেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। গ্রামের ছেলেটার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বাল্যবন্ধুরাও।

Advertisement

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সুস্থতা কামনায় ন’পাড়া গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন এলাকার মানুষজন। কারণ, গ্রামে এলেই সুব্রতবাবু ওই কালীমন্দিরে ছুটে যেতেন, পুজো দিতেন। গ্রামে থাকা ভিটেমাটি যেটুকু ছিল, রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে বর্তমানে তা নষ্ট হয়ে গেলেও আসাযাওয়াটা কিন্তু বরাবরই ছিল। কংগ্রেস ও তৃণমূলের (TMC) আমলে একের পর এক মন্ত্রিত্ব, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাতে হলেও তিনি নিজের গ্রামকে কোনওদিনই ভোলেননি। বন্ধুকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল সামসুল শেখ এসব কথাই মনে করছিলেন। তিনি বলেন, “সিদ্ধার্থশংকর রায় যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখনও ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছে। তখনও যেমন আসত, ঠিক তেমনই এখনও গ্রামে আসত সময় পেলেই। ন’পাড়া প্রাইমারি স্কুলেই পড়াশোনা করেছি ওর সঙ্গে। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে এখান থেকে ও বাবার সঙ্গে অন্যত্র চলে যায়। কলকাতায় গেলেই জিজ্ঞাসা করত, এলাকায় তৈরি বিখ্যাত জোড়া মণ্ডা ওর জন্য এনেছি কিনা।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: কালীপুজোর রাতে নেশার টানে চোলাইয়ে চুমুক! প্রাণ গেল সবংয়ের যুবকের]

গ্রাম সূত্রে এও জানা গেল, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বাবা অশোক কুমার মুখোপাধ্যায় নাদনঘাট রামপুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে একসময় শিক্ষকতা করতেন। কয়েক বছর আগেই মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে ন’পাড়ার মোড়ে অশোকবাবুর একটি আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করেছিলেন ছেলে সুব্রত। ছেলেবেলার দুষ্টুমি থেকে খুনসুটি – তাঁর স্মৃতি রোমন্থনে আবেগে, কান্নায় দু’চোখে জল গড়িয়ে পড়ছিল বন্ধু তিনকড়ির। বললেন, চোখে ভাল করে একসময় তিনি দেখতে পেতেন না। চোখের চিকিৎসার জন্য চার হাজার টাকা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন সুব্রত।

[আরও পড়ুন: কালীপুজোতেই বঙ্গে শীতের আমেজ, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার তাপমাত্রা নামল ১৮ ডিগ্রির নিচে]

শুধু এতেই যে সীমাবদ্ধ, তা নয়। এলাকার উন্নয়নেও তিনি নিজেকে শামিল করেছিলেন বলে জানান এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন,“এলাকার উন্নয়নে,পঞ্চায়েত দপ্তরে কোথাও কোনও কাজ আটকে গেলে সুব্রতদাকে জানাতাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই সহযোগিতা করতেন। গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে একসময় পানীয় জল পৌঁছে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছিলেন। এইরকম বহু উদাহরণ আছে।” শুধু তাই নয়, এলাকার উন্নয়নে ন’পাড়া গ্রামে থাকা নিজের জমিসম্পত্তি যা ছিল, শরিকদের সঙ্গে কথা বলে সেসব দিয়ে দেবেন বলে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে তিনি জানিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে স্বপনবাবু বলেন, “বর্ধমান টাউন হলের একটি সরকারি মিটিংয়ে সুব্রতদার কথা মতো আমি এই কথা ঘোষণাও করেছি। তাঁর নাড়ির টান ছিল বলেই এলাকার উন্নয়নে তিনি নিজেদের সম্পত্তি দান করবেন বলেও জানান।”

মন্ত্রী এদিন চোখের জলে সুব্রতবাবু সম্পর্কে জানান, “খুব বড় মাপের মানুষ ছিলেন।খেতেও যেমন ভালোবাসতেন তেমনই গল্প করতেও ভালোবাসতেন।আমাদের এলাকার ছেলে ছিলেন এটা আমাদের গর্বের।বড় অভিভাবককে হারালাম।দাদাকে হারালাম। কর্মী মানুষকে হারালাম।” সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটেতেই তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি মূর্তিও নিজের উদ্যোগে তৈরি করবেন বলে জানান মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ