ধীমান রায়, কাটোয়া: প্রাথমিক পড়ুয়াদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা পরিচালনা করার খরচ তুলতে মিড-ডে মিলের চাল বিক্রি করলেন শিক্ষকরা। এমনই অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে। এই ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলে। অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নামে ভাতার ব্লক প্রশাসন। যদিও চাল বিক্রির বিষয়টি গোপনেই রাখা হয়েছিল। কিন্তু জানাজানির পর রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছেন শিক্ষকরা। এই ঘটনায় ভাতারের এক সমবায় সমিতির নাম জড়িয়েছে। যার মাধ্যমেই স্কুলে স্কুলে মিড-ডে মিলের চাল সরকারিভাবে বণ্টন করা হয়ে থাকে, অভিযোগ ওই সমবায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া করে শিক্ষকরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
[‘লাল ফেট্টি খুলে গেরুয়া ফেট্টি পরে তাণ্ডব চালাচ্ছে ওঁরা’, জঙ্গলমহলে বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী]
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক স্কুল বিভাগে ভাতার চক্রের অন্তর্ভুক্ত স্কুল রয়েছে ৮৭টি। শিশু শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে ৩১টি। এই সমস্ত স্কুলের মিড-ডে মিলের চাল সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয় ‘ভাতার সমবায় শস্য উৎপাদন ও বিপণন সমিতি লিমিটেড’-এর মাধ্যমে। নির্দিষ্ট বরাদ্দের চাল সমবায় থেকে স্কুলগুলিতে পৌছে দেওয়া হয়৷ ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার৷
[অধ্যাপকদের ‘লুঙ্গি ডান্স’ বিতর্ক মেটাতে অবশেষে পদক্ষেপ বিশ্বভারতীর]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতার বাজারে অবস্থিত ওই সমবায় থেকে বলগোনা অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের বরাদ্দের চাল পৌঁছে দেওয়া হয়৷ বলগোনা অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র মিলে ২০টি স্কুলে মিড-ডে মিল সমবায় থেকে পৌঁছে দেওয়ার পরেই জানা জানি হয় বিষয়টি৷ যে পরিমাণ চাল স্কুলগুলিতে বরাদ্দ করা হয়েছিল, তার থেকে বেশি পরিমাণ চালের ভাউচারে শিক্ষকদের কাছে সই করিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ৷ জানা গিয়েছে, সমবায় থেকে দু’রকম ভাউচার তৈরি করে প্রতিটি স্কুলের বরাদ্দ থেকে গড়ে ২০-৩০ কেজি করে চাল কম দেওয়া হয়। দু’একজন শিক্ষকের মাধ্যমে এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে৷
[দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ৩ সন্তানের মাকে বিয়ে প্রেমিকের]
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলগোনা পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে অভিযোগ পৌঁছায়। বলগোনা পঞ্চায়েত প্রধান আমজাদ শেখ বলেন, ‘‘স্থানীয়দের কাছে অভিযোগ পেয়ে অঞ্চলের কয়েকটি স্কুলে আমরা যাই৷ সেখানে গিয়ে জানতে পারি অভিযোগ সত্য। এবিষয়ে আমি ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছি।” বলগোনা দক্ষিণপাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুদীপ কুমার দে এদিন পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের কাছে স্বীকার করে নেন, তাঁর স্কুলের জন্য দু’মাসের মোট বরাদ্দ ২ কুইন্টাল ৯২ কেজির মধ্যে ২ কুইন্টাল ৬৭ কেজি চাল নিয়ে ভাউচারে সই করেন। সুদীপবাবু বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে স্কুলের যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়েছিল, তার খরচ তুলতেই শিক্ষকরা আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷’’ সুদীপবাবুর সাফাই, ‘‘সরকার থেকে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার যে খরচ দেয় তা সামান্য। এভাবেই বছর বছর খরচ সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বলগোনা অঞ্চল থেকে এধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর বুধবার বিডিও সমবায় অফিসে তদন্তে পাঠান যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিককে। ভাতারের ওই সমবায়ের ম্যানেজার নির্মল সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি যেহেতু প্রশাসন তদন্ত করছে, তাই এনিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” ভাতারের বিডিও শুভ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে।”
ছবি: জয়ন্ত দাস