টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: বাঁকুড়ার মৃৎশিল্পীদের জন্য সুখবর! এবার বিশ্বের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে বাঁকুড়ার টেরাকোটা শিল্প। সৌজন্যে অনলাইন পরিষেবা। বেশকিছু দিন হল জেলার পাঁচমুড়ার পোড়ামাটির শিল্পসামগ্রী জিআই ইন্ডেক্সে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে। এহেন সাফল্যের পর এবার নিজেদের শিল্পকর্ম বিশ্বের বাজারে তুলে ধরতে চান শিল্পীরা। একমাত্র অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা হলেই তা সম্ভব। তাই টেরাকোটা শিল্পকে অনলাইনে বিপণনের তোরজোর শুরু করেছেন শিল্পীরা। শিল্পীদের দাবি, বাঁকুড়া থেকে যদি শিল্পীরা এই কাজ করে উঠতে পারেন, তাহলে তাঁদের শিল্পকর্ম কেউ নকল করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, হাতের কারিকুরিতে মাটি যে অনবদ্য শিল্পকর্মের রূপ নেয়, বিদেশের মানুষের কাছে তা প্রায় অজানাই রয়ে গিয়েছে। এবার বাঁকুড়ার এই অনবদ্য শিলকর্ম সম্পর্কে বহির্বিশ্ব জানুক, এমনটাই চাইছেন এখানকার মৃৎশিল্পীরা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় ধনেখালি ও শান্তিপুরের তাঁত বিশ্বমানের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। অনেকদিন হল বিষ্ণুপুরের বালুচরী শাড়িও সেই তালিকায় ঢুকে পড়েছে। এবার বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের পাঁচমুড়ার মৃৎশিল্পীদের শিল্পকর্ম এসেছে এই পেটেন্টের আওতায়। যার পোশাকি নাম ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ বা (জিআই) ইন্ডেক্স। জিআই ইন্ডেক্স আন্তর্জাতিক স্তরের স্বীকৃতি। ফলে এই শিল্পকর্মের চাহিদা বাড়বে বিদেশে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও বিকোবে বাঁকুড়ার জনপ্রিয় টেরাকোটার ঘোড়া। আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি যখন মিলেছে তখন শিল্পকর্ম অনলাইনে বিপণনের ব্যবস্থা হলে সুদিনের মুখ দেখবেন শিল্পীরা।
[শিশুকন্যাকে মারধরের প্রতিবাদের মাশুল, সালিশি সভায় আক্রান্ত বৃদ্ধ]
স্বভাবতই খুশি মৃৎশিল্পী ব্রজনাথ কুম্ভকার, সুমন্ত কুম্ভকাররা। বলা বাহুল্য, পাঁচমুড়ার মাটির তৈরি লম্বা গলার ঘোড়ার খ্যাতি রয়েছে জগৎজুড়ে। ইতিহাস বলছে একসময় মূলত গাজন, ধর্মঠাকুর, শিব, মনসাপুজো-সহ বিভিন্ন লৌকিক দেবদেবীর পুজোয় পোড়ামাটির হাতি ঘোড়া দেওয়া হত। সেই থেকে তৈরি টেরাকোটা শিল্পের জন্ম। পরবর্তিতে নিজেদের শিল্পকর্মকে যুগোপযোগী করতে শিল্পীরা বাজারে নিয়ে এসেছেন টাইলস, পোড়ামাটির গয়না-সহ রকমারি সামগ্রী। পেটেন্ট পাওয়ার পর খুশির হাওয়া বইছে শিল্পগ্রাম পাঁচমুড়ায়। তবে শিল্পীদের অভিযোগ, এতদিন এই শিল্পগ্রাম থেকে স্বল্পমূল্যে তাঁদের শিল্পকর্ম কিনে নিত ফড়েরা। পরে তা মোটা টাকার বিনিময়ে বিদেশের বাজারে রপ্তানি হত। ফড়ের ঘরে মুনাফা এলেও কুম্ভকারের ঘরে কুপিই জ্বলত। অনলাইনে বিপণন শুরু হলে শিল্পীরা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টির ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। এমনটাই আশা তাঁদের।