Advertisement
Advertisement

বাঁদনা পরবে ‘গরুর বিয়ে’তে মাতলেন বাঁকুড়াবাসী

শতাব্দীকাল ধরে এভাবেই পালিত হয় গ্রামবাংলার এই লোকাচার৷

The custom of cow marriage in Bankura
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:November 1, 2016 11:46 am
  • Updated:November 1, 2016 11:46 am

নিজস্ব সংবাদদাতা, খাতড়া: পাত্র-পাত্রী তৈরি৷ নির্দিষ্ট সময়ে লোকাচার মেনেই হল বিয়ে৷ তবে মানুষের নয় গরুর৷ না, কোনও কুসংস্কার নয়, এই বিয়ের কারণ বহু বছর ধরে পালিত হয়ে আসা এক লোকউৎসব৷ ‘বাঁদনা পরব’৷ তারই প্রাধান অঙ্গ ‘গরুর বিয়ে’৷

প্রতি বছরই ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার আগের দিন লোকসংস্কৃতির অঙ্গ হিসাবে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়৷ সোমবার ‘গরুর বিয়ে’ উপলক্ষে গরুকে ছোপানো হল বিভিন্ন রঙে৷ সাজিয়ে তোলা হল নানাভাবে৷ কোথাও আবার গরুর পায়ে ঘুঙুর পরিয়ে, কোথাও আবার গরুর মাথায় রঙিন ফিতে বেঁধে সাজিয়ে তোলা হল৷ হীড়বাঁধের বনকাটা গ্রামের শিবদাস বাউরি, ভোজদা গ্রামের লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল বলেন, “বছরের পর বছর ধরে এই উৎসব গ্রামে পালিত হয়ে আসছে৷ এর সঙ্গে বেশ কিছু লোকাচারও জড়িয়ে আসছে৷ আমরা ছোটবেলা থেকেই তা একই রকমভাবে দেখে আসছি৷”

Advertisement

প্রযুক্তির দুনিয়ায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উৎসবের রকমফের ঘটলেও গ্রামবাংলার প্রাচীন লোকাচার হিসাবে এই অনুষ্ঠানটির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি৷ শতাব্দীকাল ধরে এই নিয়মে অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন স্থানীয় মানুষজন৷ তবে গরুকে যে ভাবেই সাজিয়ে তোলা হোক না কেন, ধান দিয়ে একটি বিশেষ মুকুট তৈরি করা এদিন বাধ্যতামূলক৷ একে ‘মোড়’ বলা হয়৷ জমি থেকে কতকগুলি পাকা ধানের শিষ এনে তা দিয়ে সুদৃশ্য ‘মোড়’ তৈরি করা হয়৷ পরে সেটি গরুর মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয়৷

Advertisement

বিশেষত সন্ধের সময় এই অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়৷ কারণ, সকাল থেকেই বাড়ির মূল দরজা থেকে গোয়ালঘর পর্যন্ত আলপনা দিয়ে রাখেন বাড়ির বউ-মেয়েরা৷ এর পর দুয়ারে কিছু ঘাস দিয়ে রাখা হয়৷ সন্ধের সময় গরুর দল মাঠ থেকে ঘরে ফিরে এলে প্রথমে তাকে রং দিয়ে সারা গায়ে ছাপ দেওয়া হয়৷ তার পর সেই ঘাস খেয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে৷ সন্ধের সময় গোবর দিয়ে একটি যমরাজের কাল্পনিক মূর্তি তৈরি করে দুয়ারে রাখা হয়৷ তার উপর একটি প্রদীপ জ্বেলে দেওয়া হয়৷ সেই প্রদীপের উপর পা দিয়ে আগুন নিভিয়ে গোয়ালঘরে ঢোকে গরুর দল৷ এর পর বিভিন্ন ভাবে বন্দনা করা হয়৷ তাই ‘বন্দনা’ শব্দ থেকেও এই উৎসবের নামকরণ হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেছেন৷

বাঁকুড়া জেলার ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি গবেষক অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটি গ্রামবাংলার একটি অতি প্রাচীন লোকউৎসব৷ গবাদি পশু হিসাবে গরু আলাদা গুরুত্ব দিতেই এই অনুষ্ঠানের প্রচলন তৎকালীন সময়ে হয়েছিল৷ আজও একইভাবে সমান গুরুত্বের সঙ্গে তা পালিত হয়ে আসছে৷”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ