Advertisement
Advertisement

Breaking News

সুতোয় বাঁধা জীবন, রুজির টানে বাংলায় ফিরে আসে মধ্যপ্রদেশের নাট পরিবার  

বাংলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নাড়ির টান।

they have a dengorus life but still they love bengal
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:February 25, 2018 7:47 pm
  • Updated:February 25, 2018 7:47 pm

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালবাগ: এরকম বহু দলকেই আমরা রাস্তাঘাটে প্রায়ই দেখতে পাই। কিন্তু জানি কী কীভাবে চলে এদের জীবন? বা কোথা থেকে আসে এরা? আসুন জেনে নেওয়া যাক এমনই এক পরিবারের গল্প, যাদের গোটা জীবনটাই সুতোর টানে বাঁধা। তবু জীবনের ঝুঁকি নিতে বারবার এরাই ফিরে আসেন বাংলায়।

এক পা এদিক-ওদিক হলেই সাক্ষাৎ মৃত্যু। কিন্তু তাতেও নির্ভয় ওঁরা। মানুষের মনোরঞ্জনের করেই পেট চলে ওঁদের। ‘ওঁরা’ মধ্যপ্রদেশের নাট পরিবার। প্রতি বছর শীতকালে সপরিবারে বাংলায় আসে। এই দু’মাসেই তাঁদের অর্থ উপার্জনের সময়। দিনভোর ব্যালান্স আর ট্রাপিজে খেলা দেখিয়ে দিন গুজরান।

Advertisement

[ছেলের জন্মদিনে মহাভোজ অনাথ আশ্রমে, পাত পেড়ে খাওয়ালেন কাটোয়ার ব্যবসায়ী]

Advertisement

শীত পড়লেই সুদূর মধ্যপ্রদেশের রাইগড় থেকে সপরিবারে হাজির হন এই রাজ্যে। বাংলাও তাদের খালি হাতে ফেরায় না। এখানকার উপার্জনেই চলে জীবিকা। ছেলে মেয়ের পড়াশোনাও। তাই বাপ-ঠাকুরদার হাত ধরে চেনা বাংলায় প্রতিবছরই শীতে হাজির হন নাট পরিবার। এবারে তাঁদের ঘাঁটি বহরমপুর। তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মাস চারেক আগে তুফান নাট ও তাঁর স্ত্রী জুলি নাট একটি ভাড়া বাড়িতে আস্তানা গেড়েছেন বহরমপুর খাগড়া ঘাট এলাকায়। সেখান থেকে জেলার জঙ্গিপুর, লালগোলা, জিয়াগঞ্জ, নবাব নগরী লালবাগের জনবহুল এলাকা থেকে গঞ্জ এলাকায় শুরু করছেন ব্যালেন্সের তাক লাগানো খেলা। প্রথমে তুফান নাট মধ্যপ্রদেশের ঢাকের বোল তুলতেই পথ চলতি মানুষ জড়ো হচ্ছেন। তারপরেই তুফানের স্ত্রী জুলি ধরছেন আঞ্চলিক গীত, তাতেই জমজমাট এলাকা। রাজপথ খানিকক্ষণের জন্যে যেন পরিণত হচ্ছে মনোরঞ্জনের ময়দানে। এরপরই আসল খেলা। ভিড় জমানো জনতার ধার ঘেঁষে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে টান টান করে টাঙানো হচ্ছে দড়ি। সেই দড়িতে চড়েই পেল্লাই সাইজের একটি লাঠি নিয়ে খেলা দেখাচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী কিশোরী নাট। ঘণ্টা খানেক নেচে গেয়ে দড়ির এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তে অবলীলায় ব্যালান্সের দক্ষতায় মাত করে দিচ্ছে জনতাকে। কখনও এক পায়ে ভর দিয়ে তো কখনও মাথায় ফুলদানি নিয়ে হাওয়ায় চপ্পলে ভর দিয়ে হেঁটে চলেছে কিশোরী। তাঁদের খেলায় মোহমুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে বাংলার মানুষ। তাই সাধ্য মত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন নতুন প্রজন্ম থেকে প্রবীণ নাগরিকরাও।

চতুর্থ শ্রেণীর কিশোরী যখন ব্যালেন্সে ব্যস্ত তখন দ্বিতীয় শ্রেণির অনুষ্কা নাট ও তার চার বছরের ভাই বিজয় নাট রিং এর ফাঁস থেকে শরীরী কসরত দেখিয়ে বাজিমাত করে চলেছে। এই বিষয়ে ওদের মা জুলিদেবী বলেন, ‘এখান থেকে যা রোজগার করি তা দিয়ে সারা বছর সংসার চলে, সেই সঙ্গে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচও। বাংলার মানুষ আমাদের দু’হাত উজাড় করে সাহায্য করেন।’ তবে শুধু পেটের টানেই নয়, বাংলার সঙ্গে নাড়ির যোগও রয়েছে এই নাট পরিবারের। খেলা দেখাতে এসেই কান্দি মহকুমার সালার থানার তালিবপুরে জন্ম দিয়েছিলেন তুফানের। তুফান বাংলায় গড় গড় করে বলেন, ‘বাংলার মানুষ আমার আত্মীয়। বাংলা কে আমি ভালবাসি। এখান থেকেই আমার জীবিকা চলে।’ পড়াশোনার কারনেই যে এবার বড় ছেলে অর্পণ কে সঙ্গে আনতে পারেননি সে কথাও বলেন তুফান।

ব্যালেন্সের দড়ি থেকে নেয়ে ঘাম মুছতে মুছতে ছোট্ট কিশোরী সহজ সরল মনে বলে ওঠে, ‘ আমি বাংলা জানি, ইংরেজিও জানি। স্কুলে যাই, আবার খেলাও দেখাই। আমার খেলা তোমাদের ভাল লেগেছে তো?’ ততক্ষণে ব্যালেন্সের দড়ি ছেড়ে সবাই ঘিরে ধরেছে ছোট্ট কিশোরীকে। তাঁদের আদরে ভাসছে সে।

[বাড়িতে মূর্তিমান ঝামেলা! ছয় শিয়াল ছানার ভয়ে কাঁটা ক্রাইম ব্রাঞ্চের দুঁদে অফিসার]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ