৭ আশ্বিন  ১৪৩০  সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

প্রিয়জনের স্মৃতিতে বৃক্ষশিশু রোপণ, পরিবেশ সচেতনতায় পথ দেখাচ্ছেন ‘গাছমাস্টার’

Published by: Subhamay Mandal |    Posted: November 15, 2018 12:10 pm|    Updated: November 15, 2018 12:10 pm

This Teacher encourage to Plant sapling

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিতে অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পূর্ব বর্ধমানে। প্রিয়জনের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ। কেউ পিতা-মাতাকে হারালে গাছের মধ্য দিয়েই যেন তাঁদের ফিরে পেতে চাইছেন। গাছের মধ্যেই খুঁজে নিচ্ছেন, আঁকড়ে ধরছেন স্বজনের স্মৃতিকে।

অতীতে এই ধরনের একটা প্রথা ছিল। খ্রিস্টান বা অন্য সম্প্রদায়ের কেউ মারা যাওয়ার পর কবরস্থানের উপর একটি বৃক্ষশিশু রোপণ করা হত মৃতের স্মৃতিতে। কিন্তু সমাজের সর্বস্তরে তা দেখা যেত না। বর্তমানে সেই প্রথাই ফিরিয়ে এনেছেন একদল পরিবেশপ্রেমী। ধর্মের বেড়াজাল টপকে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রিয়জনের স্মৃতিতে বৃক্ষশিশু রোপণ করাতে উৎসাহিত করছেন তাঁরা। আর নীরবে সেই সচেতনতার কাজটা করে চলেছেন ‘গাছমাস্টার’। পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট রামপুরিয়া হাই স্কুলের শিক্ষক অরূপকুমার চৌধুরি। এক ডাকে সকলেই তাঁকে চেনে ‘গাছমাস্টার’ নামে।

[জীবিকা খোয়ানো ৭০০ ধীবর পরিবারের পাশে দাঁড়াল জেলা মৎস্য দপ্তর]

তিনি নিজের বাড়িতে তো বটেই পরিচিতদের, সহকর্মীদের সকলকেই প্রিয়জনের স্মৃতিতে গাছ লাগাতে পরামর্শ দেন। এমনকী বৃক্ষশিশু তাঁদের বাড়িতে পাঠিয়েও দেন। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা বর্তমান সদস্য বাগবুল ইসলামের কয়েকমাস আগে মাতৃবিয়োগ ঘটে। তিনি মায়ের কবরস্থানে গাছের চারা রোপণ করেছেন। তিনিও অন্যদের এইভাবে প্রিয়জনের স্মৃতিতে গাছ লাগাতে উৎসাহিতও করছেন। মেমারির বেগুটের বাসিন্দা উজ্জ্বল দে। তাঁর মাতৃবিয়োগের পর তিনিও মায়ের স্মৃতিতে গাছের চারা রোপণ করেছেন। পরম যত্নে বড় করছেন সেই গাছ। বর্ধমানের ব্যবসায়ী স্বপন সামন্ত। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক অরূপবাবু জানান, স্বপনবাবুর পিতৃবিয়োগের পর তিনি মেহগনি গাছের চারা নিয়ে গিয়েছিলেন। বাবার স্মৃতিতে সেই গাছ বড় করছেন স্বপনবাবু।

পড়ুয়াদের বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করছেন ‘গাছমাস্টার’ শিক্ষক অরূপকুমার চৌধুরি।

বুধবারও কাটোয়ার মঙ্গলকোটের কুন্দা গ্রামের মমতারানি মণ্ডল কয়েকদিন আগে মারা যান। বুধবার ছিল তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। মমতাদেবীর বড়জামাই সুখেন্দু মণ্ডল অরূপবাবুর স্কুলেই চাকরি করেন। এদিন শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে মমতাদেবীর স্মৃতিতে ছেলে তরুণবাবু, মেয়ে শম্পা ও রূপাদেবীরা গৃহদেবতার মন্দির প্রাঙ্গণে স্বর্ণচাঁপা গাছের চারা রোপণ করেছেন। ওই গাছকেই যেন মা রূপে পেতে চাইছেন তাঁরা। আরও অনেক এমন উদাহরণ তৈরি হয়েছে জেলায়। অরূপবাবু বলেন, “প্রিয়জন হারিয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। এটা সত্যিই। বাবা-মা বা পরিবারের প্রিয়জনের স্মৃতিকে গাছের মধ্যে দিয়েই পাবেন পরিবারের লোকজন। গাছ যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিনই স্মৃতিও চিরসবুজ হয়েই থাকবে।” পরিবেশ রক্ষায় আরও বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু হয়েছে অরূপবাবুর উদ্যোগে। স্কুলের কৃতীদের পুরস্কৃত বা সম্মানিত করতে জেলার বিভিন্ন স্কুলে বৃক্ষশিশু উপহার দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়েছে। জন্মদিনে বৃক্ষশিশু উপহার ও চারারোপণ করার রীতি চালু করেছেন পড়ুয়াদের মধ্যে। প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা ভুলতেও এবার বৃক্ষশিশুকে লালন-পালনের রীতি চালু করেছেন তিনি। বহু মানুষ এগিয়েও এসেছেন এই পথে।

[প্রাইভেট টিউটরের পড়া পারেনি, বাবার ভয়েই পালাল কিশোর]

 

ছবি: মুকুলেসুর রহমান

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে