বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: গাছ, নৌকার পর এবার জঙ্গলের মধ্যে তাঁবু খাটিয়ে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’-এ থাকার নিদর্শন রাখলেন ওড়িশা ফেরত নদিয়ার তিন যুবক। জনবসতি এলাকা থেকে বেশ কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে নিজেরাই জঙ্গলের মধ্যে তাঁবু খাটিয়ে গত তিনদিন ধরে রয়েছেন তাঁরা। দূর থেকেই তাঁরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করছেন, নিরাপদ দূরত্ব থেকে খাবারের থালা দেওয়ানেওয়া করছেন। তথাকথিত শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয়েও ওই তিন যুবকের সচেতনতা কার্যত দৃষ্টান্ত। যদিও বিডিও-র তৎপরতায় তাঁদের আজ থেকে নিজেদের বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
নদিয়ার রানাঘাট ২ ব্লকের রঘুনাথপুর-হিজুলি দু’নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এঁদের বাড়ি। তিনজনই কাঠের কাজ করেনl বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাঠের কাজ করাই এঁদের পেশা। কাজের তাগিদে প্রায় দেড় মাস আগে গিয়েছিলেন ওড়িশায়। বাড়িতে ফেরার ভাবনাচিন্তার মধ্যেই লকডাউন ঘোষণা। চিন্তায় পড়লেন তিনজন। সুজিত মণ্ডল নামে এক কারিগর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, “ওড়িশার সুন্দরগড়ের আকমা থেকে আমরা ফেরার চিন্তাভাবনা করছিলাম। ওখানে খাওয়াদাওয়ার খুব অসুবিধা হচ্ছিল। দোকানে চাল, ডাল পাচ্ছিলাম না। আমাদের কাছে টাকা ছিল, কিন্তু ছিল না খাবার। তাই যেভাবেই হোক, বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। আমরা ওখান থেকে তিনজন তিনটে সাইকেল কিন। সাইকেল চালিয়েই বাড়ি ফেরা শুরু করি।”
[আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের মন ভাল রাখার দাওয়াই, টেলি কাউন্সেলিং করাচ্ছে প্রশাসন]
ফেরার পথে ঝাড়খণ্ড এলাকায় অবশ্য তাঁরা বিএসএফের সাহায্য পান। জওয়ানরা তাঁদের খাবার দেন। তিনজনকে একটি গাড়িতে ওঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েন। তাঁরা সাইকেল নিয়েই গাড়ি চড়ে খড়গপুর পর্যন্ত পৌঁছন। এরপর খড়গপুর থেকে সোজা সাইকেল চালিয়ে রঘুনাথপুর হয়ে ঠিক তিনদিনের মাথায় পৌঁছে যান তাঁদের বাড়ির এলাকায়। কিন্তু বাড়িতে প্রবেশ করেননি। কেন? সুজিতবাবুর কথায়, “আমরা তো জানি না, আমাদের কিছু হয়েছে কি নাl তবে ওইখানে আমরা ডাক্তারের চেকআপ করিয়ে ছিলাম। পরীক্ষার রিপোর্ট আমাদের সঙ্গেই রয়েছে। তারপর এখানে এসে বাড়িতে না গিয়ে বাড়ির ও গ্রামের লোকজনের কথা ভেবে জনবসতি এলাকা থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিই। এই জঙ্গলের মধ্যে তাঁবু খাটিয়ে আমরা থাকতে শুরু করেছি। যদিও আমাদের দেখতে এসে এখানকার আশা কর্মী জানিয়ে গিয়েছেন, আমাদের শরীর ভাল আছে। তবু উনি আমাদের এখানে এইভাবে ১৪ দিন থাকার পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন। তাতে যদি গ্রামের লোকজনের ভাল হয়, তাহলে তো ভালই। কারণ, আমরা তো জানি না, আমাদের শরীরের মধ্যে কী লুকিয়ে আছে। আমরা সরকারি নির্দেশমতো সব নিয়ম মেনে চলছি।”
[আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত নিজামুদ্দিন ফেরত কর্মী, আতঙ্কে কাজ বন্ধ হলদিয়া বন্দরে]
এঁদের এভাবে থাকার খবর স্থানীয় সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক খোকন বর্মনের কানে পৌঁছনোর পর তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, ওঁদের ব্যবস্থা করে দেবেন। সেইমতো তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। করোনা আক্রান্ত হওয়ার কোনও চিহ্নই মেলেনি। তাই আজ বিডিও জানান, “ওঁদের মধ্যে অসুস্থতার কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি। বর্তমানে তিনজনকে বাড়িতেই হোম কোয়ারেন্টাইনেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”