চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ষাঁড়ের শ্রাদ্ধ করলেন তৃণমূলের কাউন্সিলর। অভাবনীয় ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলের রাধানগর রোড নিচুপাড়া এলাকায়। ওই তৃণমূল নেতার নাম কল্যাণ দাশগুপ্ত। তিনি আসানসোল পুরনিগমের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। শুধু শ্রাদ্ধের আয়োজনই দায়িত্ব শেষ নয়, রীতিমতো প্রধান পুরোহিতের ভূমিকায় দেখা গেল তাঁকে। হোম-যজ্ঞ, ফল-মূল, বৈদিক উচ্চারণ সমৃদ্ধ শ্রাদ্ধবাসর। ধুতি পরে গলায় নামাবলী জড়িয়েই বসলেন শ্রাদ্ধে। শুরু হল মন্ত্রোচ্চারণ। শ্রাদ্ধ-শান্তি মেটার পর নিজের হাতে নরনারায়ণ সেবা করলেন। পরিবেশন করে খাওয়ালেন শিশুদের। এই অভিনব ঘটনার সাক্ষী থাকল আসানসোলের সংশ্লিষ্ট এলাকা।
গত ১০-১২ বছর ধরে নিচুপাড়া এলাকায় একটি ষাঁড় ঘুড়ে বেড়াত। বাড়ি বাড়ি যেত। কিন্তু কাউকে বিরক্ত করত না। কেউ বলতেন ভোলা কেউ বা নন্দী। স্বয়ং শিবের বাহন। এলাকার মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিল ভোলা। দিন ১৫ আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। অসুস্থ অবস্থাতেই তিন চারদিন পড়ে ছিল। এলাকার বাসিন্দারা নানাভাবে সেবা করে ভোলাকে সুস্থ করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। শিবরাত্রির দিন ভোলার মৃত্যু হয়। সোমবার শিবের বার। এই বিশেষ দিনে ভোলার শ্রাদ্ধের নিদান দেন এলাকার পুরোহিত। সেইমতো ষাঁড়টির শ্রাদ্ধশান্তি করা হল নিচুপাড়ায়। ভোলা যেহেতু ভোলে বাবার বাহন, তাই তার আত্মার শান্তি কামনায় হল পুজো ও যাগযজ্ঞ। কল্যাণবাবু নিজেই পুরোহিতের সঙ্গে ব্রতী হিসেবে বসলেন। সবশেষে ছিল নরনারায়ণ সেবা। খিচুড়ি, সবজি, চাটনি খাওয়ানো হয় প্রায় হাজারজনকে। শ্রাদ্ধশান্তির পর সন্ধ্যায় মন্দিরে শিবকথা গাওয়ার আয়োজন হয়। স্থানীয় মহিলারাই গাইলেন সেই গান।
শাস্ত্রমতে শ্রাদ্ধবাসরের সঙ্গে ষাঁড়ের যোগাযোগ পাওয়া যায়। কারণ শ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণকে ষাঁড় দানের রেওয়াজ রয়েছে সমাজে। যাকে ধর্মের ষাঁড় বা বিসতস্বর্গ বলা হয়। পিতৃপুরুষকে তুষ্ট করতে এই রীতি রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। এবার সেই ষাঁড়েরই কিনা শ্রাদ্ধ হল। শ্রাদ্ধ করলেন তৃণমূল কাউন্সিলর। খবর শুনে বিরোধীদের কটাক্ষ, টাকাপয়সা বেশি হলে ভূতের বাপেরও শ্রাদ্ধ হয়, ষাঁড় তো কোন ছাড়!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.