ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বঙ্গে দলের বিজয় কেতন ওড়াতে রথযাত্রা বের করতে চায় বিজেপি। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক রয়েছে, পুজোর পর একে একে তিনটি রথযাত্রা হওয়ার কথা। থাকতে পারেন অমিত শাহও। কিন্তু পুজোর একমাস আগেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে বাংলার আবেগ মিশিয়ে প্রচারে নেমে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস।
[মঙ্গলবারও রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি পেট্রল-ডিজেলের, মধ্যবিত্তের পকেটে টান]
সভা-সমিতিতে দাঁড়িয়ে দলীয় প্রচারে শাসকদলকে বলতে শোনা যাচ্ছে, জনগণের রথে সওয়ার হয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের উন্নয়নে কাজ শুরু করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুপরিকল্পিতভাবেই ভোটের প্রচারে ‘রথ’ শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করেছেন তৃণমূলের মাঝারি থেকে ছোট নেতারা। একই পথে রাজ্যস্তরের নেতারাও। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, ইচ্ছাকৃতভাবেই এই পথে গিয়েছেন তাঁরা। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব হচ্ছে। প্রচারে ধর্মের কথা বলে বিজেপিকে যেমন ঠেকানো যাচ্ছে। পাল্টা আক্রমণ শানানো যাচ্ছে। সঙ্গে দলীয় কর্মীদেরও সহজে সতর্ক করে দেওয়া যাচ্ছে। এক রাজ্যনেতার কথায়, “প্রচারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নতুন কথার কদর সবসময়েই বেশি। তা ছাড়া মানুষের কাছে একটু মনোগ্রাহী করে বক্তব্য বিষয় তুলে ধরলে তাতে সমর্থনও বেশি মেলে। বিজেপি যখন ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগি করতে চাইছে, রথ নিয়ে বাংলায় প্রচারে নামতে চাইছে, তখন সেই অস্ত্রেই তাদের বধ করতে হবে।”
প্রচারে ঠিক কী বলছে তৃণমূল? জানুয়ারিতে তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ। নভেম্বর থেকে তার জন্য প্রচারে নামার কথা রাজ্যের শাসক দলের। কিন্তু ধর্মকে ভিত্তি করে এমন প্রচারে পুজোর মরশুমের আবহ হাতছাড়া করতে চাইছে না তৃণমূল কংগ্রেস। বাঁকুড়া জেলা সূত্রে খবর, সম্প্রতি সেখানে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি কর্মিসভায় দাঁড়িয়ে পুরীর জগন্নাথের প্রসঙ্গ টেনে এই রথযাত্রার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, “পুরীর মন্দিরে হিন্দু বিনা প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু ভগবান তো সকলের। তিনি ঠিক করলেন মহন্তদের ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি সব ধর্ম, সব সম্প্রদায়ের মানুষের আর্জি শুনবেন নিজে রাস্তায় বেরিয়ে। জনগণের মধ্যে মিশে। মাসির বাড়ি যাওয়ার অছিলায় রথযাত্রায় সেই কাজই তিনি প্রতি বছর করেন।” এর পরই রাজ্য সভাপতি বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “জনগণ তাঁদের ভোটে জয়ী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নবান্নের রথে চড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি এখন রাজ্যের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন।” আর তাতেই তুমুল হাততালি পড়ে সভায়।
[টানা ১০দিন অনশন, ‘মৃত্যুভয়ে’ সম্পত্তির দানপত্র ঘোষণা হার্দিক প্যাটেলের]
জগন্নাথই শুধু নন, দক্ষিণের এক সভায় দাঁড়িয়ে সম্প্রতি কেদারনাথের শিবের উদাহরণও টেনেছেন আরেক রাজ্যস্তরের নেতা। সেই সভার আবার মূল উদ্দেশ্য ছিল অশান্তি এড়িয়ে কর্মীদের নির্লোভ সংঘবদ্ধ হওয়ার বার্তা দেওয়া। সেখানে ওই রাজ্যনেতা একেবারে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলেছেন, “উত্তরাখণ্ডে প্রবল দুর্যোগের সময় অলৌকিকভাবে অক্ষত রয়ে যায় মূল মন্দিরটি। এমনকী, আশ্চর্যভাবে বেঁচে যান মন্দিরের মহন্ত। তিনি ওই মন্দিরের ঘণ্টা ধরে ঝুলে ছিলেন দীর্ঘক্ষণ।” এরপরই ওই নেতার বক্তব্য, “যে দল আর তার নেত্রীকে দেখে এসেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সবসময় ধরে থাকতে হবে। তবেই যে কোনও দুর্যোগে, যে কোনও বিপদে, দলের যে কোনও সমস্যায় রক্ষা পাবেন।” তাতেই তুমুল হাততালি। দলের ওই শীর্ষ নেতা বলছেন, “এতে কাজের কাজই হচ্ছে। কর্মীদের নতুন কথার মধ্যে দিয়ে বার্তা দেওয়ার কাজটা হয়ে যাচ্ছে।”