সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্যান্ডেল সামলাতে পারে না বাংলা দখলের হুঙ্কার দিচ্ছে বিজেপি। এতদিন মনে পড়েনি। সাড়ে চার বছর পর হঠাৎ করে কৃষকদরদী হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলার কৃষকদের কথা ভাবতে হবে না। বাংলার কৃষকদের পাশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন। মেদিনীপুরের কলেজ মাঠ থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে পালটা আক্রমণ শানালেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বুধবার তৃণমূল কংগ্রেসের সভামঞ্চ থেকেই বিজেপি বিরোধী আওয়াজ উঠল। পাশাপাশি ২০১৯-এ দিল্লি দখলের প্রসঙ্গও চলে এল। শুধু বাংলায় নয় দেশবাসীরও কন্যাশ্রীর প্রয়োজন রয়েছে। তাই দেশের মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প কেউ নেই। বিজেপি তো চার বছরে শুধু বিভাজনের রাজনীতি করেছে। বাংলাতেও তার ছাপ ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি’। এই মাটিকে অশান্ত করতে দেওয়া যাবে না। বিজেপি হঠাতে বাংলার মানুষ পথে নামবে। এখন থেকে তৃণমূলের নতুন কাজ হল, বিজেপি হটাও সিন্ডিকেট তৈরি করা। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে নিশ্চিহ্ন করতে এভাবেই বঙ্গবাসীকে আহ্বান জানালেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেইসঙ্গে উঠল বিজেপিকে ভারত ছাড়া করার ডাক।
[কুয়োর মধ্যে উঁকি দিচ্ছে বিষধর গোখরো, ভয়ে কাঁটা গৃহবধূ]
এই সমাবেশেই বিজেপিকে পরিযায়ী পাখি বললেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘কলেজমাঠে ভাষণ দিয়ে ভুল বুঝিয়ে মেদিনীপুরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করা যায় না। বিভাজনের রাজনীতি করা বিজেপি একটি মিথ্যেবাদী দাঙ্গাবাজ দল। নিজেরা তো একটা সভা করতে ভিনরাজ্য থেকে টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করে এনেছে। তাই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বড় বড় কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ডিকেট চালান। বিজেপিকে জানিয়ে দিতে চাই সিন্ডিকেট করে তৃণমূলকে ভোটে জিততে হয় না। সেজন্য কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজসাথী আছে। বিজেপি সভা করতে লোকভাড়া করে নিয়ে এসেছে। এদিনের সভায় একুশের সভায় মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে ভালবেসে এসেছে। তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করে বলে এসেছে। টাকা দিতে হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রীর আচ্ছে দিন নিয়ে কটাক্ষ করেন পুরও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘বিজেপি শুধু রথ, তরোয়াল ও আচ্ছে দিনের কথা বলে। চারবছরে আচ্ছে দিন করে দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি বিজেপির সরকার। সাড়ে চার বছর পরে যখন লোকসভার আর ছ’মাস বাকি। তখন আচমকাই কৃষকদরদী হয়ে পড়লেন প্রধামন্ত্রী। তিনি বুঝে গিয়েছেন এবার কৃষকের প্রতি দরদ না দেখালে আর ভোটে জেতা যাবে না। তাই বাংলায় এসে কৃষকের প্রতি দরদ দেখাচ্ছেন। বাংলার কৃষককে দেখতে হবে না। তাঁদের দেখার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন। ২৯টি রাজ্যের কৃষককে দেখুন। মহারাষ্ট্রে ১২০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। মধ্যপ্রদেশে, রাজস্থানে আড়াই হাজার কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন। কেন্দ্রের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন কৃষকরা। আর তিনি বাংলায় এসে কৃষকদরদী হয়েছেন। বাংলায় সাত বছরেই কৃষকদের ৯৭ হাজার টাকা বার্ষিক আয় বেড়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকা হয়েছে। এখন সিন্ডিকেটের কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। যখন জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষের অবস্থা সঙ্গীন। তখন বিজেপি ঘুমিয়েছিল। যখন নেতাই, নন্দীগ্রামে সিপিএমের অত্যাচারে মানুষ মরছে তখন বিজেপির খেয়াল ছিল না। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যা যা মানুষের জরুরি তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দিয়েছেন। বিজেপি কী করেছে, আচ্ছে দিনের নামে নোটবন্দি ও জিএসটি করে মানুষের ক্ষতি। কৃষক মেরে কৃষক প্রেম বিজেপি শেম শেম। এই বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে ভোট কাড়তে পারবে না। শত্রু এলে বাংলার ছেলেরা অস্ত্র হাতে ধরতে জানে। প্রতিবাদ করতে জানে। বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ আমরা নিশ্চিত পাব। আর জুমলা পার্টি বিজেপি পাবে বিগ-জিরো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে ভয় পান। আর প্রধানমন্ত্রীকে ভয় পায় ভারতবাসী। নরেন্দ্র মোদি দেশের গব্বর সিং। তাই দেশ বাঁচাতে গব্বর সিংকে হটাতেই হবে।’
[একসঙ্গে মিছিল করলেন মোদি-মমতা-অনুব্রত, সাক্ষী রইল সিউড়ি]
বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘মাতঙ্গিনী হাজরা, ক্ষুদিরাম বসুর মাটিকে কলঙ্কিত করেছেন নরেন্দ্র মোদি। কলেজমাঠে বক্তব্য দিতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক কথা বলেছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে জনসভায় দাঁড়িয়ে এসব বলতে লাগে না। তাঁর জনসভায় ভালবেসে মানুষ আসে। বিজেপির মতো লোক ভাড়া করে আনতে হয় না। মাচা ভেঙেছে বিজেপির সভায়। তবে তারজন্য আমরা দুঃখিত। বাংলা বাদে অন্য রাজ্যে কৃষক না খেতে পেয়ে মরছে। আর বাংলায় প্রথম কৃষকের জমির খাজনা মকুব করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকের বন্ধু আসলে কে তা ভালই বুঝেছেন সাধারণ মানুষ।’
মেদিনীপুরের জনসভা থেকে বিজেপি হটাও সিন্ডিকেটের ডাক দেন তৃণমূলের যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গল মহলে মাওবাদী তাড়াতে সিন্ডিকেট করেছেন। পাহাড়ের গুরুংবাহিনীকে রুখতে সিন্ডেকেট করেছেন। এবার বিজেপি হটাও সিন্ডিকেট তৈরি হবে। এই সিন্ডিকেট আজ থেকেই কাজ শুরু করবে। বিজেপি হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিভাজন করছে। ধর্মের নামে ভোট চাইছে। হিন্দু ধর্ম বিক্রি করে রাজনীতি ও দুর্নীতি দুটোই করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি সংখ্যালঘু তোষণ করছেন? ইমাম ভাতা মোয়াজ্জেন ভাতার পাশাপাশি গঙ্গাসাগরে উন্নয়ন, দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক, তারকেশ্বরে মন্দিরের সংস্কার। যারা একটা প্যান্ডেল গড়তে পারে না। তারা নাকি বাংলা দখলের হুঙ্কার দিচ্ছে। এখানে এসে বিভাজনের রাজনীতি বাংলার মানুষ কিন্তু মেনে নেবে না। ১৯-শে বিজেপি সরকার ভাঙবে। দূরবীন দিয়ে বিজেপিকে খুঁজতে হবে। বিজেপি নামের ছাইপাশ, জঞ্জাল ঝাঁটিয়ে বিদায় করব। যাতে আগামিদিনে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড থেকে সভায় লোক ভরিয়েছে। বাংলার লোক দিয়ে সভা ভরিয়ে দেখান নরেন্দ্র মোদি। তখন বুঝব কত ধানে কত চাল। ’