গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে প্রায়শই ওঠে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। আর তারই মাঝে বসিরহাটের সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় উলটপুরাণ। অন্যের জমি চাষ করে দিন গুজরান করেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের। নিজের সংসার চালাতে চোয়াল শক্ত করে অভাবের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যান তিনি। আবার অন্যের বিপদেও সারাক্ষণ পাশে থাকেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। তাঁর ভূমিকায় মুগ্ধ গ্রামবাসীরা।
বসিরহাটের সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সনাতন সর্দার। ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী তথা দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত। কখনও অঞ্চল সভাপতি। আবার কখনও হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব সামলান। বছর বাহান্নর সনাতনের চার সদস্যের সংসার। স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা ছাড়া নিজের বলতে কেউ নেই তাঁর। সকাল হলেই দেখা যায় গামছা হাতে লাঙ্গল ও গরু নিয়ে অন্যের জমিতে গিয়ে কাজ করছেন সনাতন। নিজের জমিতে কিছু সবজি চাষ করেন তিনি। কোনওরকমে দু’বেলা অন্ন জোটে তাঁদের। প্রধানের স্ত্রী এখনও কাঠের উনুনেই রান্না করেন।
[আরও পড়ুন: নাবালিকার বিয়ে রুখতে গিয়ে ঢোলাহাটে ‘আক্রান্ত’ পুলিশ, গ্রেপ্তার ৬]
অভাব নিত্যসঙ্গী ঠিকই। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে ভোলেন না সনাতনবাবু। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে দশটা বাজলেই তিনি যান পঞ্চায়েতে। মানুষের পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর তিনি। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিনি মানুষের সনাতন হয়ে বেঁচে রয়েছেন। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে তিনি এক অনন্য উদাহরণ।
যেকোনো বিপর্যয় মোকাবিলা থেকে শুরু করে শংসাপত্র-সহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পেতে তাঁর কাছে আসেন সকলেই। রাজ্যজুড়ে যেখানে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা একাধিক আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে রয়েছেন বলেই অভিযোগ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো শীর্ষ নেতা জেলবন্দি। তা সত্ত্বেও সনাতনবাবুর সাধারণ জীবনযাপন অবাক করেছে সকলকেই। সনাতন জানান, “আমি পদে থাকি আর না থাকি নেত্রীর আদর্শ মেনে মানুষের কাজ করে যাব। এটাই আমার মূল মন্ত্র। একদিকে চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করব। অন্যদিকে মানুষের পরিষেবা দিয়ে যাব।”
দেখুন ভিডিও: