সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: তৃণমূল পরিচালিত পুরুলিয়ায় পুরসভায় ভাঙনের ইঙ্গিত স্পষ্ট৷ রবিবার সকাল–বিকেল বিজেপি নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক সেরে ফেললেন শাসকদলের দুই কাউন্সিলর। বৈঠকে ছিলেন কংগ্রেসের একাধিক কাউন্সিলরও। তাছাড়া পুরুলিয়া শহর তৃণমূল ও টাউন কংগ্রেসের একাধিক নেতাও বিজেপির ওই বৈঠকে ছিলেন বলে খবর।
[ আরও পড়ুন: খেজুরিতে সস্ত্রীক বিজেপি কর্মীকে মারধর, অভিযোগের তিরে তৃণমূল]
আর এই ভাঙনের আঁচ পেয়েই পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুর পুরসভার শাসকদলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে দু’দফায় বৈঠক করলেন এই মুহূর্তে জেলায় দলের পর্যবেক্ষক এবং রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। পুরুলিয়া সার্কিট হাউসে ওই বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু৷ ছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকে তাঁদের সামনেই দলের কার্যকলাপ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন একাধিক কাউন্সিলর। রাজ্যের তিন মন্ত্রী ও জেলা সভাধিপতির সামনেই তৃণমূল কাউন্সিলরদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেঁধে যায়। তাল আরও কেটে যায় বৈঠক শেষে৷ সার্কিট হাউস থেকে বেরোনোর সময় দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের মুখে শোনা যায় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান৷ তবে রবিবার বৈঠক শেষে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জানিয়েছেন, ‘নির্বাচনী পর্যালোচনা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। কোথাও কোনও ক্ষোভ–বিক্ষোভ নেই। সকলে একসঙ্গে কাজ করবেন।’ এদিনের বৈঠকে পুরুলিয়ার পুরপ্রধান শামিম দাদ খান ছিলেন না৷ তাতে ভিন্ন রাজনৈতিক জল্পনা উসকে ওঠার মুখেই নিভে গিয়েছে৷ জানা গিয়েছে, তাঁর অনুপস্থিতির সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই৷ তিনি ব্যক্তিগত কারণে থাকতে পারেননি৷
গত শনিবার রাতেই পুরুলিয়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির তৃণমূল সভাপতি তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর শহর পুরুলিয়ার কেতিকার বাসিন্দা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেন। আর রবিবার সকালেই তিনি ওই ওয়ার্ডে বিজেপির একটি পার্টি অফিসও চালু করেন৷ এই পরিস্থিতিতে আগামী ১২ জুন পুরুলিয়ায় সাংগঠনিক বৈঠক করার কথা বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের। তাঁর উপস্থিতিতে পুরুলিয়া পুরসভার একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলের বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা আরও বাড়ছে৷ সূত্রের খবর, একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর-সহ কংগ্রেসের দুই কাউন্সিলরও গেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে পা বাড়িয়েছেন। তবে কংগ্রেস–তৃণমূল কাউন্সিলরদের সঙ্গে বিজেপির গোপন বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছে পুরুলিয়া জেলা বিজেপি। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বিবেক রাঙা বলেন, ‘কোনও বৈঠক হয়নি। তৃণমূল কাউন্সিলররা আমাদের দলে যোগদান করার জন্য আলাপ–আলোচনা করছেন মাত্র৷’
[ আরও পড়ুন:দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর গ্রামেই নিহতদের সৎকারের সিদ্ধান্ত, কাল ১২ ঘণ্টা বসিরহাট বনধ]
তৃণমূল পরিচালিত পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর, ঝালদা – তিন পুরসভাতেই লোকসভা ভোটে শাসকদলের ফল খারাপ হয়েছে। আর সেই ফলাফলের অঙ্কে এই তিন পুরসভাই হাতছাড়া হতে চলেছে তৃণমূলের। এই মুহূর্তে পুরুলিয়া পুরসভার ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে বর্তমানে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ১৭টি, কংগ্রেসের ৪টি, সিপিএম ও নির্দলের দখলে রয়েছে একটি করে ওয়ার্ড। কিন্তু দলবদলের হিসেব অচিরেই সব তছনছ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা৷
ছবি:সুনীতা সিং৷