Advertisement
Advertisement

Breaking News

মৃত শিশুকে বাঁচাতে পুজোর পর ১৮ ঘণ্টা রাখা হল বন্ধ ঘরে! দেহ খুবলে খেল পিঁপড়ে

চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাক্ষী পাথরপ্রতিমা।

To save a dead child kept his body in a closed room for 18 hours | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:July 21, 2022 8:23 pm
  • Updated:July 21, 2022 8:23 pm

সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: মৃত শিশু বেঁচে উঠবে! মণ্ডলীর দীক্ষাগুরুদের এই বিধানে বছর দুয়েকের এক শিশুর মৃতদেহ ১৮ ঘণ্টা অন্ধকার ঘরের মধ্যে ফেলে রাখল পরিবার। বন্ধ ঘরে শিশুর মৃতদেহ খুবলে খেল পিঁপড়ে! দুর্গন্ধ ছড়ালেও শিশুর বেঁচে ওঠার আশায় বসে রইলেন বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্যরা। এই ভয়ংকর ঘটনার সাক্ষী রইলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবন পুলিশ জেলার পাথরপ্রতিমার (Patharpratima) ছোট রাক্ষসখালি গ্রামের বাসিন্দারা। বিষয়টি জানতে পেরে এমন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন এলাকার মানুষ।

বুধবার দুপুরে পুকুরে পড়ে যায় বছর দুয়েকের গৌরব মাইতি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ পর জলে ভেসে ওঠে শিশুর দেহ। স্থানীয় মাধবনগর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে শিশুটির দেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পরই শুরু হয় কুসংস্কার পালন। এলাকারই এক দম্পতিকে মণ্ডলী বলেন স্থানীয়রা। অভিযোগ, সেই মণ্ডলীই শিশুটিকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব বলে বিধান দেন। মৃত শিশুর মা ববিতা মাইতি জানান, তাঁর সন্তানকে বাঁচিয়ে দেওয়া হবে এই বিধান দিয়ে মণ্ডলীর গুরু তাঁদের বলেন, শিশুকে ঘরের মধ্যে রাখতে। তারপর ওই ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে ধূপধুনো জ্বেলে ফুল দিয়ে চলে যীশুর কাছে প্রার্থনা। বিকেল চারটে থেকে প্রায় রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ওই ঘরের মধ্যেই চলতে থাকে এসব। এরপর মণ্ডলী ও তার লোকজন ওই ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে চলে যান। মৃত শিশুর পরিবারকে তাঁরা বলেন, সারারাত দরজা খোলা যাবে না। ঘরের ভিতরে কেউ ঢুকতেও পারবেনা। সকাল হলেই মৃত শিশু মা বলে ডাকবে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সন্তানের চিকিৎসার টাকা দিতে নারাজ স্বামী, দুই ছেলেকে নিয়ে পুকুরে ঝাঁপ বধূর]

বিধান মেনে এভাবেই প্রায় ১৮ ঘণ্টা মৃত শিশুকে অন্ধকার ঘরে ফেলে রাখেন তাঁরা। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই প্রাণ ফেরেনি শিশুটির। বৃহস্পতিবার সকালেও মণ্ডলীর লোকজন ফোন করে জানতে চান, বাচ্চা কেমন আছে? ভাল নেই বলাতে ওরা বলেন, “ভাল নেই বলছো কেন? বাচ্চা ভালই আছে।” কিন্তু বেলা গড়িয়ে গেলেও শিশুর কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকেরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখে পিঁপড়ে খুবলে খেয়েছে শিশুটির দেহ। দেহে ধরেছে পচন।”

Advertisement

এই শিশুমৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। মণ্ডলীর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। বিধানদাতাদের ঘরবাড়ি ঘেরাও করে চলে বিক্ষোভ। পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মতিলাল মাইতি হাড়হিম করা এই ঘটনার কথা জানতে পেরে পাথরপ্রতিমা থানায় বিষয়টি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা হীরালাল মাইতি বলেন, “ধর্মের নামে এ ধরনের কুসংস্কার অবিলম্বে বন্ধ হোক। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিও করেন তিনি।” ছোট রাক্ষসখালির বাসিন্দা তাপসকুমার দাস, মানসী মণ্ডল জানান, “ওই মণ্ডলীর সদস্যরা এলাকার বিভিন্ন পরিবারকে দীর্ঘদিন ধরেই এভাবে কুসংস্কারে মত কু-প্রথায় প্রভাবিত করে চলেছে। এলাকায় কেউ অসুস্থ হলে পড়লে মণ্ডলী বিধান দেয়, ওষুধ খেতে হবে না প্রার্থনা করলেই সেরে যাবে অসুখ। সেকথা মেনে ভুগতে হয়েছে অনেককেই। বহুবার গ্রামের মানুষকে সাবধান করেও কিছুতেই তাঁদের সম্পূর্ণভাবে বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না।”

মণ্ডলীর এক মহিলা সাগরেদ বলেন, “মরা মানুষ আমরা বাঁচাই না। পরমেশ্বর পিতার কাছে প্রার্থনা করে অসুস্থকে সুস্থ করে তুলি। সেরকম নজিরও রয়েছে। ওই শিশু মারা গিয়েছে তা আমরা জানতাম না।” গোটা ঘটনায় ফুঁসছেন এলাকাবাসী। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা এ ধরনের ভয়ংকর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষকেই রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

[আরও পড়ুন: একুশের মঞ্চে মমতাকে বস্তাভরতি মুড়ি এগিয়ে দিয়ে রাতারাতি ‘হিরো’ বর্ধমানের যুবক]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ