রাজা দাস, বালুরঘাট: চালক ঘুমোচ্ছেন। আর স্টেশনে, প্ল্যাটফর্মে, ট্রেনে হাপিত্যেশ করছেন যাত্রীরা। কারও গুরুত্বপূর্ণ কাজে যোগ দেওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার তিতিবিরক্ত হয়ে বাপ-বাপান্ত করছেন রেলের। বালুরঘাট স্টেশনে এই ঘটনা অবশ্য প্রথম নয়। এর আগেও ঘটেছে। নিয়মের গেরোয় পড়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। অথচ চালকের মতোই ঘুম ভাঙছে না রেল কর্তৃপক্ষের।
[ঘুম ভাঙেনি চালকের, আড়াই ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ল তেভাগা এক্সপ্রেস]
কী সেই নিয়ম?
রেলের নিয়মে রয়েছে, দু’টি যাত্রার মাঝে চালককে অন্তত ছ’ঘণ্টা ঘুমানোর সময় দিতে হবে। আর এতেই বারবার একই ঘটনা ঘটছে। যেদিনই কলকাতা থেকে বালুরঘাট স্টেশনে তেভাগা এক্সপ্রেস দেরিতে পৌঁছচ্ছে, সেই দিনই চালকের ঘুমের কোটা পূরণের জন্য দেরিতে ছাড়ছে তেভাগা এক্সপ্রেস। সোমবার যেমন ছাড়ল চার ঘণ্টা লেটে। তবে এদিন মাইকে ঘোষণা করা হয়েছে। যাত্রীদের দাবি, হরবখত যখন এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তখন কেন বিকল্প চালকের ব্যবস্থা করছে না রেল? এই দাবিতে সরব হয়েছে নিত্যযাত্রীদের সংগঠনও। বালুরঘাট স্টেশন থেকে সপ্তাহে ছ’দিন কলকাতা যাতায়াত করে তেভাগা এক্সপ্রেস। সকাল ৫.৩৫ মিনিটে বালুরঘাট থেকে ছেড়ে বেলা আড়াইটে নাগাদ চিৎপুর স্টেশনে ঢোকে। সকাল সকাল যাত্রীদের কলকাতা পৌঁছে দেওয়ায় প্রচুর যাত্রীর ভিড় হয়। সোমবারও এই ট্রেন ধরার জন্য প্রচুর যাত্রী ভোর থেকে স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়, ট্রেন দেরিতে ছাড়বে। টিকিট কাউন্টার খোলা হয় সকাল আটটা নাগাদ। শেষপর্যন্ত সকাল সাড়ে ন’টায় ছাড়ে তেভাগা এক্সপ্রেস।
[নয়া ২১ কামানের তোপধ্বনিতে এবার থেকে রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন]
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে কলকাতা থেকে নির্দিষ্ট সময়েই তেভাগা এক্সপ্রেস বালুরঘাট স্টেশন ছাড়ে। কিন্তু নানা জায়গায় সিগন্যালিং-সহ নানা কারণে রাত সাড়ে দশটায় পৌঁছনোর কথা থাকলেও সেই ট্রেন ঢোকে সোমবার ভোর সাড়ে তিনটেয়। এর পর ট্রেনের চালক নিয়মমাফিক ঘুমোতে যান। ফলে ছ’ঘন্টা বিশ্রাম বা ঘুম কোনওটাই হয়নি চালকের। এরই মধ্যে ফের ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে যায়। ওই চালকই আবার কলকাতায় চালিয়ে আনবেন তেভাগা এক্সপ্রেস। ফলে বিশ্রামের কোটা পূরণ না হওয়ায় চালক ট্রেন চালাতে রাজি হননি। নিয়ম অনুযায়ী ছ’ঘণ্টা ঘুম বা বিশ্রাম না হলে তিনি ট্রেন চালাতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। চালকের যুক্তিও অবশ্য অন্যায্য নয়। কারণ নির্ধারিত সময় বিশ্রাম না নিয়ে ট্রেন চালালে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় চালকের উপরেই বর্তাবে।
[লাল-নীল-সবুজের মেলা, রূপসী বাংলায় এবার হাজার হাজার প্রজাপতি]
এদিকে ঘটনার জেরে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন যাত্রীরা। স্টেশন ম্যানেজারের কাছে গিয়ে জানতে পারেন চালকের ঘুমের বিষয়টি। কয়েকদিন আগেই একই ঘটনা ঘটেছিল। এদিন তার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন যাত্রীরা। রেলযাত্রী বিক্রম নাথ, অলোক মজুমদার জানান, বিভিন্ন কারণে ট্রেন দেরিতে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা দরকার। এই ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। এরজন্য তো যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হতে পারেন না। রেলের উচিত একজন চালককে রির্জাভে রাখার। অন্যদিকে স্টেশন ইনচার্জ চন্দনকুমার মণ্ডল জানান, পাকুড় এলাকায় সিগন্যাল সমস্যা হয়েছিল বলেই ট্রেন ঢুকেছে। এরপর ট্রেনের চালক ঘুমোন। ছ’ঘণ্টা ঘুম না হওয়ায় তিনি সাড়ে পাঁচটায় ট্রেন চালাতে চাননি। সাড়ে ন’টায় ট্রেন ছাড়া হবে বলে আগাম মাইকিং করা হয়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.