সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: বেআইনি ইটভাটা ও কয়লার ডিপোকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতীদের গোষ্ঠী সংঘর্ষে প্রবল উত্তেজনা ছড়াল। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডাল থানার খাস কাজোরায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা এলাকার পরিস্থিতি। উভয়পক্ষের বোমাবাজি আর গুলি ছোঁড়ার ঠেলায় স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে পালাতে থাকেন। পরে অন্ডাল থানা ও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটে আধিকারিকরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই ঘটনায় জয়প্রকাশ হরিজন ও সন্তোষ বাউরি নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃত জয়প্রকাশ স্থানীয় বাসিন্দা হলেও সন্তোষ পান্ডবেশ্বরের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি পাইপগান, দুটি কার্তুজ ও প্রায় কুড়িটি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানের জেলা পরিষদ সদস্য বিষ্ণুদেও নুনিয়ার ভাই মনোজ নুনিয়া ও স্থানীয় বাসিন্দা ধর্মেন্দ্র নুনিয়া একটি ইটভাটা ও কয়লার ডিপো চালায়। ইসিএল-এর জমিতে চলা ওই বেআইনি ইটভাটার অংশীদারিত্ব নিয়েই দু’পক্ষের গন্ডগোলের সূত্রপাত। ধর্মেন্দ্রর ভাই বিদ্যুৎ নুনিয়া এই সংস্থায় ম্যানেজারের কাজ করত। প্রথমে সব ঠিক থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরেই বিদ্যুতের সঙ্গে স্থানীয় বিজেপি নেতাদের সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর থেকেই একা ওই সংস্থার মালিকানা দখলের চক্রান্ত শুরু করে সে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই মনোজের সঙ্গে বিবাদ তুঙ্গে উঠেছিল বিদ্যুতের।
বুধবার অন্ডালের দক্ষিণখণ্ড থেকে খাস কাজোরা যাওয়ার রাস্তায় থাকা ইটভাটা দখলের জন্য বহিরাগতদের নিয়ে সে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পালটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে মনোজ নুনিয়া ও তার দলবল। এর জেরে দু’পক্ষের মধ্যে প্রবল সংঘর্ষ বেঁধে যায়। মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়তে থাকে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকায় দাপাতে শুরু করে দুপক্ষই। খবর পেয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক পর প্রচুর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য বিষ্ণুদেও নুনিয়া জানান, ভাই ও তার অংশীদারকে সরিয়ে একাই মালিক হওয়ার চক্রান্ত করছিল বিদ্যুৎ।বুধবার সেই কারণেই দলবল নিয়ে হামলা চালায়। ঝাড়খণ্ড ও বীরভূম থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে এলাকায় অশান্তি পাকানোর চক্রান্ত করেছিল। বিদ্যুতের এই চক্রান্তের পিছনে বিজেপির মদত রয়েছে। যদিও আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি–১ (পূর্ব) অভিষেক মোদি জানান, ব্যক্তিগত কোনও আক্রোশ থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ বোমাও উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ করে তদন্ত শুরু হবে। তারপর পলাতক অন্য দুষ্কৃতীদেরও তাড়াতাড়ি গ্রেপ্তার করবে পুলিশ।
ছবি: উদয়ন গুহরায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.