সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: শৈশবে শ্রবণযন্ত্রের সমস্যা কেড়ে নিয়েছিল শোনার শক্তি। তখনই বধিরতা গ্রাস করেছিল বাগনান থানার বাইনান গ্রামের আশ্রিতা ভট্টাচার্যকে। পরবর্তীকালে অনেক ধরনের চিকিৎসা করে সামান্য উন্নতি হলেও সে একজন প্রতিবন্ধী কিশোরী হয়েই রয়ে গিয়েছে। শ্রবণশক্তি প্রায় নেই বললেই চলে, কথাও বলতে হয় ইশারার মাধ্যমে। তা সত্ত্বেও অসম্ভব মানসিক জোর আর অনুমান ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে আশ্রিতা। আর এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছে।
[প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে সাসপেন্ড ময়নাগুড়ির প্রধান শিক্ষক, বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ পর্ষদের]
স্বাভাবিক কারণেই এ সাফল্যকে বড় করে দেখছেন আশ্রিতার প্রতিবেশীরা। বাইনান বাজারে তার বাবা অজয় ভট্টাচার্যের খবরের কাগজ বিক্রির দোকান রয়েছে। ভোর থেকে বেলা পর্যন্ত সেই দোকানে কাগজ বিক্রিতে বাবাকে সহযোগিতা করার পর স্কুলে যেতে হয় আশ্রিতাকে। স্কুল থেকে ফিরে আবার রাখি, জরি-সহ অন্যান্য সূচিকর্মের মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখে সে। বাবা ছাড়াও মা গৌরী ভট্টাচার্য ও বোন সুস্মিতাকে নিয়ে তাদের চারজনের সংসার। সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব বাবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাগ করে নিয়েছে আশ্রিতা। সব কাজের পর রাতে মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য পড়াশোনা করার সময় পায় সে। গৃহশিক্ষক হিসেবে দেবব্রত নিয়োগী সম্পূর্ণ বিনা বেতনে আশ্রিতকে পড়ান। বাইনান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এই ছাত্রীটিকে খুব সঙ্গত কারণেই তার স্কুলের শিক্ষিকারা অসম্ভব স্নেহ করেন।
এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও নজরকাড়া সাফল্য পায়নি আশ্রিতা। তবুও তার সাফল্যে তার শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্বাভাবিক কারণেই উৎফুল্ল। আশ্রিতাও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানায়, তাঁরা না থাকলে তার শিক্ষা হয়তো অসম্পূর্ণই থেকে যেত। আগামী দিনে উচ্চশিক্ষা লাভ করে সমাজের অসহায় ও প্রতিবন্ধী মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চায় জীবনযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়ানো এই অপরাজেয় কিশোরী।
ছবি: সুপ্রতীম মজুমদার
[সীমা ছাড়াচ্ছিল অত্যাচার, মারমুখী মদ্যপ স্বামীকে পিটিয়ে খুন করল স্ত্রী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.