Advertisement
Advertisement
Purulia

বিটিছেলা হয়ে ছৌ নাচবি কী রে? পুরুলিয়ার ‘ছৌ কন্যা’র লড়াইকে মলাটে বন্দি করছে UN Women

নারী দিবসের প্রাক্কালে বাংলার শিল্পীকে অনন্য সম্মান।

United Nations to write book on woman Chhau dancer from Purulia

বাবার সঙ্গে ছৌ নাচের অনুশীলন মৌসুমি চৌধুরির। নিজস্ব চিত্র।

Published by: Paramita Paul
  • Posted:March 7, 2024 5:41 pm
  • Updated:March 7, 2024 5:41 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: “বিটিছেলা হয়ে ছৌ নাচবি কী রে? উটা তো ব্যাটাছেলার নাচ।” এমন নানান কথা, গঞ্জনা, অপমানেও দমে যাননি। কখন যে বীররসের পৌরুষদীপ্ত ছৌ নাচের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন বুঝতেও পারেননি। তাই দরজায় খিল এঁটে আয়নার সামনে ভেসে আসা মহড়ার গানের তালে পা মেলাতেন।
সেদিনের ছৌ কন্যা মৌসুমি আজ বধূ। প্রায় দেড় বছরের ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা। সেই শিল্পী মৌসুমি চৌধুরীর ছৌ লড়াইয়ের গল্পকেই দুই মলাটে বন্দি করছে ইউএন উমেন অর্থাৎ রাষ্ট্রসংঘের মহিলা শাখা। নারী দিবসের প্রাক্কালে বাংলার লোকশিল্পীকে এ এক অনন্য সম্মান।

পুরুলিয়ার বলরামপুরের অজ পাড়া গাঁ মালডি। চারপাশ ধূ ধূ ভূমি। পাশে কুমারী নদী। এই মাঠঘাট প্রান্তরেই ছৌ-র পদধ্বনিতে আজ মৌসুমিকে চিনেছে দেশ। বিদেশ-ও। চেনা ছক ভেঙে ব্যাটাছেলেদের নাচের প্রেমে পড়ে তা রপ্ত করেছেন। সময়টা ২০০৭-২০০৮। তখন মৌসুমি ২০১০-২০১১। বাড়ির গা ছুঁয়ে চলত ছৌ নাচের মহড়া। দাপিয়ে বেড়াতেন গায়ের জোয়ান-মরদরা। বীররসের ছৌ মুদ্রায় লাফিয়ে উঠতেন বাবা। কিছুক্ষণ শূন্যে থেকে মাটিতে পড়তেন ওই মুদ্রাতে-ই । ওই বয়সেই আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখতো ছোট্ট মৌসুমি। ধামসার দ্রিম দ্রিম শব্দে শরীরে ‘গুরগুরানি’ শুরু হতো। কিন্তু সেই নাচের শামিল হওয়ার উপায় ছিল না। ছৌ নাচবে মেয়েরা? এমন বিধান ছিল না গাঁয়ে। আর প্রতিবাদীর শুরুটা তখন থেকেই।

Advertisement

[আরও পড়ুন: বিতর্ক পেরিয়েও সফল ‘অ্যানিম্যাল’, তিরুপতিতে কেশ দান করে নেড়া হলেন পরিচালক সন্দীপ ভাঙ্গা]

দুর্গা নাচেন ছৌ শিল্পী মৌসুমি চৌধুরি।

 

Advertisement

দরজা বন্ধ করে ছক ভাঙা সেই শুরু। তার পর একদিন সামনের আয়নায় বলে দিল মৌসুমীর নৃত্যে দিব্যি ডানা মেলছে ব্যাটাছেলের ওই নাচ। ছৌ বিভঙ্গে ফুটে উঠছে বীররস। ২০১২। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তত্ত্বাবধানে রাজ্য-কেন্দ্রের উদ্যোগে গড়ে উঠল মালডি ছৌ শিবির। তৈরি হতে লাগল ভবন। আর তখনই মৌসুমি চার দেওয়ালের বেড়া ভেঙে একেবারে প্রকাশ্যে। হাঁ হয়ে গেল সবাই। হতবাক তার বাবা মা-ও। মৌসুমী মুখ ফুটে বাবাকে বললেন, “আরও ভালো করে ছৌ নাচ শিখতে চাই। গড়তে চাই একটা মহিলা দল।”

 

দুর্গা নাচেন ছৌ শিল্পী মৌসুমি চৌধুরি।

 

ততক্ষণে এই কথা জেনে গিয়েছে পাড়াপড়শিরা। ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, কটূক্তি, অপমান আরও কত কী! কিন্তু পিছন ফিরে তাকাননি সেদিনের মৌসুমি। এলাকারই মেয়েদের নিয়ে গড়ে উঠল দল। মৌসুমির কথায়, “শুধু শুরুর সময় নয় । এখনও আমাকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। আমি নাকি প্রথম মহিলা ছৌ শিল্পী নই! তবে এই নিয়ে আমি ভাবি না। আমি আমার কাজটা করে লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই। ইউনাইটেড নেশনস উমেন আমার ছৌ লড়াইয়ের কথা তুলে ধরছে একটি বই-এ। চলতি বছরের মার্চ মাসেই প্রকাশ হওয়ার কথা। আমি উচ্ছ্বসিত, গর্বিত।” তবে লড়াই যে এখনও থামেনি। বিদেশে পাড়ি, নানান পুরস্কার, স্বীকৃতি। তাই ঘর-সংসার সামলে, হেঁশেলের কাজ সেরে এখনও দুর্গার মুখোশে ছৌ নাচেন মৌসুমি। তার দেড় বছরের মেয়ে গার্গীকেও শেখাতে চান এই পৌরুষদীপ্ত নাচ। নারী দিবসের আগে যেন এটাই শপথ শিল্পীর।

দেখুন ভিডিও

[আরও পড়ুন: ‘ক্লাস ম্যাটারস’, কাঞ্চন-শ্রীময়ীকে ‘জাত চেনালেন’ শ্রীলেখা!]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ