Advertisement
Advertisement

পথ দুর্ঘটনায় দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যু, বিক্ষোভে রণক্ষেত্র দেবগ্রাম

হরিহর আত্মা দুই বান্ধবী, মৃত্যুও একসঙ্গে।

Vehicle crushes two Madyamik candidates to death in Panighata
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 19, 2018 6:58 pm
  • Updated:March 19, 2018 7:22 pm

পলাশ পাত্র: অভাবকে জয় করে দুই পরীক্ষার্থী স্বপ্ন দেখেছিল। বড় হয়ে কিছু হবে। কিন্তু জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় উতরানোর আগে পথ দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ওদের প্রাণ। পাশাপাশি বাড়ি, একই ক্লাসের দুই বন্ধুর এভাবে চলে যাওয়াতে কালীগঞ্জ থানার মির্জাপুর মধ্যপাড়ার আকাশে আচমকা জমেছে কালো মেঘ। দুই বাড়িতে এলাকার অগণিত মানুষের ভিড়। আজ তাদের মুখে সান্ত্বনার ভাষা নেই। দুই বাড়ির শোকার্ত পরিবেশের মাঝে কেঁদে চলেছেন আত্মীয়-পরিজন থেকে প্রতিবেশীরা।

[  নিউ দিঘার হোটেলে উদ্ধার যুগলের ঝুলন্ত দেহ, গ্রেপ্তার প্রেমিকের বাবা ]

Advertisement

তবে সোমবার ৩৪ নং জাতীয় সড়কের উপর কালীগঞ্জ থানার পাণিঘাটার ধাবার কাছে এই পথ দুর্ঘটনায় এলাকায় ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যায়। ঘটনার জেরে উত্তেজিত এলাকার মানুষ দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পথ অবরোধ করে। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করতে এলে তাদের জনতা ইট, পাটকেল ছোঁড়ে। এ ঘটনায় পুলিশের কয়েকজন আহত হয়। কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। আহত পুলিশ কর্মীদের মধ্যে দুজনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।  আহত দুই পুলিশ কর্মীকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পরে পুলিশ লাঠি চার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একই সঙ্গে দেহ উদ্ধার করে দেবগ্রাম ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় জাতীয় সড়কের উপর যানজট দেখা যায়। জেলা পুলিশ সুপার সন্তোষ পান্ডে বলেন, পুলিশকে মারধর, হেনস্তা, কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বাসের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

[  মলয় ঘটকের নামে বিস্ফোরক অভিযোগ তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতির ]

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দুই পরীক্ষার্থীর নাম মাসুদা অঞ্জু(১৮) ও নাজিবা খাতুন(১৮+)। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,  ছোট থেকেই মাসুদা গ্রামের স্কুলে দিদিমণি হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন দাদা ও বাবা আব্দুল রেজ্জাক সেখ। চাষ-আবাদ, ভূসি বিক্রি করে সাত ছেলে মেয়েকে মানুষ করা রেজ্জাক সাহেব বলছিলেন, ও খুব ভাল ছিল। কোন দিন বায়নাক্কা করতে দেখিনি। মেয়েটা মুখে আজ দুটো ভাতও তোলেনি। বাড়ির পেছনেই বাড়ি নাজিবার। ওর সঙ্গে ছোট থেকেই খুব বন্ধুত্ব। পানিঘাটা উমাদাস মেমোরিয়াল স্কুলে দুজনে এক সঙ্গেই পড়ত। নাজিবা খাতুনের বাবা আব্দুর রেজ্জাক সেখ  জমিতে কাজ করে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, অভাবের সংসারে মেয়ের কিছু করার ভাবনা ছিল। আমাদের কষ্ট মোচন করার জন্য প্রবল ইচ্ছা ছিল। পড়াশুনা করে চাকরি করার ইচ্ছা ছিল। কোথা থেকে কী হয়ে গেল। এদিন সকালে মাসুদার দাদা সাজিদুল একটি স্কুটিতে তার বোনের সঙ্গে নাজিবাকেও চাপায়। বাড়ি প্রায় দশ কিমি পেরিয়ে সিট পড়া দেবগ্রাম এস এ বিদ্যাপীঠে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু হেলমেট তাদের ছিল না। স্কুটিটা ধাবার কাছে আসতে উল্টোদিক থেকে আসা একটি বাসের ধাক্কায় পিষ্ট হয় দুই পরীক্ষার্থী। ছিটকে পড়ে সাজিদুল। তাকে পানিঘাটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ ওই এলাকায় পুলিশ টাকা তোলার জন্য প্রত্যেকটি গাড়ির চালক জোরে গাড়ি চালানোয় এ ধরণের দুর্ঘটনা ঘটছে। মারা যাওয়া দুই পরীক্ষার্থী বাড়ি এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য সেন্টু মুন্সি পুলিশের এভাবে টাকা তোলার অভিযোগ তুলেছেন। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ খন্ডন করে জানিয়েছে, কিছু হলেই পুলিশের নামে এই অভিযোগ তোলা হয়। কিন্তু ওরা হেলমেট পরে ছিল না।

[  বিয়ের প্রস্তাব নাকচ, প্রেমিকাকে অশ্লীল মেসেজ পাঠিয়ে ধৃত যুবক ]

 এদিন বিকেলে মৃত দুই ছাত্রীর স্কুলে শিক্ষকরা বাড়িতে যান। প্রধান শিক্ষক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় দুই ছাত্রীর প্রশংসা করেন। বাড়ির সামনে কাতারে মানুষ তখন হাজির। এদিন ময়না তদন্তের জন্য শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পুলিশ দেহ পাঠায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ