Advertisement
Advertisement
Kumbh accident

‘আমার দেওয়া শাড়িটা পরা হল না মায়ের’, কুম্ভে জা-শাশুড়ির মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বউমা

বাকরুদ্ধ মৃত জাগরী মাহাতোর পরিবারও।

Village of Purulia is in mourning after losing three people in Kumbh accident

শাশুড়ি ও বড় বউকে হারিয়ে শোক কুন্তি মাহাতোর পরিবারে।ছবি: দীপক রাম।

Published by: Subhankar Patra
  • Posted:February 11, 2025 9:31 pm
  • Updated:February 11, 2025 9:57 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সুতির লাল শাড়িটা আর পরা হল না কুন্তিদেবীর। মেজ বউমার থেকে লাল শাড়ি ও একটা লাল ব্লাউজ চেয়ে নিয়েছিলেন শাশুড়ি কুন্তি মাহাতো। বলেছিলেন, মহাকুম্ভনগরীর সঙ্গমে স্নান সেরে ওই শাড়িটাই গায়ে জড়াবেন। কিন্তু তা আর হল কয়। শাড়িটা পাট করে ব্যাগেই পড়ে রইল। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের বেনারস-কানপুর ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক পারাপার করতে গিয়ে মঙ্গলবার ভোরে বড় বউমা আলপনা মাহাতো ও পড়শি জাগরী মাহাতের সঙ্গে প্রাণ হারালেন কুন্তিদেবী।

মঙ্গলবার বেলা ১২:৩০টা নাগাদ পুরুলিয়ার টামনা থানার গোপলাডি গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর আসে। ভোর ৫.১৫ নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটলেও এই তীর্থে নিয়ে যাওয়া ট্যুর অপারেটর-সহ সেখানে যাওয়া গোপলাডি গ্রামের কোনও বাসিন্দা গ্রামের ৩ মহিলা মৃত্যুর কথা জানাননি। সংবাদমাধ্যমের থেকে এই খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কুন্তিদেবীর পরিবারও। শোকস্তব্ধ পড়শি মৃত জাগরী মাহাতোর পরিবার। শোক গ্রাস করেছে গোটা গোপলাডি গ্রামকে।

Advertisement

গোপলাডি গ্রাম থেকে প্রায় ১৪ জন বাসিন্দা চাকলতোড়-র ট্যুর অপারেটরের তত্ত্বাবধানে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রবিবার মহাকুম্ভনগরীর পথে রওনা হন। যান কুন্তিদেবী, তাঁর বড় ছেলে বাবুলাল, বউমা আলপনা মাহাতো, দশম শ্রেণিতে পড়া তাঁদের ছেলে শুভজিৎ মাহাতো ও মেজছেলের মেয়ে রিয়া মাহাতো। মেজ বউমা অষ্টমী মাহাতো বলেন, “আমি সরস্বতী পুজোয় বাপের বাড়ি গিয়েছিলাম। বড়দি (বড় বউমা আলপনা) আমাকে ফোন করে বলেন তাড়াতাড়ি চলে আসতে। আমি ৯ তারিখ বেলা ১১ টার মধ্যেই বাড়ি চলে আসি। শাশুড়ি মা আমার কাছ থেকে একটি সুতির লাল শাড়ি ও লাল ব্লাউজ নেন। সবাইকে বলেন সঙ্গমে স্নান সেরে ওই কাপড় গায়ে জড়াবেন। আমার দেওয়া শাড়িটা পরা হল না মায়ের।” এই কথা বলতে বলতে চোখের কোনায় জল চলে আসে তাঁর। এদিকে স্ত্রী কুন্তিদেবীর মৃত্যুর খবর জানেনই না ৭৫ বছরের চিনিবাস মাহাতো। তিনি বলেন,” বালিপুরে হয়েছেটা কী?” এদিন দুপুর থেকে এর কোনও উত্তরই পাচ্ছেন না তিনি। তাঁর চোখ মুখ যেন অজানা আশঙ্কায় কালো হয়ে গিয়েছে।

কুন্তিদেবীর ছেলে বাবুলাল মাহাতো বলেন, “মা ও স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। বাবাকে যে কী জবাব দেবো বুঝতে পারছি না!” কুন্তিদেবীর ছোট ছেলে পেশায় রাজমিস্ত্রি সুনীল মাহাতো বলেন, “যাওয়ার দিন ওঁদের সঙ্গে কথা হয়েছিল। সকলেই বলেছিল রাস্তায় ভীষণ যানজট আছে। মঙ্গলবার স্নান করার কথা ছিল।”

পড়শি মৃত জাগরী মাহাতোর সঙ্গে তাঁর স্বামী কৃষ্ণকিশোর মাহাতো মহাকুম্ভনগরীতে যান। টেলারিং ও চাষাবাদের কাজ করে সংসার চালান তিনি। সঞ্চয়ের টাকায় স্ত্রীকে নিয়ে পুণ্যস্নান করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্ত্রীকে নিয়ে আর বাড়ি ফিরতে পারলেন না। মৃত জাগরী মাহাতোর ভাইপো জন্মেজয় মাহাতো বলেন, ” কাকিমা এভাবে দুর্ঘটনার বলি হবেন  ভাবতেই পারছি না।” দুপুরের পর থেকেই কান্নার রোল গোপলাডি গ্রামে। মাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে জাগরী মাহাতোর বড় ছেলে তপন ও ছোট ছেলে মৃত্যুঞ্জয়। তার বোন অঞ্জনাও কোনও কথা বলছে না। চাকলতোড় গ্রামের বাসিন্দা ট্যুর অপারেটর বিষ্ণু গোপ বলেন, “মহাকুম্ভনগরী থেকে আমাদের অযোধ্যার রাম মন্দির যাওয়ার কথা ছিল। তারপর আমরা বেনারস হয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি ফিরতাম। এবার কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement