ফাইল ছবি
ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: ভ্রান্তিবিলাস! রূপোলি পর্দার সেই বৃত্তান্ত এবার ঘোর বাস্তবের পটভূমিতে। পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে। তবে চেহারার সাদৃশ্যে নয়, এক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটেছে নামের মিলে। আর সেই সমস্যার সুরাহা করতে গিয়ে দুই প্রার্থীর বাড়তি প্রাপ্তি ডাক নাম-ও। যা কি না দেওয়াল লিখনের পাশাপাশি ব্যালটেও জ্বলজ্বল করবে ব্র্যাকেটের মধ্যে।
এক নামের দুই নির্দল প্রার্থীকে ঘিরে এখন ‘ভোটের ভ্রান্তবিলাস’ চলছে গাইঘাটার জলেশ্বর পঞ্চায়েতের দুই গ্রামে। রামপুর আর ট্যাংরা দু’টি গ্রামেই এক সমস্যা। দু’টি গ্রামের নির্দল প্রার্থীদের নামে হুবহু মিল। শুধু নামই নয়, দু’জনের পদবিও এক। রামপুর গ্রামে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ললিতা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যিনি নির্দলে দাঁড়িয়েছেন, তাঁর নামও ললিতা বিশ্বাস৷ কাকতালীয়ভাবে একই ঘটনা ট্যাংরাতেও। বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী রূপালি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অপর নির্দল প্রার্থীর নামও রূপালি বিশ্বাস৷ এই নামের গেরোতেই বিপত্তি। কোনও ললিতাকে ভোট দেবেন অথবা ব্যালট পেপারে কোন রূপালির নামের পাশে ছাপ মারবেন তা নিয়েই বিভ্রান্ত এই দুই গ্রামের মানুষ। বিষয়টির হেস্তনেস্ত করার জন্য জেলাপ্রশাসনের আধিকারিকদের দ্বারস্থ হন এই প্রার্থীরা। পরিস্থিতি এতটাই ঘোড়াল, যে এই সমস্যার নিরসন করতে রীতিমতো ঘাম ছুটে যায় প্রশাসনের কর্তাদের। শেষমেশ যদিও উপায় বের করেছেন তাঁরা। তবে তাতেও সমস্যা পুরো সমাধান হয়নি বলে দাবি, এই প্রার্থীদের।
নামের এই বিভ্রান্তি কাটাতে প্রার্থীদের ডাক নাম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন প্রশাসনের কর্তারা। গাইঘাটার বিডিও বিব্রত সরকার বলেন, “দুই ললিতা বিশ্বাসের মধ্যে একজনের ডাক নাম লতা। ব্যালট পেপারে তাঁর নামের পাশে ব্র্যাকেটে ডাক নামও ব্যবহার করা হবে। প্রচারেও তিনি সেই ডাক নাম ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যদিকে দুই রূপালি বিশ্বাসের মধ্যে একজনের ডাক নাম রূপা। তার ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া দু’জনকে আলাদা প্রতীকও দেওয়া হয়েছে।” উত্তর ২৪ পরগনার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিক ভাস্কর পাল বলেন, “প্রার্থীদের তরফ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়। নামের বিভ্রান্তি নিয়ে সমস্যাটির সমাধান করা হয়েছে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, রামপুর গ্রামের বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ললিতা বিশ্বাসকে লাঙল চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। অন্য ললিতা বিশ্বাস (লতা)-কে কুঠার চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। ট্যাংরা গ্রামেও রূপালি বিশ্বাস (রূপা) কুঠার চিহ্নে লড়বেন। আর বাম সমর্থিত রূপালি বিশ্বাস লাঙল চিহ্ন পেয়েছেন।
প্রশাসন সমস্যার সমাধান করলেও বিষয়টিকে চক্রান্ত হিসাবেই দেখছেন বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। রামপুরের বাম সমর্থিত ললিতা বিশ্বাসের স্বামী নিখিল বিশ্বাসের অভিযোগ, “শাসকদলের বিরুদ্ধে আমার স্ত্রী প্রার্থী হয়েছে। তাই চক্রান্ত করে শাসকদলের লোকেরা ওই নামেই আর এক ললিতাকে প্রার্থী করেছে। যাতে ভোট দেওয়ার সময় নামের গোলোযোগে আমার স্ত্রীর ভোট কাটা যায়।” নিখিলবাবুর আরও অভিযোগ, মনোনয়নের প্রথম পর্বেই তাঁর স্ত্রী প্রার্থীপদের জন্য আবেদন দিয়েছিলেন। এলাকার মানুষের সমর্থন দেখে শাসকদলের লোকেরা ২৩ জুন অর্থাৎ মনোনয়নের বাড়তি দিনে ললিতা বিশ্বাস (লতা)-কে প্রার্থী করেন। এই অভিযোগ উড়িয়ে ওই এলাকার তৃণমূল কর্মী উত্তম সরকারের দাবি, “নিখিল বিশ্বাস দশ বছর আগে তৃণমূলে ছিলেন। কিন্তু তলে তলে বিরোধীদের সঙ্গে সমানভাবে যোগাযোগ রাখতেন। দলবিরোধী কাজ করার জন্য তাঁকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এবছর বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্ত্রীকে নির্দল প্রার্থী করেছেন। লতা এই গ্রামেরই গৃহবধূ। সে নিজে থেকেই মনোনয়ন জমা দিয়েছে। এর সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।”
নামের ভ্রান্তিবিলাসে এখন সরগরম জলেশ্বরের এই দুই গ্রাম। প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের চিন্তা কিন্তু কমেনি। একটাই আশঙ্কা, ভোটকেন্দ্র গিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে ভুল করে অন্য ললিতা বা রূপালিকে ভোট না দিয়ে দেন তাঁরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.