Advertisement
Advertisement

ঔদ্ধত্যই কাল হল, হারলেন বলরামপুর জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি

দল আগেও সতর্ক করেছিল তাঁকে।

WB Panchayat Polls: here is why Srishtidhar Mahato loses in Purulia
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 18, 2018 5:44 pm
  • Updated:May 18, 2018 6:22 pm

সুমিত বিশ্বাস,পুরুলিয়া: ভোটের চারদিন আগে বলরামপুরের সরাই ময়দান থেকে তিনি হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, তৃণমূলে ভোট না দিলে দু’টাকা কেজি দরে চালের সুবিধা বন্ধ করে দেবেন। আর সেই হুমকিই বুমেরাং হয়ে ফিরল পুরুলিয়া জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর কাছে। ৯,১৪০ ভোটে হারলেন তিনি। আর যে বলরামপুরকে সবসময় দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নিজের ‘সাম্রাজ্য’ বলে দাবি তিনি করতেন, সেখানে জয় পেল বিজেপি।

অভিযোগ, তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা, বেনিয়ম, ঔদ্ধত্য, চোখরাঙানি এবং নিজে আদিবাসী না হয়েও ওই পিছিয়ে পড়া জনজাতির ওপর সবসময় ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টাই কাল হল। অথচ বারেবারে তার নানান বেনিয়ম, খেয়ালখুশি মত কাজ-সহ কথায়-কথায় চড়া সুরে কথা বলার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব-সহ একাধিক মন্ত্রী। কিন্তু তবুও তিনি তার ভুল শুধরে নেননি। ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাবে নিজেকে এই জেলায় শাসক দলের ‘মুখ’ হিসাবে যেনতন প্রকারে তুলে ধরার চেষ্টা করে গিয়েছেন। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের এক শ্রেণির আমলা থেকে জেলা তৃণমূলের বেশ কয়েকজন তাঁকে সবসময় ‘গার্ড’ করে যেতেন বলেও অভিযোগ। শুধু তাই নয়, তাঁকে ঘিরে থাকা অনুগামীরাও সবসময় তাঁর কথাতে সায় দিয়ে জয়ধ্বনি দিতেন।

Advertisement

[লড়াই করার মানসিকতা নেই কংগ্রেসের! এবার বিজেপিতে যাচ্ছেন হুমায়ুন কবীর]

Advertisement

কিন্তু তাঁর নানান অনৈতিক কাজকর্ম রাজ্য নেতৃত্বের সামনে চলে আসায় তাঁকে এই পঞ্চায়েতে টিকিট দিতে চায়নি দল। অভিযোগ, তিনি টিকিট পেতে একপ্রকার দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে কার্যত ‘ব্ল্যাকমেল’ করেছিলেন। কারণ এই বলরামপুর ব্লক এলাকা তাঁর বলরামপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্যতম। ২০১৩ সালের আগস্ট মাস থেকে চলতি বছরের ভোটের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন জনসভায় মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে বসিয়ে তিনি এমনসব দলবিরোধী ও বিতর্কিত বক্তব্য রাখতেন যে তাতে শুধু মন্ত্রী নন, অস্বস্তিতে পড়ত গোটা দল। তাই শুক্রবার সকালে নিজের পুরুলিয়া শহরের বাড়িতে বসে মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো একান্ত আলাপচারিতায় বলেন, “জনগণ ওনাকে পছন্দ করেননি। তাই ভোট দেননি। ওনার বিরুদ্ধে বলরামপুরে একটা জনরোষ আছড়ে পড়েছিল। কিন্তু তবুও একজন সভাধিপতিকে টিকিট দেব না সেটা কেমন করে হয়? ওনার ভুলের মাশুল এখন আমাকে দিতে হচ্ছে।”

সভাধিপতির এই হারের পর মুখ খুলেছেন পুরুলিয়ার আদিবাসী নেত্রী তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুও। তিনি বলেন, “সভাধিপতির নানান কাজকর্ম ওই এলাকায় আমাদের আদিবাসীরা মেনে নেননি তাই তাঁকে এভাবে হারতে হল। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের উন্নয়নকে সঙ্গী করে জঙ্গলমহলের ওই আদিবাসী এলাকা আবার আমরা পুনরুদ্ধার করব।” বিদায়ী সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “কেন এই ফল বুঝতে পারছি না। আমি দশ টাকার দুর্নীতি করিনি। শুধুই উন্নয়ন হয়েছে গোটা বলরামপুরে। তবে মানুষের ওপর ভরসা রাখতেই হবে। কী আর করা যায়?”

[শাসক দলের কর্মীদের উল্লাসে বাধা, এবার পুলিশকে ধমকালেন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ]

গত ৯ মে সন্ধ্যায় বলরামপুরের সরাই ময়দানে বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ভিড়ে ঠাসা জনসভায় ওই নেতাকে পাশে বসিয়ে বলরামপুরের বড় উরমা এলাকার বাসিন্দা সৃষ্টিধর মাহাতো বলেছিলেন, “তৃণমূলে যদি ভোট না পড়ে তাহলে দু’টাকা কেজি দরে চাল কিভাবে পাবেন সেটা আমি দেখব। আবার পুনরায় জনপ্রতিনিধিকে লিখিয়ে আনতে হবে।” রাজ্য সরকারের ‘সকলের জন্য খাদ্য’ প্রকল্প নিয়ে পঞ্চায়েতের নির্বাচনের জনসভার মঞ্চ থেকে এভাবে রাজনীতির রং লাগিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়ার বিষয়টিকে এলাকার আদিবাসী মানুষজন একেবারেই ভাল চোখে নেননি বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান। এছাড়া ভোটের আগে নিজের এলাকা দখলে রাখতে একেবারে সিপিএমের কায়দাতেই লাগাতার সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ রয়েছে। আরও অভিযোগ, ভোটের দিন বীরভূমের নানুর থেকে গাড়িতে করে বহিরাগতদের নিয়ে এসে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার চেষ্টা জঙ্গলমহলের আমজনতা ভাল চোখে নেয়নি। সেই সঙ্গে অবৈধ বালি-সহ কাঠ পাচারের মতো নানা বেনিয়মের মদত দেওয়া এই নেতার চোখরাঙানির জবাব দিতেই এই ভোট বলে বিজেপি জানিয়েছে। দলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে তাঁর বেনিয়ম, ঠিকাদারদের কাছে কাটমানি, ঔদ্ধত্য, সন্ত্রাসের জবাব দিয়েছেন জঙ্গলমহলের মানুষ।”

ছবি- অমিত সিং দেও

[রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বলি বাবা, শ্রাদ্ধের দিন পঞ্চায়েত ভোটে জিতলেন ছেলে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ