দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: গ্রামের মহিলাদের শিক্ষার আলোয় আনতে চান তিনি। আর সেই উদ্দেশেই এবার পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হয়েছেন ২৩ বছরের স্নাতক রাখি রায়। মগরা ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৮০ নং বুথ থেকে এবার গ্রামসভায় দাঁড়িয়েছেন। সম্পূর্ণ ১০০ শতাংশ এস সি অধ্যুষিত বনেরমাঠ গ্রামের দ্বিতীয় মহিলা হিসেবে কলা বিভাগে স্নাতক হয়েছেন রাখি। বাবা খোকন রায় দুই বারের গ্রামসভার সদস্য ছিলেন। এবার এই বুথটি মহিলা সংরক্ষিত। গ্রামের মানুষের চাওয়া পাওয়াকে সম্মান জানিয়ে তাই রাখি এই বুথ থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে লড়াই করছেন।
রাখির একটাই আফসোস, গ্রামের মহিলারা সেভাবে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে না। তাঁর মনে হয়েছে এই মানুষগুলির মনে যদি শিক্ষার আলো প্রবেশ করানো যায় তবে সবাই একদিন সমাজে নিজের পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। বিশ্বকবির গানের কলি তাঁকে প্রেরণা জোগায়। “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে।” মগরা ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতে বনের হাট, বালিসাবার, ভেড়িকুঠি তিনটি গ্রাম নিয়ে ২৮০ নং বুথে ভোটারের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। রাখি ভাগের জমিতে বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি কঠিন লড়াই চালিয়ে কলা বিভাগে স্নাতক হন। পাশাপাশি কম্পিউটার নিয়েও আলাদা প্রশিক্ষণ নেন। রাখি জানিয়েছেন, তাঁর দুঃখ একটাই, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর গ্রামের মেয়েরা শিক্ষার আলো দেখেনি। বনেরহাট গ্রামে একটি প্রাথমিক স্কুল ও একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে। অধিকাংশ মেয়েই প্রাথমিক স্তরের পর পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। তাদের অধিকাংশই আর্থিক কারণে পড়া ছেড়ে দিয়ে চাষের কাজ, দিনমজুরের কাজে নেমে পড়ে। এদেরও যে সমাজকে কিছু দেওয়ার থাকতে পারে পরিবারের লোকেরা তা বুঝতে পারেন না।
রাখির ক্ষেত্রে তাঁর বাবা তাকে সবরকমভাবে সাহায্য করেছেন বলেই পড়াশোনার ক্ষেত্রে তিনি এতটা এগোতে পেরেছেন। গ্রামের মহিলাদের আগামী দিনে শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে বছর খানেক ধরে জীবনে পড়াশোনার কতটা প্রযোজন আছে তা বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাতে অনেকটা সফলও হয়েছেন রাখী। অনেকে এখন পড়াশোনা করছে। রাখি জানিয়েছেন, নির্বাচনে জিতলে তিনি মহিলাদের জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তাঁদের হাতে কলমে কাজ শিখিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করাবেন। পাশাপাশি গ্রামের মেয়েদের উচ্চশিক্ষা যাতে মাঝপথে থেমে না যায়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। রাখির মতে মেয়েরা যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয় তবে সমাজের যে কোনও সমস্যা খুব সহজেই দূর করা সম্ভব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.