প্রতীকী ছবি।
নব্যেন্দু হাজরা: রসগোল্লা তুমি কার! বাংলা না ওড়িশার? বঙ্গের সঙ্গে পড়শি রাজ্যের জিআই (GI) স্বীকৃতির এই যুদ্ধ শেষ হলেও এবার আবার নয়া লড়াই। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার (South 24 Parganas) মগরাহাটের (Magrahat) শিল্পীদের ‘সিলভার ফিলিগ্রি'(Silver Filigree)-র জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন করতে চলেছে রাজ্য। এখানকার শিল্পীদের তৈরি রুপোর গয়নার উপর জটিল নকশা এবং সূক্ষ্ম কারুকার্য ভুবনখ্যাত। দেশে-বিদেশে রফতানি হয়। সেই জিনিসই আবার হাতঘুরে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয় বাংলার বাজারে। এমনকী ওড়িশার কটক এই কাজের জন্য বিখ্যাত হলেও বহু জিনিস বাংলা থেকে সেখানে যায়। তাই এবার মগরাহাটের ‘সিলভার ফিলিগ্রি’ বা রুপোর বাট থেকে যে পাতলা সূক্ষ্ম নকশা, যা গহনা বা শোপিস তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় তার স্বীকৃতি দাবি করছে বাংলা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরের তরফে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানানোর পর সম্প্রতি সিলভার ফিলিগ্রি-র জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে ওড়িশার কটক। কিন্তু তাতে দমে যেতে রাজি নয় বাংলাও। এবার এই স্বীকৃতির দাবি করা হতে চলেছে বাংলার তরফেও। এর আগে বিভিন্ন প্রদেশের আম ঠাঁই পেয়েছে দেশের জিআই-তালিকায়। মালদহের হিমসাগর-ফজলির পরে অন্ধ্রপ্রদেশের বেগমফুলি, উত্তরপ্রদেশের মালিহাবাদী-দসেরি। ঢোকরা-শিল্পেও বস্তারের পরে নিজের নাম জুড়েছে বাংলা। আর রসগোল্লার ক্ষেত্রে বাংলার পর নাম জুড়েছে ওড়িশারও। এবার রুপোর জিনিসে তারের নকশার যে কাজ, তার স্বীকৃতি কটকের পাশাপাশি বাংলাও দাবি করছে।
মগরাহাটে সিলভার সিলিগ্রির ছোট কারখানার ক্লাস্টার রয়েছে হাজারেরও বেশি। বহু বছর ধরে মগরাহাট ২ ব্লক ধামুয়া উত্তর, ধামুয়া দক্ষিণ হোটর পঞ্চায়েত এলাকায় রত্না, পাঁচপাড়া, মৌখালি, হেঁড়িয়া, বকনড়, বার মৌখালি-সহ ২০-২৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ রুজি-রোজগারের কারণে রুপোশিল্পের উপরে নির্ভরশীল। ওই এলাকায় ছোট ছোট রুপোর কাজের কারখানাও গড়ে উঠেছে। ওই সব কারখানার কাঁচামাল (রুপো) কলকাতার বড়বাজার থেকে আসে। কয়েক কিলোগ্রাম ওজনের রুপো প্রথমে গালাই কারখানায় নিয়ে গিয়ে গলাতে হয়। ঢালাই করে পাত তৈরি করা হয়। এর পরে সেই পাত কারখানায় এনে মেশিনের সাহায্যে তা থেকে সরঞ্জাম বা অলংকার তৈরি হয়।
অলংকারের মধ্যে তৈরি হয় হার, চুড়ি, দুল, বালা, প্রতিমার থালা, শো-পিস সহ নানা রকম জিনিস। তৈরির পরে সে সব চলে যায় বড়বাজারেই। সেখান থেকে যায় রাজস্থান, গুজরাত, দিল্লি, মুম্বই-সহ বিভিন্ন রাজ্যের পাইকারি বাজারে। প্রচারের অভাবে এখানকার শিল্পীরা যোগ্য মর্যাদা পান না। ভিনরাজ্যের মানুষ অনেকক্ষেত্রে এখানকার রুপোর জিনিসপত্রও কটকের ভেবে কেনেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.