স্টাফ রিপোর্টার: মায়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক জেনে ফেলাতেই কি খুন হতে হল সুস্মিতা সাধুকে? আর সেই খুন দেখে ফেলায় প্রাণে মেরে ফেলা হল ছোট বোন পুষ্পিতাকে? মহম্মদবাজারে দুই বোন খুন কাণ্ডে নয়া মোড়৷ মৃতাদের মামা রামপ্রসাদকে জেরা করে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল পুলিশ৷ প্রথমে বিভ্রান্তিমূলক কথা বললেও, একটা সময় পর আর নার্ভ ধরে রাখতে না পেরে রামপ্রসাদ তার দোষ কবুল করে৷ তাকে গ্রেফতার করেছে মহম্মদবাজার থানার পুলিশ৷
শনিবার দুই বোন খুনের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া চপ্পলের মাপের সঙ্গে রামপ্রসাদের পায়ের ছাপ মিলে যাওয়ায় পুলিশ চেপে ধরে তাকে৷ সেই চটির সূত্র ধরেই দফায় দফায় জেরা করা হয় রমাপ্রসাদকে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, রামপ্রসাদ জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সে দিদির বাড়ি যায়৷ পাড়ার একটি ছেলের সঙ্গে মেলামেশা নিয়ে বড় ভাগ্নি সুস্মিতার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়৷ সেই সময় সুস্মিতা তাঁর মা অপর্ণাদেবীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে মামাকে প্রশ্ন করে৷ বাড়িতে তখন অপর্ণাদেবী বা বড় কেউ না থাকায় মামা-ভাগ্নির কথা কাটাকাটি চরমে পৌঁছয়৷ পুলিশের দাবি, রামপ্রসাদ স্বীকার করেছে, মাথা গরম অবস্থায় দোতলার সিঁড়ির বাঁকে বঁটি দিয়ে গলা কেটে ফেলে বড়ভাগ্নি সুস্মিতার৷ পুষ্পিতা তখন নিচের তলায় পড়াশোনা করছিল৷ দিদির চিৎকারে সে উপরে উঠতে গিয়ে খুনের ঘটনাটি দেখে ফেলে৷ তাই ছোট ভাগ্নি পুষ্পিতাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া আর বাঁচার রাস্তা খুঁজে পায়নি রামপ্রসাদ৷ সেই বঁটি দিয়েই পুষ্পিতারও গলা কাটে সে৷ দীর্ঘ জেরায় রামপ্রসাদ এ সব কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশের দাবি৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপ্রসাদ অপর্ণাদেবীর বাড়ির পাশেই থাকত৷ বোন অপর্ণার সম্পত্তির দিকেও তার নজর ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে৷ অপরদিকে অপর্ণা সাধুর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে মুরারই থানার রাজগ্রামের সুবল মণ্ডলের৷ প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এই খবর পেয়ে শনিবার মহম্মদবাজার থানার পুলিশ সুবলকে আটক করে৷ দুই নাবালিকা খুনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট রবিবার পুলিশের হাতে এসেছে৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, গলা কেটেই দু’জনকে খুন করা হয়েছে৷ অবৈধ সম্পর্ক নাকি সম্পত্তির লোভে খুন? এই দুই প্রশ্নকে সামনে রেখেই তদন্ত শুরু করে পুলিশ৷ তবে রামপ্রসাদের স্বীকারোক্তির পরে তদন্ত যে নির্দিষ্ট একটি দিকের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা স্বীকার করেছে পুলিশ৷ তবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে শুধুমাত্র মাথাগরম করেই দুই ভাগ্নিকে খুন করেছে রমাপ্রসাদ, নাকি তার পিছনে আরও অন্য কোনও কারণ রয়েছে৷ অপর্ণা সাধু ও সুবল মণ্ডলকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করার সম্ভাবনাও রয়েছে৷ জানার চেষ্টা করা হবে, এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে দুই মেয়ে সুস্মিতা ও পুষ্পিতার সঙ্গে অশান্তি কোন পর্যায়ে ছিল৷ সেই অশান্তি এড়াতে এই খুনের পিছনে অপর্ণাদেবী বা সুবল মণ্ডল কোনও ভাবে জড়িত কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷ শুধু তাই নয়, অপর্ণাদেবী ও তাঁর ভাই ধৃত রামপ্রসাদকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার সম্ভাবনাও রয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.