শঙ্করকুমার রায়, রায়গঞ্জ: মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তুলকালাম উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে। প্রকাশ্য রাস্তাতেই দুষ্কৃতীরাজ। চলল মুহূর্মুহূ গুলি বৃষ্টি। মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে আসছিলেন বিজেপির প্রার্থী। অভিযোগ, সেই মিছিলকে লক্ষ্য করেই শুরু হয় গুলিবর্ষণ। দুষ্কৃতী তাণ্ডবে কার্যত নাজেহাল গোটা রায়গঞ্জ শহর। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই আক্রমণ চালিয়েছে। যদিও বিজেপির দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস। গোটা ঘটনাটি বিজেপি সাজিয়ে পরিবেশন করে সিনেমার শুটিং করছে। এমনটাই দাবি উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি অমল আচার্যর।
জানা গিয়েছে, সকাল ১০.৩০ মিনিটে স্থানীয় কমলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের তরপে বিজেপি প্রার্থী সমরু ওঁরাও মনোনয়ন জমা দিতে যান। অভিযোগ, তাঁর কপালে রিভলভার ঠেকিয়ে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে রায়গঞ্জে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় জেলা বিজেপি। বেলা ১২টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। পরে ২.৪৫ মিনিটে বিজেপি প্রার্থীরা প্রায় ৭০ জন কর্মী সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন তুলতে ও জমা দিতে ব্লক অফিসের দিকে যায়। সেই সময় ব্লক অফিস থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের কাছে মিছিল পৌঁছলে শুরু হয় আক্রমণ। হাসপাতাল লাগোয়া ওষুধের দোকানের সামনে থেকে মিছিলকে লক্ষ্য করে আচমকাই গুলি ছুটে আসে। এরপর মুড়ি-মুড়কির মতো গুলি ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। মাথা বাঁচাতে বাজারের বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নেয় বিজেপি কর্মীরা। অভিয়োগ, দুষ্কৃতীরা সেই দোকানগুলিতে ভাঙচুর চালায়। প্রায় ২০ রাউন্ড ও গুলি ও ছ’টা বোমা ফেটেছে রায়গঞ্জে। এর জেরে বিজেপি সাদারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকার-সহ চারজন আহত হয়েছেন। এই আক্রমণের ঘটনায় তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন জেলা বিজেপি সভাপতি নির্মল দাম। এই ঘটনার পরেই রায়গঞ্জ বাজারের উকিল পাড়ার সামনে বিক্ষোভ অবরোধ শুরু করেছে জেলা বিজেপির কর্মী সমর্থকরা।
সেই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকেই নির্মল দামের হুমকি, মনোনয়ন তোলা ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া ব্লক অফিস থেকে সরিয়ে এসডিও অফিসে নিয়ে যেতে হবে। আগামী ছ’তারিখের মধ্যে এই কাজ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে বিজেপি। ইতিমধ্যেই দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনায় রায়গঞ্জ থানায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি।
অভিযোগ পেয়ে এসপি শ্যাম সিং জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে রয়েছে পুলিশ। বোমাবাজি হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরকম কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই হামলার প্রতিবাদে জেলাশাসকের কাছেও অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় জেলা বিজেপি। তবে তা ফলপ্রসূ হয়নি। জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে না পারায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ বিজেপি এলাকার নেতৃত্ব।
অন্যদিকে, নির্মল দামের অভিযোগ উড়িয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্য। তিনি বলেছেন, ‘তৃণমূলের অবস্থা এমনটাও খারাপ হয়নি যে বোমা গুলি চালিয়ে বিরোধীদের আটকাতে হবে। আসলে বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। তাই দোষারোপ করার জন্য ছুঁতো খুঁজছে। তাছাড়া বিজেপি তো তৃণমূল ভিন্ন কিছু দেখতেই পায় না। উলটে বিজেপিই তো আক্রমণ করছে। স্থানীয় মারাইকুরা পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূলকর্মী মুস্তাফিজুর রহমানকে ছুরি মারা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই তৃণমূল কর্মীকে রায়গঞ্জের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। বিজেপি কর্মীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।’
বিজেপির অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছেন, রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, আচমকা এই হামলার ঘটনায় নিন্দনীয়। তবে এই হামলার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। এলাকার কাউন্সিলরকে বিষয়টা জানিয়েছি। তিনিই যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে, রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিট হাসপাতাল লাগোয়া এলাকাতেই গুলি ও বোমাবাজির জেরে রোগীরাও তটস্থ। আসন্ন প্রসবা, সদ্যোজাতরা গুলি ও বোমার আওয়াজে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আক্রমণ থেকে বাঁচতে অনেকেই ছোটাছুটি শুরু করে। এর জেরে অটোর ধাক্কায় আহতও হয়েছেন একজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.