সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো, বর্ধমান: বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ওষুধে কাজ। মনোনয়নের প্রথম দুই দিন মার খেয়ে পিছু হঠেছিল বিজেপি। বুধবার উলটো চিত্র। বিজেপির পাল্টা প্রতিরোধে অনেক জায়গাতেই পিছু হঠল শাসকদল। আর এই ঘটনা ঘিরে এদিন দিনভর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকা।
এদিন পূর্ব বর্ধমানের কালনা-১ ব্লকে মনোয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও বিজেপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। বিজেপির দাবি, তারা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তৃণমূল নেতা রাজকুমার পাণ্ডের নেতৃত্বে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। পরে বিজেপির আরও কর্মী সমর্থক এসে পাল্টা দিয়েছে। এমনকী তৃণমূল নেতা রাজকুমার পাণ্ডেকেও হেনস্তা করা হয়েছে। কয়েকজন তৃণমূলকর্মী পালটা মারে জখম হয়েছেন। বিজেপি নেতা ধনঞ্জয় হালদার বলেন, “রাজকুমার পাণ্ডে হুমকি দিচ্ছিল এখানে বিজেপি করা চলবে না। আমাদের কর্মীদের মেরে বিডিও অফিস থেকে বের করে দেয়।” রাজকুমারবাবু দাবি করেছেন, বিজেপিই তাঁদের কর্মীদের মারধর করেছে।
একইভাবে মন্তেশ্বর ব্লকেও গত দুই দিন তৃণমূলের দাপটে মনোনয়নই তুলতে পারেনি বিজেপি। বুধবার কিন্তু অন্য দৃশ্য দেখা গিয়েছে। এদিন বিজেপির কর্মী সংখ্যা বেশি থাকায় পিঠটান দেয় তৃণমূলের বাহিনী। কার্যত বিজেপির দাপটে পিছিয়ে যায় শাসকদল। কার্যত বিনা বাধায় মনোননয়পত্র জমা দিয়েছে বিজেপি। বর্ধমান-২ ব্লকের বড়শুলেও এদিন বিজেপি কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ।মনোনয়নপত্র জাম দিতে গেলে বিজেপি কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এমনকী সেখানে খবর ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন কয়েকজন সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিক। শাসকদলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ। এদিন বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী, জেলার পর্যবেক্ষক অনল বিশ্বাস-সহ এক প্রতিনিধি দল জেলা শাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের সঙ্গে দেখা করে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছেন। সন্দীপবাবু বলেন, “জেলার কোথাও বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে দিচ্ছে না। জেলা শাসককে বলেছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।” এদিন মহকুমা শাসকের দফতরে স্মারকলিপি দিতে গেলে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়।
এদিন পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় বিজেপি কর্মীদের হাতে বেদম মার খেয়ে গুরুতর জখম অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি তৃণমূলের দুই কর্মী৷ আহত আরও চার তৃণমূল কর্মী৷ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিন দুপুরে কাঁকসার বিডিও অফিস থেকে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষে তৃণমূলের জনা কয়েক কর্মী বাইকে ঘরে ফিরছিলেন৷ সেই সময় দুই নম্বর জাতীয় সড়কের রাজবাঁধের ওভারব্রিজের উপর বিজেপি কর্মীরা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পরেন বলে অভিযোগ৷ বাঁশ, রড দিয়ে বেদম মারা হয় তাদের৷ স্থানীয় বাসিন্দারাই তাঁদের উদ্ধার করে রাজবাঁধের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠায়৷ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জখম দুই তৃণমূল কর্মী শ্যামাপ্রসাদ বাড়ুই ও পান্নালাল ঘোষের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ তাদের মাথা, কান ও হাতের আঘাত গুরুতর৷ আরও চার তৃণমূল কর্মীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়৷ জখম তৃণমূল কর্মীদের চিকিৎসা দেখভাল করতে এদিন হাসপাতালে যান তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল নেতা দেবদাস বকসি৷
দেবদাসবাবু বলে, “পঞ্চায়েত নির্বাচন বানচাল করতে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে বিজেপি৷ নির্বাচনে জিততে পারবে না জেনেই হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে তারা৷ এইভাবে শাসকদলকে ভয় পাওয়ানো যাবে না৷” যদিও এটি তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দের ফল বলেই জানিয়েছে বিজেপির ব্লক সভাপতি রমন শর্মা৷ তিনি বলেন, “তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে বিডিও অফিসে হাজির থেকে দলের মনোনয়ন দাখিল করতে হচ্ছে৷ এই পর্যায়ে পৌঁছেছে শাসকদলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব৷ এই ঘটনাও তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দের ফলেই হয়েছে৷ আমোদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে৷” এদিকে এই ঘটনার পরই বিজেপির আসানসোল জেলা সহ-সভাপতি মনোহর কোনারের রাজবাঁধের হোটেলে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তৃণমূলের বাইক বাহিনী। মনোহরবাবু বলেন,“ বুধবার সকালে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে গিয়ে তৃণমূলের কর্মীরা বাধা দেয়৷ তারফলে পুরো মনোনয়নে ব্যর্থ হন তারা৷ সেই ক্ষোভেই আমার হোটেলে হামলা করে তৃণমূলের বাইক বাহিনী৷ পুলিশকে জানিয়েছি৷ নির্দিষ্টভাবে কাঁকসা থানায় অভিযোগ দায়ের করব৷”
মনোনয়নের প্রথমে প্রথম পর্বে চাপে থাকলেও এবার পাল্টা প্রতিরোধের রাস্তা অবলম্বন করছে বিজেপি বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.