সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রতি পরিবারের জন্য কেরোসিন তেলের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু অনেক গ্রাহকই জানেন না তাদের ঠিক কতটা কেরোসিন পাওয়া উচিত। কারণ অধিকাংশ ডিলার নিজেদের মতো ‘কোটা’ করে রাখেন। তার ফলে তেলের পরিমান বাড়লেও কোটা একই থাকে। সেই ফাঁকে ডিলার একতরফা কাঁচা পয়সা হাতিয়ে নেয়। ডিস্ট্রিবিউটরদের একাংশ এক কাঠি উপরে। তারা আবার সেই তেল পাচার করে দেয় অন্যত্র। যে কেরোসিনে চলছে বাস, অটো, অন্যান্য গাড়ি।
[ক্রেতা ভেবে পুলিশকেই ফোন! জালে নারী পাচারকারী]
দুর্নীতির জাল ছড়ানো হয় একেবারে শুরু থেকে। ডিস্ট্রিবিউটরদের বড় অংশ শুরুতেই কোপ মারে। তাদের হাতে কেরোসিন এলে তা পাচার হয়ে যায়। সময় অনুযায়ী গ্রাহকদের বরাদ্দ বেশি-কম হয়। বরাদ্দ যাই থাক না কেন একটি গ্রাহক পরিবার বহুদিন আগে থেকে যা কেরোসিন পায় তাকে সেই পরিমান তেলই দেয় ডিলাররা। ফলে সংশ্লিষ্ট ডিলার হিসাব করে ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে কেরোসিন নেয়। আর যে কেরোসিন বেঁচে যায় সেই পরিমান তেলের দাম ডিস্ট্রিবউটরদের থেকে বুঝে নেয় ডিলার। কারণ বেঁচে যাওয়া কেরোসিন ডিলারের কালোবাজারে বিক্রি বা পাচার করা তুলনামূলক শক্ত কাজ। তাই তারা ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছেই হিসাব বুঝে নেন। বিভিন্ন ডিলারদের নামে বরাদ্দকৃত ‘বাড়তি’ কেরোসিন ডিলাররা আর নিজের কাছে না নিয়ে গিয়ে ওখান থেকেই টাকা নিয়ে নেন।
[সরকার পাঠাচ্ছে খাদ্যসামগ্রী, কোন চক্র উধাও করছে রেশনের চাল-গম?]
[পাচারের ছক বদল, অনলাইনে বিক্রি হাতির দাঁত-সাপের বিষ]
আর এই ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকেই লিটার লিটার কেরোসিন চলে যাচ্ছে বাস মালিক বা অটো মালিকদের কাছে। সেই জ্বালানি তেলে চলছে বাস, অটো। এই কারবার রুখতে অভিযান চললেও তা বন্ধ করা যায় না। একটি বাস দীর্ঘদিন কেরোসিনে চলার ফলে মেশিন পার্টস অকেজো হয়ে যায়। মালিক তা জানলেও পেট্রোল, ডিজেলের থেকে কেরোসিনে যে মুনাফা অনেক বেশি। শুধু কি তাই? ড্রাম–ড্রাম কেরোসিনে ডিলাররা বালতি বালতি জলও মেশায়! আর এই সব অপরাধ জনতা বা সাধারণ মানুষ ধরে ফেললে সাময়িকভাবে তাকে সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু সেখানেও খাদ্য দপ্তরের সঙ্গে চলে টাকার খেলা। অনেক অভিযুক্তই এভাবে মিটিয়ে নেয়। লাইসেন্স ফিরে পেয়ে ফের শুরু হয় দুর্নীতি।
ছবি: সুনীতা সিং
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.