শ্রীকান্ত দত্ত, ঘাটাল: বাড়ি বিয়ে মানেনি। অতএব গন্তব্য মন্দির। ভগবানকে সাক্ষী রেখে সিঁদুরদান। ব্যস, চার হাত এক হয়ে গেল। গ্রামবাংলায় নির্ঝঞ্ঝাটে বিয়ে করার জন্য দেবালয় অনেকের পছন্দের জায়গা। এপর্যন্ত সমস্যা নেই। কিন্তু গোল বাধছে অন্য জায়গায়। দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু মন্দিরে নাবালকরা বিয়ে সেরে ফেলছেন। পুরোহিত কাজটা অপরাধ জানলেও দক্ষিণার মায়া ছাড়তে পারছেন না। ঘাটালের বিশালাক্ষ্মী মন্দিরে বিয়ের নামে এভাবেই আঙন ভাঙা হচ্ছে।
[১১৮ ফুট উঁচু মন্দিরে দেবী রাজেশ্বরীর আরাধনা, মাতোয়ারা সুতি]
মাঘ মাস চলছে। আসছে ফাল্গুন। বিয়ের ভরা মরশুম। আর এই সময় প্রকাশ্যে এই ঐতিহাসিক মন্দিরে রোজ অন্তত তিন থেকে চার জোড়া দম্পতির বিয়ে হচ্ছে। এই দেবালয় ৪০০ বছরের পুরনো। যার প্রতিষ্ঠতা রাজা শোভা সিংহ। প্রত্যেক দিন পরপর বাল্য বিবাহ হলেও প্রশাসনের তা নজরে আসে না বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। ঘাটাল-চন্দ্রকোণা রাজ্য সড়কের পাশে বড়দা এলাকায় রয়েছে মন্দিরটি। অথচ এই এলাকা থেকে বিডিও অফিস মাত্র ২ কিলোমিটার। ঘাটাল থানাও দেড় কিলোমিটারের মধ্যে। মন্দিরে বিয়ের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের স্পষ্ট নির্দেশিকা আছে ভোটার কার্ড বিয়ে হবে না। অথচ ওই মন্দিরের পুরোহিত অবলীলায় বিয়ে দিচ্ছেন। গোটা ঘটনায় তিনি যে জ্ঞানপাপী তা মানছেন পূজারি প্রশান্ত বটব্যাল। এই নিয়ে তাঁর বক্তব্য, থানা থেকে বলেও গিয়েছে নাবালকদের বিয়ে দেওয়া যাবে না। বিয়ে হলে তা নথিভুক্ত করাতে হবে। এরপর আইন ছেড়ে অন্য যুক্তি দেখান পুরোহিত। তাঁর সাঁফাই, বিয়ে না দিলে নাবালক-নাবালিকার মন্দিরে দাঁড়িয়ে মায়ের সামনে কপালে সিঁদুর লেপে চলে যায়। এতে তাদের ভাত নষ্ট হচ্ছে।
[জলপাইগুড়ির হনুমান মন্দিরে পূজিত হন নেতাজিও]
সংবাদ প্রতিদিন-এর কাছ থেকে খবরটি জানতে পেয়ে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন ঘাটালের বিডিও অরিন্দম দাশগুপ্ত। তবে তাঁর বক্তব্য মন্দিরে এমন বাল্যবিবাহের খবর জানা নেই। কেউ যদি এমন করে তাহলে বিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশালাক্ষ্মী মন্দিরে এমন কিছু হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও। দুর্গার মূর্তির সামনে এভাবে বিয়ে করার প্রবণতা উর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের বক্তব্য, শুধু প্রশাসন নয় মন্দিরের সেবাইতকেও এগিয়ে আসতে হবে। নাহলে সচেতনতা শিকেয় তুলে এভাবে অল্প বয়সে বিয়ে চলতে থাকবে।
ছবি: সুকান্ত চক্রবর্তী