বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: মানুষের মনে থাকা ভয়ের মধ্যে আনন্দের কোনও মানে হয় না। এই ভাষাতেই কার্নিভ্যাল নিয়ে মন্তব্য করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শুক্রবার কার্নিভ্যাল প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘কার্নিভাল নিয়ে কিছু বলার নেই । একদিকে মানুষ খুন হচ্ছেন আর অন্যদিকে মস্তি হচ্ছে, আনন্দ হচ্ছে, মেলা হচ্ছে। আনন্দ হওয়া উচিত। তা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু মানুষের মনে যদি ভয় থাকে, মৃত্যুভয়, অশান্তি থাকে, তাহলে সেই আনন্দের কী মানে হয়? কার্নিভ্যালের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পুজো কমিটিগুলোকে দশ হাজার টাকা থেকে পঁচিশ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। ঘুষ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা দিদিমণিকে দিয়ে তাদের পুজো উদ্বোধন করেন। সাধারণ মানুষ পুজোতেও আনন্দ করতে পারছেন না। ভয়ের পরিবেশে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। এই রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না? এই রাজত্ব মানুষ চায় না। এটা চলতে পারে না।’
[আরও পড়ুন: জিয়াগঞ্জে সপরিবারে শিক্ষক খুনের ঘটনায় ঘনীভূত রহস্য, ফের প্রকাশ্যে রাজ্য-রাজ্যপাল তরজা]
শুক্রবার নদিয়ার ধুবুলিয়া থানার মুরাগাছার বনগ্রামে বিজেপির নদিয়া উত্তর জেলার সাংগঠনিক সভাপতি মহাদেব সরকারের বাড়িতে গিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। এরপর তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘গত কয়েকদিনে এ রাজ্যে আমাদের দলের চার জন খুন হয়েছেন। মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের নিহত শিক্ষক আমাদের সংঘের লোক ছিলেন। চাপড়াতে আহমেদ শেখ নামে আমাদের একজন লড়াকু কার্যকর্তাকে খুন করা হয়েছে। শান্তিপুরের খুন হওয়া পুরোহিত আমাদের কার্যকর্তা ছিলেন। নানুরেও একজন কর্মীকে খুন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মনে শান্তি নেই। মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। বিজেপিকে ঠেকানোর সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুলিশ কেস দিয়েও বিজেপিকে আটকানো যাচ্ছে না। এটা বুঝে যাওয়ার পর শাসকদল তাই বিজেপির লোকজনকে প্রাণে মারার চক্রান্ত করছে। পুলিশ-প্রশাসন গুন্ডা, বদমাইশ, সমাজবিরোধীদের হাতে চলে গিয়েছে। এই পার্টি, সরকার কোনওটাই তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। তার পরিণাম হিসাবেই সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছেন।’
নিহত বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আমরা অবশ্যই নিহত সব পরিবারের পাশে রয়েছি। সমস্ত রকম দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি। ইতিমধ্যেই আশি জন পরিবারকে নিয়ে আমরা তর্পণ করেছি, শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছি। আমাদের সারা ভারতের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট এসেছিলেন। বিজেপি সমস্ত কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে রয়েছে, আগামী দিনেও থাকবে। শুধু কর্মীরাই নয়, সাধারণ মানুষও উৎপীড়িত হচ্ছেন। তাদের সঙ্গেও আমরা রয়েছি।’ রাজ্য প্রশাসনকে তীব্র আক্রমণ করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘গত দুই-তিন বছর ধরে কয়েকশো লোক খুন হয়েছেন। একজনেরও সাজা হয়নি। একজন মানুষের ফাঁসি হয়েছে কি? আমাদের কথা ছেড়ে দিন, ওদের বিধায়ক খুন হল, ভদ্রেশ্বরের চেয়ারম্যানকে খুন হতে হল। অথচ দোষীদের কারওর ফাঁসি হয়নি এখনও। আসলে এই প্রশাসনের কোনও যোগ্যতাই নেই। এরা শুধু বিরোধীশক্তিকে দাবিয়ে রাখতে পুলিশকে ব্যবহার করছে। মানুষের জীবনের কোনও মূল্য নেই। নিজেদের কর্মীদের রক্ষা করতে পারছে না। নিজেরা মারামারি করে মরছেl গুন্ডারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দোষ দেওয়া হচ্ছে বিজেপিকে। আমাদের দলের পঁচাশি জন খুন হয়েছেন। এই সরকারের আর চলা উচিত নয়। এই সরকার যতদিন থাকবে, এই রকম চলতে থাকবে।’
বীরভূমে বিজেপি কার্যকর্তার বাড়ির পিছন থেকে বোমা উদ্ধার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘কোথায় বোমা পাওয়া গিয়েছে, তা আমার জানা নেই। খবরের কাগজে তো আমি দেখলাম না। তবে বীরভূমের রাস্তাঘাটে বোমা তৈরি হয়। ওটা ওখানকার কুটিরশিল্প। বিষয়টি বলতে পারবেন ওখানকার কেষ্ট।’