বাবুল হক, মালদহ: মেয়েকে স্কুলে ভরতি করবেন? তার আগেই মুচলেকা লিখে দিতে হবে, ‘আঠারো বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেব না।’ তাহলেই পঞ্চম শ্রেণিতে ভরতির সুযোগ মিলবে মেয়ের। বাল্যবিবাহ রুখতে ছাত্রীদের ভরতির ক্ষেত্রে এমনই নিয়ম চালু করল মালদহের আদিবাসী অধ্যুষিত ব্লক হবিবপুরের দাল্লা চন্দ্রমোহন হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফর্মেই লেখা হয়েছে সেই মুচলেকা। অভিভাবককে অঙ্গীকার করতে হবে, ‘আমার মেয়ের বিয়ে ১৮ বছরের আগে কোনওমতেই দেব না।”
[ফুলশয্যার রাতে নববধূর রহস্যমৃত্যু, জা-স্বামীর অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ]
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বাল্যবিবাহের ঘটনা সহজে রোখা যাচ্ছে না। সপ্তম কিংবা নবম শ্রেণির পাঠ চুকিয়েই মেয়েরা সাত পাকের বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এর জন্য অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছে প্রশাসন। সীমান্ত গ্রামের এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ি নাবালিকা ছাত্রীদের বিয়ে আটকাতে আগাগোড়াই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সহ-শিক্ষকদের সহযোগিতায় অনেক ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ করতে পেরেছেন তিনি। কখনও চেষ্টা করেও পারেননি। দাল্লা চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেববাবুর কথায়, “কিছুদিন আগেই স্কুলের এক ছাত্রীর বিয়ে আটকাতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম। অভিভাবকের জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে। তারপরই এই নতুন নিয়ম চালুর সিদ্ধান্ত নিতে একপ্রকার বাধ্য হই।”
[পণের দাবিতে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, কাঠগড়ায় পুলিশ আধিকারিক]
মালদহের হবিবপুরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় রয়েছে এই দাল্লা চন্দ্রমোহন হাইস্কুল। ডজনখানেক গ্রামের ছেলেমেয়েদের শিক্ষালাভের জন্য বরাবরই বিশেষ ভূমিকা পালন করে এসেছে এই প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা ঘুরেফিরে সেই একটাই, বাল্যবিবাহ। আর এই সামাজিক ব্যাধির গোড়ায় কুঠারাঘাত করতে স্কুলের নয়া বিধান, ভরতির ফর্মেই মুচলেকা লিখে দিয়ে মেয়েকে ভর্তি করুন। অভিভাবক মহল থেকে এনিয়ে কোনও রকম আপত্তি ওঠেনি। বরং প্রশংসাই পাচ্ছে এই উদ্যোগ। এমনকী জেলা প্রশাসনের কর্তারাও এমন অভিনব বিধানের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। মালদহ জেলা শিক্ষা দপ্তরের শীর্ষকর্তা তথা ডিআই (মাধ্যমিক) তাপস বিশ্বাস বলেন, “চন্দ্রমোহন হাই স্কুল খুব ভাল নিয়ম চালু করেছে। বাল্যবিবাহ সমাজের মাথাব্যথা। তার শিকড় তুলে ফেলতে এই ধরনের পদক্ষেপ আশা করি সাফল্য আনবে। আমরা জেলার সমস্ত স্কুলেই এই মুচলেকা নেওয়ার পদ্ধতিটি চালু করার চেষ্টা করব।” জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অশোককুমার পোদ্দার বলেন, “প্রশাসনকে নয়া পথ দেখিয়েছে চন্দ্রমোহন স্কুল। জেলা জুড়েই এই পদ্ধতি চালু হওয়া দরকার।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.