Advertisement
Advertisement

শীত আসতেই খেজুর গুড়, পাটালি তৈরির ব্যস্ততা

এবারে বাজারে কীরকম দামে আসতে চলেছে নতুন গুড় আর পাটালি?

Winter Has Come, Patali And Khejur Gur Making Is In Hurry
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:November 22, 2016 10:02 am
  • Updated:November 22, 2016 10:02 am

সুনীপা চক্রবর্তী: রাজ্যে ঢুকে পড়েছে কনকনে শীতল হাওয়া৷
ভোরের দিকে তো বটেই, রাতেও তার উপস্থিতি ভালই জানান দিচ্ছে শীত৷ আর শীত মানেই গরম জামাকাপড়, চাদরের নিচে নিজেকে জড়িয়ে রাখার পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে রসনাতৃপ্তির বিষয়টি৷ শীতকালে নতুন নতুন সবজি বাজারে ওঠে৷ তেমনই যাঁরা মিষ্টি ভালবাসেন, তাঁরাও মুখিয়ে থাকেন শীতকালের জন্য৷ কারণ একটাই৷ শীতকালেই মেলে খেজুর গুড়, পাটালি এবং অবশ্যই নতুন গুড়ের সন্দেশ, রসগোল্লা৷ জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রামে খেজুর গাছগুলিতে এখন তাই সার দিয়ে কলসি বাঁধা রয়েছে৷ সারারাত ধরে কলসিতে টুপ-টুপ করে পড়ছে খেজুরের টাটকা রস৷ এই রস জাল দিয়েই তৈরি হয় গুড়৷ আর যাঁরা এই গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত তাঁদের ব্যস্ততা চরমে ওঠে শীত শুরুর এই সময়টায়৷
ঝাড়গ্রাম থেকে বাইপাস পিচ রাস্তা ধরে জামবনির দিকে এগোলে রাস্তার ধারে ফাঁকা মাঠে ঝুপরি করে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে রয়েছেন খেজুর গুড় তৈরির এই কারিগররা৷ খেজুর গাছের পাতা দিয়ে অনবদ্য হাতের কাজের মাধ্যমে গড়ে তোলা ছোট ঘরগুলি যেন নিজেই একটা শিল্প৷ এক ঝলকে দেখলে মনে হবে অনেকটা ‘ইগলুর’ মতো৷ আর এই ছোট্ট ঘরে বিজলি বাতি ছাড়াই টিম টিমে খুপির আলোয় ওদের বাস৷ সারা দিন ঘুরে ঘুরে ২০-২৫টি খেজুর গাছ কেটে‌ রসের জন্য মাটির হাঁড়ি টাঙিয়ে আসেন৷ কাকভোরে উঠে কনকনে হাড়হিম করা ঠান্ডায় আর শীতে ওরা নাম কা ওয়াস্তে গায়ে হয়তো চাপান পাতলা জামা নয়তো আবার খালি গায়েই বেরিয়ে পড়েন রস সংগ্রহের জন্য৷ রস সংগ্রহ করে সারাদিন ধরে চলে জাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ৷ অবশ্য তার আগে খুব ভোরে রসের হাঁড়ি নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় চলে ‘রস নেবেন গো’ বলে হাঁকডাক৷ সকাল সকাল  হাঁকডাকে জেগে ওঠেন পাড়ার লোকজন৷
শুধু ঝাড়গ্রামই নয় বেলপাহাড়ি, লালগড়, জামবনিসহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন্ গ্রামে শীতের শুরুতে এটাই চেনা ছবি৷ বাইপাসের ধারে শীতের দুপুরে ছোট্ট অস্থায়ী ঘরের সামনে গুড়ে জাল দিতে ব্যস্ত আসমান খান৷ তার সামনে বসে সহযোগী লাহার শেখ সদ্য ফোটানো সাদা ভাত শুধুমাত্র নুন দিয়ে খাচ্ছিলেন৷ সাংবাদিক দেখে খাবার ছেড়েই উঠে এলেন খরিদ্দার ভেবে৷ পরে বুঝতে পেরে হেসে বললেন, “আসলে খরিদ্দার আমাদের কাছে লক্ষ্মী৷ তাই সবার আগে তাঁরা৷”
নদিয়ার নবগ্রামের বাসিন্দা আসমান শেখ ও লাহার শেখের বর্তমান ঠিকানা রাস্তার ধারে অস্থায়ী ঝুপড়ি৷ পরিবার ছেড়ে রাতদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন৷ তরল গুড় আশি টাকা আর পাটালি একশো টাকা কেজি৷ দরদাম করলে অবশ্য কিছুটা কমবে৷ আগামী দু’তিন মাসে কমপক্ষে ৪৫-৫০ হাজার টাকা রোজগার করতে না পারলে ঘরে ফেরা যাবে না৷ আসমান শেখ বলেন,“দেশ অর্থাৎ গ্রাম ছেড়ে তিন-চার মাস শীতের মধ্যে কষ্ট করে পড়ে রয়েছি৷ কিছু রোজগার না করলে বছরের বাকি সময়টা খাব কী? তাই নুনভাত খেয়েও পড়ে থাকি এখানে৷” আর তাই শীতের কাঁপুনিকে অগ্রাহ্য করে সকলকে রসনার আস্বাদন দিয়ে চলেছেন আসমান শেখ, লাহার শেখরা৷

Advertisement

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ