ধীমান রায়, কাটোয়া: কুড়িয়ে পাওয়া এটিএম কার্ডের সঙ্গেই কাগজে লিখে রাখা ছিল পিন নম্বর। তাই ওই এটিএম কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে আর কোনও সমস্যাই হয়নি। দু-পাঁচ হাজার টাকা নয়, নয় নয় করে প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি ব্যালান্স ছিল আ্যকাউন্টে। সেখান থেকে ৯৬ হাজার টাকা কয়েক ধাপে তুলেও নিয়েছিলেন। তা দিয়ে ধার মেটানো, গয়না কেনা থেকে টুকিটাকি কেনাকাটাও ভালই হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা আর হল না। কুড়িয়ে পাওয়া এটিএম কার্ড থেকে টাকা চুরির প্রায় মাসখানেক পর পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন এক গৃহবধূ। মঙ্গলবার সকালে ভাতার থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে পাপিয়া মাজি নামে ওই মহিলাকে। উদ্ধার হয়েছে কিছু টাকাও। বর্ধমান আদালতে তাকে তোলা হলে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগকারী ভাতার বাজারের সারদাপল্লির বাসিন্দা সনৎ পাঁজা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। তিনি মাসখানেক আগে ভাতার থানার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সনৎবাবু পুলিশকে জানিয়েছিলেন, গত নভেম্বর মাসের ১২ – ১৩ তারিখ নাগাদ তার এটিম কার্ডটি কোনওভাবে পকেট থেকে পড়ে গিয়ে হারিয়ে যায়। তার কয়েকদিন পর তিনি জানতে পারেন এটিএম কার্ড হারানোর কথা। জানার পর আ্যকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখেন তার আ্যকাউন্ট থেকে ৯৬ হাজার টাকা তুলে নেওয়াও হয়েছে। তারপরেই তিনি নভেম্বরের শেষের দিকে ভাতার থানার অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার কথা জানানো হয় জেলা পুলিশের সাইবার সেলেও। এরপরেই তদন্তে নামে ভাতার থানার পুলিশ ও সাইবার সেল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে নামার পর ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে জানা যায়, ভাতার বাজারের একটি এটিএম থেকে ওই টাকা তিনটি ধাপে তুলে নেওয়া হয়েছে গত ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে। তারপর পুলিশ ওই এটিএমের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেই ফুটেজ দেখে পুলিশ ভাতার বাজার সংলগ্ন কুলচন্ডা গ্রামের এক যুবককে চিহ্নিত করে। তাকে ওই নির্দিষ্ট সময়ে টাকা তুলতে দেখা যায়। সন্দেহভাজন যুবককে সোমবার রাতে পুলিশ ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। যুবকটি জানায় তার বন্ধুর কাকিমা ভাতার গ্রামের বাসিন্দা পাপিয়া মাজি তাকে এটিএমের কার্ডটি দিয়ে টাকা তুলে দিতে অনুরোধ করাতে সে ওদিন টাকা তুলে দিয়েছে। পুলিশ পাপিয়া মাজিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন, কুড়িয়ে পাওয়া ওই এটিম থেকে তিনি তিন ধাপে ৯৬ হাজার টাকা তুলেছেন। তারপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
জানা গিয়েছে, জনমজুরের কাজ করেন ধৃত মহিলা পাপিয়া। তিনি নিজে এটিএম কার্ড ব্যবহারও করতে জানতেন না। কার্ডটি কুড়িয়ে পাওয়ার পর অন্যজনকে দিয়ে টাকা তুলে তিনি মেয়ের গয়না কিনেছেন। কিছু টাকা ধারদেনা মিটিয়েছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশ ধৃত মহিলাকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছে এই জালিয়াতিতে আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.