ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: কাজের তাগিদে বাড়ি ছেড়ে বামুনগাছিতে থাকতে এসেছিলেন এক যুবতী। বর্ষবরণের রাতে সেই ভাড়া বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন। মদ্যপ অবস্থায় সেই ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে তাঁকে গণধর্ষণ করে এলাকার কয়েকজন দুষ্কৃতী। মঙ্গলবার রাতের পৈশাচিক এই ঘটনায় শিউরে উঠেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, সাম্প্রতিককালে বামুনগাছিতে যেভাবে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বেড়েছে তা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন প্রত্যেক বাসিন্দা। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
বছর কয়েক আগে বামুনগাছির এই এলাকাতেই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে সরব হয়ে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছিল প্রতিবাদী যুবক সৌরভ চৌধুরিকে। হত্যার পর তাঁর দেহ ন’টুকরো করে রেললাইনে ফেলে দিয়েছিল ওই দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য। এলাকাবাসীরা বলছেন, তার পর থেকে কয়েক বছর এলাকায় দুষ্কৃতী কার্যকলাপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তারা। মঙ্গলবার রাতে বামুনগাছির কুলবেড়িয়ায় যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তাতে সৌরভ চৌধুরি হত্যাকাণ্ডের এক অভিযুক্ত জড়িত রয়েছে।
[আরও পড়ুন: মহিলাকে কটূক্তির জের, দত্তপুকুরে পিটিয়ে খুন যুবককে]
ঠিক কী হয়েছিল এদিন? চাঁদপাড়ার বাসিন্দা ওই যুবতী সম্প্রতি একটি কারখানায় চাকরি পেয়ে বামুনগাছির কুলবেড়িয়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। নির্যাতিতার অভিযোগ, “আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দরজায় এসে দু’জন ডাকতে শুরু করে। ধাক্কা মারে। আরও দু’জন জানলা দিয়ে ডাকছিল। কিছুক্ষণ পর দরজায় লাথি মারতে শুরু করে। জানলায় যে দু’জন ছিল তারা দরজায় চলে আসে। এরপর লাথি মেরে দরজা ভেঙে চারজনই ঘরে ঢুকে পড়ে। তিনজন আমায় আষ্টেপিষ্টে চেপে ধরে। নড়াচড়াও করতে পারছিলাম। চিৎকার করি। কিন্তু বাইরে সাউন্ড বক্সের আওয়াজে কিছু শোনা যাচ্ছিল না।”
যাঁর বাড়িতে ওই যুবতী ভাড়া ছিলেন সেই তরুণ দেবনাথ জানান, “মঙ্গলবার মধ্যরাতে চারজন ওই মেয়েটির ঘরের দরজায় লাথি মারছিল। পাশে খুব জোরে সাউন্ড বক্স বাজচ্ছিল। তার মধ্যেও আওয়াজ শুনতে পাই। বেরিয়ে জিজ্ঞাসা করতে আমার দিকে তেড়ে আসে। আমি ভয়ে ঘরে চলে যাই। পরে আবার ফিরে দরজা খুলতে বলে। আমাকেও মারধর করে।”
বুধবার সকালে এলাকাবাসীকে ঘটনার কথা জানান ওই যুবতী। দত্তপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পুলিশ এদিন সকালে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিরা এখনও অধরা। ওই এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত দাসের অভিযোগ, সন্ধে নামলেই এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। প্রকাশ্যে বসেই মদ, গাঁজা খাওয়া চলে। প্রায় দিনই স্থানীয়দের মারধর করে। এলাকার মানুষ প্রত্যেকেই আতঙ্কিত। তবে এদিনের ঘটনার পর স্থানীয়রা জানান, পুলিশকে এই দুষ্কৃতীরাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে বড়সড় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয়রা।
সব খবরের আপডেট পান সংবাদ প্রতিদিন-এ
Highlights